Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হুমকি-কাণ্ডে মাথার খোঁজ পুলিশের

পুলিশ সূত্রের খবর, পেয়ারাবাগান এলাকায় রাজুর একটি দোকান ছিল। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে ওই দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তার পরেই পাশের পাড়ার ভরতের আশ্রয়ে চলে যায় সে। মঙ্গলবার ওই বস্তিতে রাজুর বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি।

বাড়ির সামনে। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির সামনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০২:৫৬
Share: Save:

তৃণমূল সাংসদ সুগত বসুর বাড়িতে সোমবার তোলাবাজদের হুমকির ঘটনায় পুলিশ বেলতলা রোডের বাসিন্দা ভরত জানা নামে এক জনকে খুঁজছে। রেলের চাকুরে ভরত ভবানীপুর এলাকায় তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। পুলিশের অভিযোগ, সুগতবাবুর বাড়িতে হানা দেওয়ার ঘটনায় ধৃতদের অন্যতম রাজু মণ্ডল ও আকাশ দলুইয়ের ওঠাবসা তার সঙ্গে। ভরত এলাকার এক তৃণমূল কাউন্সিলরের ঘনিষ্ঠ বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে, এই ঘটনায় ওই কাউন্সিলরকে জড়াচ্ছে না লালবাজার।

পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার যে ছয় যুবক তৃণমূল সাংসদের বাড়িতে তোলা আদায় করতে গিয়েছিল, তাদের নেতৃত্বে ছিল পেয়ারাবাগান বস্তির রাজু। বাকি পাঁচ জন তারই শাগরেদ। ওই রাজু আবার পাশের পাড়ার তৃণমূল নেতা ভরত জানার অনুগত বলে তদন্তে জেনেছে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, পেয়ারাবাগান এলাকায় রাজুর একটি দোকান ছিল। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমালে ওই দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তার পরেই পাশের পাড়ার ভরতের আশ্রয়ে চলে যায় সে। মঙ্গলবার ওই বস্তিতে রাজুর বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। আকাশের বাবা পেশায় ট্যাক্সিচালক সুকুমার দলুই দাবি করেন, গত দু’মাস ধরে বড় ছেলে আকাশের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ নেই। পাড়ার লোকজন জানিয়েছেন, আকাশ কোনও দিন পাড়ায় বা ক্লাবে খুব একটা মেলামেশা করত না। সোমবার আকাশের সঙ্গেই ধরা পড়ে বলরাম। সে আলিপুরের পরিবহণ দফতরে সামনে (মোটর ভেহিক্‌লস) দালালি করে। তাঁর স্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘উনি লাইসেন্স দেওয়ার কাজ করেন বলেই তো জানি।’’

ভরতের সঙ্গে মিলে রাজু, আকাশ ও তাদের বন্ধুরা ইট, বালি, সিমেন্ট সরবরাহ করে বলে জানিয়েছেন পড়শিদের কেউ কেউ। নির্মাণকাজের জন্য শ্রমিকও সরবরাহ করে তারা। এলাকার মানুষের অভিযোগ, কোথাও কোনও নির্মাণকাজ হলেই রাজুরা সেখানে পৌঁছে যেত। তাদের সরবরাহ করা শ্রমিকদেরই কাজে নিতে হত। পুলিশ জানায়, শরৎ বসু রোডের বসু বাড়িতে যে ভারা বাঁধা হয়েছিল, তা রাজুই প্রথমে দেখে আসে। তার পরে সঙ্গীদের নিয়ে সেখানে যায়।

ভরতের পাড়ায় গিয়ে জানা গেল, সোমবার রাত থেকে তাঁর খোঁজ নেই। মোবাইলও বন্ধ। ভরতের বাবা নারায়ণ জানা বলেন, ‘‘আমরা তৃণমূল করি ঠিকই। তবে ছেলে তোলাবাজির সঙ্গে যুক্ত নয়। ও রেলে কাজ করে, বাকি সময়টা পার্টির কাজ করে।’’

তারা যে অঞ্চলের বাসিন্দা, তা কলকাতা পুরসভার ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শুকদেব চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘যারা ধরা পড়েছে, তারা আমার ওয়ার্ডেরই বাসিন্দা। তবে ওরা আমাদের দলের মিটিং-মিছিলে থাকত কি না, বলতে পারব না।’’ ভরত যে তাঁদের দলের সক্রিয় কর্মী, সেটা অবশ্য অস্বীকার করেননি শুকদেববাবু।

স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে, ভরতের সঙ্গে ৭২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সন্দীপ বক্সীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। সন্দীপবাবুর মন্তব্য, ‘‘যাঁদের কথা বলা হচ্ছে, তাঁদের আমি চিনি না। কিছু জানি না। তা ছাড়া, আমি ওই এলাকার কাউন্সিলরও নই।’’

দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি ও মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার এ দিন বলেন, ‘‘এমন লোক তৃণমূলে থাকার যোগ্য নয়। ওদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া উচিত।’’

সোমবার ধৃতদের বিরুদ্ধে যে সব ধারায় পুলিশ অভিযোগ এনেছিল, সেগুলি সবই জামিনযোগ্য। এ দিন রাজুদের বিরুদ্ধে জোর করে বাড়িতে ঢুকে মারধর করার অভিযোগটিও যুক্ত হয়। সেটি জামিন-অযোগ্য ধারা। সেটির প্রয়োগ নিয়ে আদালতে রাজুদের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, সাংসদের বাড়িতে কঠোর নিরাপত্তা থাকার কথা। সেই নিরাপত্তা টপকে অভিযুক্তেরা কী ভাবে ঢুকে গেল? পুলিশ ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে চাইলেও আদালত তাদের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE