বাস আসতে দেরি করায় সবে মাত্র রাস্তার পাশের যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে গিয়ে বসেছিলেন বছর ষাটের এক বৃদ্ধ। পরমুহূর্তেই বাস এসে দাঁড়ায়। কিন্তু তাঁর থেকে বেশ কিছুটা দূরে। আর তাতেই বিপত্তি! দ্রুত হেঁটে বাসে উঠতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে প্রায় পড়েই যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ। কোনও রকমে বাসে উঠলেও সকলের দিক থেকেই তে়ড়ে আসে একের পর এক প্রশ্ন, এত তাড়াহুড়ো কীসের? হাঁপাতে হাঁপাতে ওই বৃদ্ধের উত্তর, ‘‘অনেকটা ঘুরে আসতে হয় তো, বাস যদি
চলে যায়!’’
আসল বিপত্তিটা বাস স্ট্যান্ড ও যাত্রী প্রতীক্ষালয়ের দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণেই। শহরের বেশির ভাগ রাস্তার পাশে বাস স্ট্যান্ডের কাছেই থাকে যাত্রী প্রতীক্ষালয়। তা তৈরি হয় বিধায়ক বা সাংসদ তহবিল থেকে, কখনও বা পুরসভার তরফে। ওই সমস্ত প্রতীক্ষালয়ের প্রধান উদ্দেশ্যই হল যাতে সাধারণ মানুষ বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে নিরাপদে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকতে পারেন। কিন্তু হেস্টিংস থানার পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের ঠিক উল্টো দিকে এজেসি বসু রোডের প্রতীক্ষালয়ের চিত্রটা অনেকটাই আলাদা।
কী রকম? যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ফুটপাথের উপরে অনেক জায়গাতেই রেলিং বসিয়েছে কলকাতা পুরসভা। কলকাতা পুলিশের তরফে বাস স্ট্যান্ডও লেখা রয়েছে সেখানে। রাস্তার ওই অংশে দাঁড়িয়েই বাসে ওঠা-নামা করতেন যাত্রীরা। দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূলের সাংসদ সুব্রত বক্সী যাত্রী নিরাপত্তার জন্য সেখানেই যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ওই এলাকায় ঝাঁ চকচকে প্রতীক্ষালয়টি যেখানে তৈরি হয়েছে, তার সামনে দিয়েই গিয়েছে পুরসভার রেলিং। ফলে প্রতীক্ষারত যাত্রীদের প্রতীক্ষালয় থেকে বেশ কিছুটা হেঁটে এসে বাসে উঠতে হয়।
ওই এলাকার নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, সাংসদ তহবিল থেকে যাত্রী প্রতীক্ষালয় করা হলেও যাত্রীরা আদতে তা ব্যবহারই করতে পারেন না। আর ভিড় ঠেলে বাসে ওঠা ছেড়ে কেউই আর প্রতীক্ষালয়ে অপেক্ষা করতে চান না। সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন বয়স্করা। কারণ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে তাঁদের যেমন কষ্ট হয়, তেমনই প্রতীক্ষালয়ে প্রতীক্ষা করতে গেলে আর বাসে ওঠা হয় না। শুধু তাই নয়, নিত্যযাত্রীদের নিরাপত্তার খাতিরে নেওয়া উদ্যোগও ফলপ্রসূ হচ্ছে না।
কী কারণে পরিকল্পনা ছাড়াই ওই প্রতীক্ষালয় তৈরি করা হল?
কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, যাত্রী প্রতীক্ষালয় তৈরির টাকা আসে সাংসদ তহবিল থেকেই। নোডাল এজেন্সি হিসেবে তা তৈরি করে পুরসভা। ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের ওই অংশে যাত্রী প্রতীক্ষালয় করেছে পুরসভা। মূলত সাংসদ যে রাস্তায় প্রতীক্ষালয় তৈরির কথা বলেন, সেখানেই তা তৈরি করা হয়।
তাহলে রেলিং থাকা সত্ত্বেও সেখানে প্রতীক্ষালয় তৈরি হল কেন?
সাংসদ সুব্রত বক্সী বলেন, ‘‘যাত্রীদের কোনও অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।’’ কলকাতা পুরসভার এক অফিসার অবশ্য বলেন, ‘‘শেষ কাজ একটু বাকি, ইতিমধ্যেই পুরসভার রাস্তা বিভাগের সঙ্গে কথা হয়েছে। যেহেতু রেলিং ওই বিভাগ বসিয়েছে, তাই তাদের অনুমতি ছাড়া কিছু করা যাবে না। প্রতীক্ষালয়ের সামনের অংশের রেলিংয়ের কিছুটা অংশ কাটা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার অবশ্য জানান, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তবে যাত্রীদের ব্যবহারের জন্যই প্রতীক্ষালয়টি তৈরি হয়েছে। তা যেন নিত্যযাত্রীরা ব্যবহার করতে পারেন, সেই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘আমি শীঘ্রই ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রতীক্ষালয়ের সামনের রেলিংয়ের কিছুটা অংশ কেটে দেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy