Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মাদক ধরতে ফোনে নজর পুলিশের

প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে নম্বরও। আগে ঠিক করে রাখা সময়ে সেই নম্বর থেকে ফোন আসা মানে তা ‘সিগন্যাল’!

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৫
Share: Save:

প্রতিদিন নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে একটি নম্বর থেকেই ফোন আসত তাঁর মোবাইলে। ওই ব্যক্তির প্রায় এক মাসের ‘কল ডিটেলস’ খতিয়ে দেখে গার্ডেনরিচের এক বাসিন্দাকে লালবাজারে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন তদন্তকারীরা। তাতেই গোপন তথ্য সামনে আসে। জানা যায়, যিনি নিয়মিত ফোন করতেন তিনি মাদকের গ্রাহক। যাঁকে ফোন করা হত তিনি কারবারি। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নম্বর থেকে ফোন এলে তবেই কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি পাওয়া যাবে, এই ছিল কথা!

পুলিশি জেরায় ওই কারবারি জানান, এ রকম বিভিন্ন নম্বরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। প্রত্যেককে আলাদা সময় বলা রয়েছে। প্রত্যেকের জন্য নির্দিষ্ট করা রয়েছে নম্বরও। আগে ঠিক করে রাখা সময়ে সেই নম্বর থেকে ফোন আসা মানে তা ‘সিগন্যাল’! এর অন্যথা মাদক নিয়ে একটি কথাও হবে না ফোনের দু’প্রান্তের ব্যক্তিদের মধ্যে।

লালবাজারের মাদক দমন শাখার এক আধিকারিক জানান, চলতি বছরে ভোটের আগে থেকে দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় মাদক কারবারের রমরমার খবর আসতে শুরু করে তাঁদের কাছে। মূলত ‘সিন্থেটিক ড্রাগ’ নিয়েই লেনদেন চলছে বলে জানা যায়। তবে তদন্তে নেমে তাঁদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘কাকে ধরব? কোথাও দেখি ঠেক নেই! কেউই প্রকাশ্যে মাদক লেনদেন করছেন না।’’ এর পরেই মাদক কারবারের পুরনো মাথাদের ‘ডেটাবেস’ তৈরি করে লালবাজার। ওই মাথারা বর্তমানে যে ফোন নম্বর ব্যবহার করেন, তা ধরেই তদন্ত শুরু হয়। নম্বরগুলি যে টেলিকমিউনিকেশন সংস্থার, তাদের থেকে ‘কল ডিটেলস’ চেয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রতিদিন ফোন যাওয়া কয়েকটি নম্বর নিয়ে তাঁরা খোঁজখবর শুরু করেন। এই পথেই সাফল্য পায় পুলিশ।

এর পর থেকেই গত দেড় মাসে ২০ জনেরও বেশি মাদক কারবারের মাথাকে গ্রেফতার করেছে লালবাজার। ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, মূলত ব্রাউন সুগার, হেরোইন, এলএসডি-র মতো মাদক বিক্রি করতেন তাঁরা। তাঁদের গ্রাহক বিভিন্ন স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা। পুলিশের জালে গত কয়েক দিনে বেশ কয়েক জন পড়ুয়াও ধরা পড়েন বলে লালবাজারের দাবি। তবে এনডিপিএসের (অন্তত ছ’মাস বিনা জামিনে হাজতবাস) কড়া আইনের কথা মাথায় রেখে তাঁদের গ্রেফতার না করে কাউন্সেলিংয়ের পথে হাঁটে পুলিশ। অভিভাবকদের ডেকে সচেতন করা হয়। কয়েক দিনের মধ্যেই ফুলবাগানের একটি সরকারি কলেজে সচেতনতার প্রচার করার কথা পুলিশের।

তবে এ ভাবে পুলিশের কল ডিটেলস খতিয়ে দেখা প্রসঙ্গে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিংয়ের ডিরেক্টর সন্দীপ সেনগুপ্ত অবশ্য মনে করেন, এ ক্ষেত্রে সমস্যা নেই। কারণ, মাদক কারবারে অভিযুক্তদের কল ডিটেলস খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ চাইলে ফোনে আড়ি পাততেও পারে। সে ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায়ের অনুমতির প্রয়োজন হয়।’’ কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘মাদক একটা প্রজন্মকে শেষ করে দিতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের তরফে এটি সদর্থক ভূমিকা। সে ভাবেই বিষয়টি দেখা ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Police Drugs Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE