মসিউর রহমান
অভিযুক্তেরা যে একটি নির্দিষ্ট এলাকা দিয়ে যাবে, সেই খবর ছিল পুলিশের কাছে। অভিযুক্তের চেহারার বিবরণও জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো বৃহস্পতিবার বাঁশদ্রোণীর নারকেলবাগান ব্রিজের কাছে গাড়ি থামিয়ে চলছিল নাকা তল্লাশি। দুই যুবককে সাইকেলে আসতে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। থামতে বলায় তারা তো থামেইনি, উল্টে সাইকেল ঘুরিয়ে পালায়। এতে সন্দেহ বাড়ে পুলিশকর্মীদের। তাড়া করে দুই যুবককে ধরতেই দেখা যায়, এক অভিযুক্তের চেহারার সঙ্গে মিল রয়েছে সাইকেলে থাকা এক যুবকের। থানায় এনে জেরা করতেই খুনের কথা স্বীকার করে সে। একই সঙ্গে মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা রবিউল ইসলামকে কারা খুন করেছে, সে কথাও পুলিশকে জানিয়ে দেয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই যুবকের নাম শাহিন কাদের। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করা হয় রবিউলের কাকা মসিউর রহমান এবং আর এক অভিযুক্ত ফরমান শেখকে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, পেশায় রাজমিস্ত্রি মসিউর সম্পর্কে রবিউলের কাকা। শাহিন ও ফরমানও রাজমিস্ত্রি। ধৃতেরা মসিউরের সঙ্গে বাঁশদ্রোণী থানার বাদামতলা এলাকায় ভাড়া থাকত। পলাতক চতুর্থ অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, সম্পত্তি দখলের জন্য রবিউলের পরিবারের বিরুদ্ধে মসিউরের এক মেয়েকে ঝাড়ফুঁক ও তুকতাক করে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছিল। তার বদলা নিতেই ভাইপো রবিউলকে খুনের জন্য শাহিন, ফরমান এবং আর এক যুবককে ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া করেছিল মসিউর। চুক্তি মতো ওই চার জন গত ২ এপ্রিল কাজ দেওয়ার নাম করে রবিউলকে একটি পরিত্যক্ত কারখানায় ডেকে নিয়ে যায়। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জেরায় জানিয়েছে, মারধরের পরে মসিউর গলা টিপে খুন করে রবিউলকে। এর পরে পুকুরের ধারে দেহটি ফেলে পালিয়ে যায়। খুনের জন্য কয়েক হাজার টাকা অগ্রিমও দেওয়া হয়েছিল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত ৩ এপ্রিল বাঁশদ্রোণী থানার ব্রহ্মপুরের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় মুর্শিদাবাদের দাহারপুরের বাসিন্দা রবিউলের দেহ। ময়না-তদন্তের রিপোর্টে পুলিশ জানতে পারে, গলা টিপে ওই তরুণকে খুন করা হয়েছে। ঘটনার পরেই বাঁশদ্রোণী থানার ওসি প্রতাপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে রাজীব প্রামাণিক,তন্ময় সরকার, সাদেকা খাতুন এবং পিন্টু ঘোষকে নিয়ে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়।
কেন খুন করা হল ওই তরুণকে?
তদন্তকারীদের দাবি, মসিউর জানিয়েছে, দাহারপুরে পরিবারের সম্পত্তি নিয়ে তাদের সঙ্গে রবিউলদের ঝামেলা হত। এলাকায় সালিশি সভা বসিয়েও সমস্যা মেটেনি। মসিউর আরও দাবি করেছে, রবিউল তাকে বেশ কয়েক বার মারধর করেছেন। তার পরিবারকে শেষ করে দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন।
এক পুলিশকর্তা জানান, মসিউরের দুই মেয়ে। বছরখানেক আগে এক মেয়ে মারা যায়। সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল আর এক মেয়ে। পরে সে-ও মারা যায়।
মসিউরের অভিযোগ, দুই মেয়ের মৃত্যুর জন্য রবিউলের পরিবার দায়ী। তারাই ঝাড়ফুঁক করে তাদের মেরে ফেলেছে। একই সঙ্গে সম্পত্তিও দখল করতে চাইছে। এর জেরেই সে রবিউলকে খুন করেছে বলে দাবি করেছে তদন্তকারীদের কাছে।
এক অফিসার জানান, মসিউরের কথায় একাধিক অসঙ্গতি ছিল। কোনও ভাবেই খুনের কথা স্বীকার করছিল না সে। কিন্তু শাহিন ধরা পড়ার পরে আর কিছু লুকোতে পারেনি সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy