Advertisement
০৪ মে ২০২৪

রোল-তন্দুরির চুল্লিতে দূষণ কত, মাপছে পর্ষদ 

রাস্তার পাশের খাবারের দোকান থেকে যে বায়ুদূষণ হয়, এটা নতুন কোনও বিষয় নয় বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। গত শীতেই পরিবেশবিদদের আলোচনায় এ প্রসঙ্গ বারবার উঠে এসেছে।

রাস্তার এই ধরনের খাবারের দোকান থেকেই ছড়াচ্ছে দূষণ। বুধবার, নিউ মার্কেট এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

রাস্তার এই ধরনের খাবারের দোকান থেকেই ছড়াচ্ছে দূষণ। বুধবার, নিউ মার্কেট এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

রোলের দোকান থেকে তন্দুরির দোকান। কোথাও উনুন জ্বলছে। কোথাও স্টোভ। রাস্তার পাশে সারি দেওয়া দোকানে থরে-থরে খাবার সাজানো। দোকানের সেই রান্নার চুল্লি থেকে কত পরিমাণ ‘বিষ’ প্রতিনিয়ত বাতাসে এসে মিশছে, তাতে বায়ুদূষণের মাত্রা কোথায় পৌঁছচ্ছে, এ বার সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সমীক্ষার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে পর্ষদ সূত্রের খবর।

রাস্তার পাশের খাবারের দোকান থেকে যে বায়ুদূষণ হয়, এটা নতুন কোনও বিষয় নয় বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। গত শীতেই পরিবেশবিদদের আলোচনায় এ প্রসঙ্গ বারবার উঠে এসেছে। কিন্তু এর ফলে শহরের কোন এলাকায় কত মাত্রার বায়ুদূষণ হচ্ছে, কোন জায়গায় কম, কোন জায়গায় বেশি, তা নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য এখনও পর্যন্ত নেই। তাই এই সমীক্ষায় পুরো শহরকে বিভিন্ন জ়োনে ভাগ করে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পর্ষদের আধিকারিকদের একাংশ। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক সিনিয়র বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘রাস্তার পাশের দোকান থেকে প্রচুর পরিমাণে পিএম১০ ও পিএম২.৫ এসে বাতাসে মিশছে। ফলে ম্যাপিং করে পুরো কাজটা করতে হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ করার পরে তা বিশ্লেষণ করা হবে। তখনই রাস্তার পাশের দোকান থেকে কত পরিমাণে বায়ুদূষণ হয়, সে চিত্র পাওয়া যাবে।’’

প্রসঙ্গত, পরিবেশ মন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’-এ গত পাঁচ বছর ধরে বায়ুদূষকের মাত্রা লঙ্ঘনের জন্য দেশের যে ১০২টি শহরের নাম ‘নন অ্যাটেনমেন্ট সিটি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল কলকাতা। ধারাবাহিক ভাবে এ শহরের বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতি সূক্ষ্ম

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ধূলিকণার (পিএম২.৫) পরিমাণ বেশি। যে ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বর্তমানে ‘বিপজ্জনক’ জায়গায় পৌঁছেছে বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের মধ্যে সারা দেশেই দূষণ কমানোর লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ২০-৩০ শতাংশ। কিন্তু কলকাতার বায়ুদূষণের বর্তমানে যা পরিস্থিতি তাতে সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে দূষণের মাত্রা ৪৯-৫০ শতাংশ কমাতে হবে। যা একদমই সহজ নয় বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। সেক্ষেত্রেও এই সমীক্ষা একটা দিগনির্দেশ করতে পারে বলে আশা তাঁদের। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘নন অ্যাটেনমেন্ট সিটিগুলির ক্ষেত্রে ভাসমান ধূলিকণাকে নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়েছে। সমীক্ষার মাধ্যমে একটা নির্দিষ্ট হিসেব পেলে তখন নিয়ন্ত্রণ করাটা সুবিধাজনক হবে। সে ভাবেই পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’’

তবে সমীক্ষায় রাস্তার পাশের দোকান থেকে দূষণের পরিমাণ জানা গেলেও তারপরে পরিস্থিতি কতটা পাল্টাবে, তা নিয়ে সন্দিহান পরিবেশকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, বিষয়টি তো শুধুই দূষণের নয়। বিষয়টির সঙ্গে নির্দিষ্ট প্রশাসনিক নীতি গ্রহণেরও বিষয় রয়েছে। রাস্তার পাশে ও ভাবে উনুন বা স্টোভ জ্বেলে রান্না করা যাবে না, বা করতে গেলে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, সে ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে সুনির্দিষ্ট নীতি গ্রহণ করতে হবে। কারণ, কলকাতার মতো শহরে দোকানগুলির সঙ্গে অনেকের রুটিরুজি যেমন জড়িত, তেমনই খাওয়ার ব্যাপারে ওই দোকানগুলির উপরেই নির্ভরশীল সাধারণ মানুষের একাংশ। প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এটা শুধুই কেন্দ্র বা রাজ্যের বিষয় নয়। বায়ুদূষণে সামগ্রিক ভাবে একটি নীতি তৈরি করতে হবে, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে রাস্তার পাশের খাবারের দোকানের মতো বিষয়ও। তা হলেই অন্তত একটা ধাপ এগোনো যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE