Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রেমিকের সঙ্গে শহরে আসছে অন্য মালালা

খোলসা করলেন আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত। তিনিই জানালেন, এই মালালা আসলে হায়দরাবাদ চিড়িয়াখানা থেকে আসা বছর তিনেকের একটি মাদী জাগুয়ার। তার সঙ্গে আসছে সাড়ে তিন বছরের পুরুষ জাগুয়ার আর্য।

জাগুয়ার দম্পতির নতুন খাঁচা। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

জাগুয়ার দম্পতির নতুন খাঁচা। শনিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০৭
Share: Save:

রাতেই রাজ্যের সীমানায় ঢুকে পড়বে সে। আজ, রবিবার সকালেই ‘বয়ফ্রেন্ড’-কে নিয়ে শহরে হাজির হবে মালালা।

নোবেল বিজয়িনী নয়, আদ্যোপান্ত এক চতুষ্পদী সে। তা সত্ত্বেও এ হেন ‘ভিআইপি’-কে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসতে তৈরি পুলিশের পাইলট ভ্যান, সরকারি কর্মীরা!

ব্যাপারটা কী?

খোলসা করলেন আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত। তিনিই জানালেন, এই মালালা আসলে হায়দরাবাদ চিড়িয়াখানা থেকে আসা বছর তিনেকের একটি মাদী জাগুয়ার। তার সঙ্গে আসছে সাড়ে তিন বছরের পুরুষ জাগুয়ার আর্য। আজ, রবিবার থেকে দু’জনের ঠিকানাই হবে আলিপুর চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, পাকিস্তানের সাহসিনী কিশোরী মালালা ইউসুফজাই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পরেই হায়দরাবাদে জন্ম হয় জাগুয়ারটির। নোবেল বিজয়িনীর নামেই নাম রাখা হয়েছিল তার।

শুধু মালালা-আর্য নয়, এ দিন সকাল থেকে আলিপুরের বাসিন্দাদের তালিকায় ঢুকে পড়বে এক ভারতীয় সিংহ দম্পতি এবং ছ’টি মাউস-ডিয়ার। এদের স্বাগত জানাতেই সাজো-সাজো রব চিড়িয়াখানার অন্দরে। শনিবার দুপুরে অধিকর্তার ঘরে গিয়ে দেখা গেল, বৈঠকে বসেছেন কর্তারা। এ রাজ্যের সীমানায় ঢোকার পরে মালালাদের পথ দেখিয়ে আনতে পাইলট কারের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। ঘন ঘন ফোন যাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়ার এসপি-দের কাছে। ইতিমধ্যেই খবর এল, ভুবনেশ্বর থেকে রাজ্যের দিকে রওনা দিয়েছে নতুন সদস্যেরা। তৎপরতা যেন আরও কয়েক ধাপ বেড়ে গেল।

জাগুয়ারের জন্য তৈরি হয়েছে নতুন ঘেরাটোপ। সিংহের খাঁচাতেও মেরামতি চলছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, তুঙ্গে উঠেছে কিপারদের হাঁক়ডাক। ‘‘খাঁচার দরজাগুলো ঠিকঠাক কাজ করছে তো? গড়বড় করলে বড়সাহেব কিন্তু আস্ত রাখবেন না,’’ জাগুয়ারের এনক্লোজারে দাঁড়িয়ে মিস্ত্রিদের বলছিলেন হে়ড কিপার সুভাষচন্দ্র দে। চার দশক ধরে আলিপুরে কম বাঘ-সিংহকে তো ‘মানুষ’ করেননি তিনি। এমনকী, হায়দরাবাদে সিংহ-জাগুয়ারদের পছন্দ করতেও তাঁকে পাঠিয়েছিলেন চিড়িয়াখানার কর্তারা। এত অভিজ্ঞতার পরেও টেনশন কমছে না। এই সব কাজের ফাঁকেই অধিকর্তার ঘর থেকে ডাক পড়ল সুভাষের। নির্দেশ মিলল, নতুন সদস্যদের আনতে সহকর্মী শিবপ্রসাদকে নিয়ে রাতেই ছুটতে হবে দাঁতনে।

পশুরাজের ঘরে চলছে শেষ লগ্নের প্রস্তুতি। যতই চারপেয়ে হোক না কেন, রাজা তো! তাই শোওয়ার জন্য শাল কাঠের খাট তৈরি হয়ে গিয়েছে। ঠুকেঠাকে দেখে নেওয়া হচ্ছে খাটের জোর। কিপাররা বলছিলেন, সিংহের মেজাজ বলে কথা! উঁচু জায়গা না হলে শোবেই না। সাফসুতরো করে ফেলা হয়েছে ঘরের মেঝে, রঙের পোঁচ লেগেছে গরাদে। নতুন করে ঢালাই করা হয়েছে গরাদের বাইরে ঘোরাফেরার জায়গার কংক্রিটের অংশও।

ওই ঘেরাটোপেই এত দিন অবশ্য চার ‘বৃদ্ধ-বৃদ্ধা’ থাকত।
সরিয়ে নেওয়া হয়েছে তাদের। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, দুর্গা-সহ চার সিংহ-সিংহীই অসুস্থ। এক জনের তো গলার ঘা সারছেই না। তাই আপাতত তারা চি়ড়িয়াখানার হাসপাতালেই থাকবে। সেখানেই টানা চিকিৎসা চলবে তাদের। চিড়িয়াখানার এক কর্মীর রসিক মন্তব্য, ‘‘নবদম্পতির মাঝে বুড়ো-বুড়িদের না থাকাই ভাল।’’

সন্ধ্যায় খবর এল, ক্রমশ রাজ্যের দিকে এগিয়ে আসছে মালালারা। আলিপুর থেকে গাড়ি নিয়ে রওনা দিয়েছেন সুভাষেরাও। প্রস্তুতিও সব সারা। তবু ঠিক স্বস্তি পাচ্ছেন না ‘বড়সাহেব’। এই এক বার একে ডাকছেন, এক বার তাঁকে বকুনি দিচ্ছেন, আবার টেনশন কাটাতে ফিক করে হেসেও ফেলছেন। শোনা গেল, টেনশনের চোটে বৃহস্পতিবার বিমানবন্দর থেকে ক্যাঙারুর গাড়িকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসা এক পুলিশকর্মীকেও বকুনি দিয়েছিলেন। টেনশনের কথা অস্বীকার করেননি ‘বড়সাহেব’ আশিসবাবু। বলেই ফেললেন, ‘‘রাতে ঠিক মতো ঘুম হচ্ছে না। আজও রাত জাগতে হবে।’’ চিড়িয়াখানার খবর, গভীর রাতে দাঁতন দিয়ে রাজ্যে ঢুকেছে পড়েছে মালালারা। চিড়িয়াখানার কর্মী-পুলিশ পথ দেখিয়ে নিয়ে আসছেন তাদের।

সেই খবর শুনে নাকি একটু হলেও হাঁপ ছেড়েছেন ‘বড়সাহেব’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE