Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চিরকুট লিখে রেখে গঙ্গায় ‘ঝাঁপ’ বৃদ্ধার

ওই ফ্ল্যাটের ৮২ বছরের বৃদ্ধা মালকিন তাঁর আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার কারণ লিখে গিয়েছিলেন। চিরকুট পাওয়ার পরেই থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করেন ওই বৃদ্ধার পরিজনেরা। এর পরে মঙ্গলবার বিকেলে এলাকারই একটি ঘাটে ভাসতে দেখা যায় তাঁর মৃতদেহ। রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪৩
Share: Save:

বন্ধ ফ্ল্যাটের দরজায় সুতো দিয়ে ঝোলানো একটি চিরকুট।

সোমবার বিকেলে সেই চিরকুট পড়ে চমকে উঠেছিলেন প্রতিবেশীরা। কারণ, তাতে ওই ফ্ল্যাটের ৮২ বছরের বৃদ্ধা মালকিন তাঁর আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়ার কারণ লিখে গিয়েছিলেন। চিরকুট পাওয়ার পরেই থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করেন ওই বৃদ্ধার পরিজনেরা। এর পরে মঙ্গলবার বিকেলে এলাকারই একটি ঘাটে ভাসতে দেখা যায় তাঁর মৃতদেহ। রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে।

পুলিশ জানায়, আরতি চট্টোপাধ্যায় নামে ওই বৃদ্ধা বরাহনগরের দেশবন্ধু রোডের একটি ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। তাঁর তিন মেয়ের মধ্যে মেজো জনের আগেই মৃত্যু হয়েছে। বাকি দুই মেয়ের এক জন বালিগঞ্জে ও অপর জন কোন্নগরে থাকেন। মেয়েদের পাঠানো টাকাতেই দিন কাটত আরতিদেবীর। তবে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও সুগার-সহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসাও চলছিল। মাঝেমধ্যে মেয়েরাও এসে আরতিদেবীর দেখভাল করতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার বিকেলে প্রতিবেশীরা দেখেন, বৃদ্ধার ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ। কোল্যাপসিবল গেটে সুতো দিয়ে টাঙানো রয়েছে একটি ডায়েরির পাতা। তাতে লেখা, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমার পুরনো অসুখ, ভাল হবে না। সেই জন্য আমি চলে গেলাম। মেয়েরা খুব করেছে।’ নীচে বাংলা ও ইংরেজিতে নিজের নামও সই করেছেন আরতিদেবী। এখানেই শেষ নয়। ‘মেয়েরা খুব ভাল’ বলে লিখে তার নীচে বড় ও ছোট মেয়ের ফোন নম্বরও লিখে দিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। আর চিরকুটের একেবারে শেষে আরতিদেবী লিখেছেন, ‘গঙ্গায় চলে গেলাম।’

এই চিরকুটই ফ্ল্যাটের দরজায় ঝুলিয়ে যান আরতিদেবী। নিজস্ব চিত্র

চিরকুটের লেখা দেখেই প্রতিবেশীরা বরাহনগর থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে আরতিদেবীর মেয়েদের খবর দেয়। খবর পেয়ে অন্য আত্মীয়েরাও বরাহনগরে চলে আসেন। বৃদ্ধার আত্মীয় অরিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, সোমবার সন্ধ্যায় এলাকার বেশ কয়েকটি গঙ্গার ঘাটে খুঁজলেও তাঁরা আরতিদেবীর সন্ধান পাননি। শেষে ওই রাতেই বরাহনগর থানার পুলিশ প্রতিটি ঘাটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে। তখনই দেখা যায়, আলমবাজার ঘাটে গিয়ে বসে রয়েছেন বৃদ্ধা। ঘাট ফাঁকা হতেই তিনি গঙ্গায় ঝাঁপ দিচ্ছেন। রাতেই বিষয়টি জানানো হয় রিভার ট্র্যাফিক পুলিশকে।

সেই মতো এ দিন সকাল থেকে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ গঙ্গায় তল্লাশি শুরু করে। শেষে বিকেল পাঁচটা নাগাদ ওই ঘাটের কাছেই বরাহনগর জুটমিল ও সরকারি আবাসন সংলগ্ন একটি ছোট ঘাটের সামনে ভাসতে দেখা যায় বৃদ্ধার দেহ। অরিজিৎ বলেন, ‘‘উনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু তার জন্য এমন করবেন, কেউ কোনও দিন ভাবতেও পারিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Suicidal Death Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE