Advertisement
০২ মে ২০২৪

খোঁজ মিলল পালিয়ে যাওয়া পাঁচ পড়ুয়ার

প্রসঙ্গত, রবিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ উধাও হয়ে যায় কুঁদঘাট এলাকার পূর্ব পুঁটিয়ারির নতুনপল্লির বাসিন্দা বছর বারোর দুই ছাত্রী, অর্পিতা সরকার ও প্রিয়া কর্মকার।

দুশ্চিন্তা: তখনও মেলেনি সন্তানদের হদিস। থানায় উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েরা। মঙ্গলবার, কুঁদঘাটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

দুশ্চিন্তা: তখনও মেলেনি সন্তানদের হদিস। থানায় উদ্বিগ্ন বাবা-মায়েরা। মঙ্গলবার, কুঁদঘাটে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৪
Share: Save:

উদ্বেগ, উৎকণ্ঠার সঙ্গে বাড়ছিল ক্ষোভ। কারণ, ঘটনার দু’দিন পরেও পূর্ব পুঁটিয়ারির নতুনপল্লির পাঁচ জন পড়ুয়ার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু দিনের শেষে সেই উৎকণ্ঠার অনেকটাই অবসান হয়েছে। কারণ, নিখোঁজ পাঁচ জনের সন্ধান মিলেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নিখোঁজ হওয়া পাঁচ জনের মধ্যে প্রিন্স সাউ নামে যে কিশোর ছিল, বিহারে বখতিয়ারপুরে তার মামাবাড়িতে সকলে গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্রিন্স ছ’মাস আগেও বাড়ি থেকে পালিয়ে মামাবাড়ি চলে গিয়েছিল। মঙ্গলবার রাতেই কলকাতা পুলিশের একটি দল বিহারের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট এলাকার থানার সঙ্গে কলকাতা পুলিশের কথা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, রবিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ উধাও হয়ে যায় কুঁদঘাট এলাকার পূর্ব পুঁটিয়ারির নতুনপল্লির বাসিন্দা বছর বারোর দুই ছাত্রী, অর্পিতা সরকার ও প্রিয়া কর্মকার। একই সঙ্গে বছর পনেরোর তিন কিশোর, অভিজিৎ সরকার, প্রিন্স সাউ এবং রাজদীপ জানাও বেপাত্তা হয়ে যায়। এমনকী, সাত বছরের দেবরাজ ঘোষকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে থানায় অভিযোগ করেছিলেন পরিবারের লোকেরা। কিন্তু পরের দিন, সোমবার সকালে হঠাৎ রাজদীপ ঘরে ফিরে এলেও রাত পর্যন্ত অন্যেরা কেউ ফেরেনি।
মঙ্গলবার সকালেও যে কারণে নতুনপল্লির আবহাওয়া ছিল থমথমে। পুলিশের উপরে ভরসা না রেখে পরিবারের লোকেরাই নিজেদের মতো করে খোঁজ চালাচ্ছিলেন। কিন্তু তাতেও কোনও সুলুক-সন্ধান না মেলায় স্বাভাবিক ভাবেই কান্নাকাটি শুরু হয়ে গিয়েছিল। পাঁচ জনের মধ্যে যে ফিরে এসেছিল, সেই রাজদীপকে সঙ্গে করে নিয়ে পুলিশ তন্নতন্ন করে নানা জায়গায় খোঁজ করে। তার মধ্যেও একটা ব্যাপার সকলের আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছিল যে, এটা যদি হঠাৎ করে বাড়ি থেকে পালানো হয়, তা হলে নিজেদের সঙ্গে করে তারা টাকা-পয়সা নিয়ে যেত না। মেট্রো স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজেই স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল যে, সকলের পিঠেই ব্যাগ রয়েছে। ফলে তারা নিজেদের সঙ্গে জামাকাপড়ও নিয়ে গিয়েছিল। এ দিন অভিজিৎ-অর্পিতার মা পুতুল সরকার বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে বাড়ি থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পাচ্ছিলাম না। তখন মনে হয়েছিল সেটা চুরি হয়েছে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি, ওরা টাকাটা সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছে।’’ তবে তাঁরা এটা বুঝতে পারছিলেন না, এটা বাচ্চাদেরই বাড়ি থেকে পালানোর পরিকল্পনা নাকি এর পিছনে কোনও ‘পরিণত’ মাথা রয়েছে। ‘পরিণত’ মাথা থাকলে তার বিপদ অনেক বেশি বলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা।
কিন্তু এ দিন বিকেলে জানা যায়, সকলে মিলে প্রিন্সের মামাবাড়িতে উঠেছে। প্রিন্সের বাবা প্রদীপকুমার সাউ বলেন, ‘‘প্রিন্সের মামাবাড়ি থেকে ফোন করে জানায়, সকলে মিলে ওখানে গিয়েছে। ওরা একটা হোটেলে ছিল। তার পর সেখান থেকে মামাবাড়িতে গিয়েছে।’’ প্রদীপবাবু আরও জানান, পাঁচ জন মিলে প্রথমে বখতিয়ারপুরের একটা হোটেলে উঠেছিল। তার পরে মামাবাড়িতে যায় তারা। তখনই মামাবাড়ির লোকজন কলকাতায় ফোন করে খবর দেন। সাত বছরের দেবরাজ কী ভাবে বাড়ি থেকে পালাল, তা ভেবে কূলকিনারা করে উঠতে পাচ্ছিলেন না তার বাবা টুবলু ঘোষ। কিন্তু ছেলের খোঁজ পাওয়ায় আপাতত নিশ্চিন্ত তিনি। টুবলুবাবু বলেন, ‘‘বাচ্চা ছেলে কী ভাবে পালাল, সেটাই তো বুঝতে পারছিলাম না! তবে ওরা এক জায়গায় রয়েছে, তা জানতে পেরেছি। সেটাই শান্তি।’’ প্রিয়া কর্মকারের বাবা সুজিতবাবু পুলিশের উপর ভরসা না রেখে নিজের মতো করে খোঁজাখুঁজি শুরু করেছিলেন। মেয়েকে খুঁজতে বর্ধমানে চলে গিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী, জামাই। সুজিতবাবু বলেন, ‘‘এতগুলো ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও যদি কোনও খোঁজ না মেলে, তা হলে কী করে মাথা ঠাণ্ডা থাকে বলুন!’’ তবে ছেলেমেয়েরা বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না কারও বাবা-মা। পুতুল সরকার বলেন, ‘‘উৎকণ্ঠা কমেছে। কিন্তু যত ক্ষণ না বাড়িতে আসছে, তত ক্ষণ চিন্তা থাকছেই।’’
ভারপ্রাপ্ত গোয়েন্দাপ্রধান প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, ‘‘খবর পেয়েছি বখতিয়ারপুরেই সকলে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kundghat Kids কুঁদঘাট
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE