Advertisement
১৯ মার্চ ২০২৪
Strike

‘কর্মপুজো’র উপচার হেলমেট এবং সাইকেল

বুধবার ধর্মঘটের দিন হাজরা মোড়ের কাছে হেলমেট পরে চায়ের দোকানে বসা এ হেন শ্যামল গুড়িয়া নিজেই যেন দ্রষ্টব্য।

সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছেন তীর্থ দত্ত। (ডানদিকে)হেলমেট পরে চা বিক্রি শ্যামল গুড়িয়ার। বুধবার, হাজরা মোড়ে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

সাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফিরছেন তীর্থ দত্ত। (ডানদিকে)হেলমেট পরে চা বিক্রি শ্যামল গুড়িয়ার। বুধবার, হাজরা মোড়ে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

আর্যভট্ট খান ও নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:০২
Share: Save:

ধর্মঘটের দিন নতুন নামকরণ হয়েছে তাঁর। ‘হেলমেট চা-ওয়ালা’! কায়দা করে আগুনে বসানো পাত্র ঘুরিয়ে উথলে ওঠা দুধ সামলে নিয়ে তিনি বললেন, ‘‘সকাল থেকে এই নামেই অনেকে ডাকছেন আমাকে। বোঝাতেই পারছি না যে, দোকানটা চালাতে হবে আর মাথাটাও বাঁচাতে হবে! তা-ই হেলমেটটা পরে নিয়েছি।’’

বুধবার ধর্মঘটের দিন হাজরা মোড়ের কাছে হেলমেট পরে চায়ের দোকানে বসা এ হেন শ্যামল গুড়িয়া নিজেই যেন দ্রষ্টব্য। অনেকে ভিড় করে তাঁর ছবিও তুলছিলেন। কেউ আবার বললেন, ‘‘এ বার অদম্য পুরস্কার পাবে।’’ তবে শুধু শ্যামলবাবুই নয়। ধর্মঘটের দিন কর্মোদ্যোগের নিদর্শন রেখেছেন হাওড়ার কালীবাবুর বাজার এলাকার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের তীর্থ দত্ত-ও। বাড়ি থেকে সাইকেল চালিয়েই এ দিন কলকাতার রেস কোর্সে নিজের অফিসে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। তীর্থবাবু বললেন, ‘‘গাড়ি চলুক আর না চলুক, এর পর থেকে ধর্মঘট হলে সাইকেলেই যাব। কর্মনাশা কোনও কিছুকেই যখন সমর্থন করি না, তখন বাড়িতেই বা বসে থাকব কেন?’’

ধর্মঘটকে সমর্থন না করারই কথা জানাচ্ছেন ‘হেলমেট চা-ওয়ালা’ও। এ দিন শ্যামলবাবু বলেন, প্রায় তিরিশ বছর ধরে হাজরা মোড়ে চায়ের দোকান চালাচ্ছেন তিনি। ধর্মঘট হলেই সেখানে গোলমাল হয়। অনেকে ফুটপাত লক্ষ্য করে ইটও ছোড়েন। ঝামেলা হলেই টিভি দেখে বাড়ির লোকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে ফোন করতে শুরু করেন। তবে ঝামেলার জন্য কখনওই তিনি দোকান বন্ধ রাখেননি বলে দাবি করলেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ দিনও সকাল সকাল চলে এসেছি। বাড়িতে ফোন করে বলে দিয়েছি, আজ চিন্তা করার দরকার নেই। মাথায় হেলমেট আছে। বাড়ির লোক তো শুনে হেসেই কুটোপাটি।’’

পরিকল্পনা করেই কি এই হেলমেট আনা হয়েছে? কথা থামিয়ে শ্যামলবাবু জানালেন, সকালে দোকান খোলার সময়ই সেটি পেয়েছেন তিনি। পাশের একটি গাছ দেখিয়ে বললেন, ‘‘সকাল সাতটা নাগাদ দোকান খোলার সময়ে দেখি, ওই গাছের নীচের বেদীতে হেলমেটটা রাখা। ধর্মঘটে ঝামেলা হতে পারে ভেবে তুলে পরে নিয়েছি।’’ তার পর থেকেই হাজরার ফুটপাতের বাকি দোকানদারেরা তাঁকে ডাকা শুরু করেছেন, ‘হেলমেট চা-ওয়ালা’ বলে।

শ্যামলবাবুর দোকানের পাশেই ফুটপাতে তালা-চাবির দোকান শঙ্কর হাইতের। তিনি বললেন, ‘‘শ্যামলদা ভাল কাজই করেছেন। সামান্য রোজগার করি। ধর্মঘট হলেও কাজ তো বন্ধ রাখা যায় না। তবে ঝামেলা হলে মাথাটা অন্তত বাঁচাতে হবে নাকি!’’ মোটরবাইক চালকের হেলমেট পরে থাকতে দেখা গেল শঙ্করবাবুর দোকানেও। শ্যামলবাবুর দেখে তাঁর ছেলের থেকে চেয়ে রেখেছেন তিনি। সেটি দেখিয়ে হেসে বললেন, ‘‘যদি দরকার হয় শ্যামলদার মতোই পরে নেব।’’

পরিস্থিতি বুঝেই পরিকল্পনা করেছিলেন তীর্থবাবু। প্রতিদিন হাওড়ার কালীবাবুর বাজার থেকে বাসে রামকৃষ্ণপুর ঘাটে আসেন তিনি। এ দিন বাস পাওয়া যাবে কি না, ভেবে সাইকেল নিয়ে বেরোন। রেস কোর্সের ক্লার্ক তীর্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘বাড়ি থেকে রামকৃষ্ণপুর ঘাট পর্যন্ত সাইকেলে এলাম। এর পরে ভুটভুটিতে সাইকেল চাপিয়ে বাবুঘাটে নামলাম। ফের সাইকেলে রেস কোর্স। সাইকেল চালাতে ভালই লাগে। এ দিন যে সেটা কাজে লেগে যাবে ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Strike Trade Union Helmet Cycle
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE