জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে প্রতিবাদ-মিছিলে এন আর এসের অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
রোগ নতুন আকার নিয়েছে। কিন্তু দাওয়াই কি খুঁজে পেয়েছে স্বাস্থ্য প্রশাসন? রবিবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই প্রশ্নই ঘোরাফেরা করছে স্বাস্থ্যভবনের অন্দরে।
এন আর এসে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছিল। যার জেরে রোগীর পরিজনেরা কর্তব্যরত ইন্টার্নকে হেনস্থা করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরে জুনিয়র ডাক্তারেরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। অভিযোগ, আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগী জরুরি বিভাগে প়ড়ে থাকলেও জুনিয়র চিকিৎসকেরা পরিষেবা দিতে অস্বীকার করেন। ফলে কার্যত অচল হয়ে যায় হাসপাতাল। ইন্টার্নেরা অধ্যক্ষের ঘরের সামনে অবস্থানে বসেন। অভিযুক্তদের গ্রেফতারির দাবিতে সরব হলেও রোগী পরিষেবা বন্ধ নিয়ে কোনও কথা বলেননি তাঁরা। এমনকি, কর্মবিরতির প্রশ্নও এড়িয়ে গিয়ে বলেছেন, ‘‘কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি।’’
সোমবার অভিযুক্ত পাঁচ জন গ্রেফতার হওয়ার পরে বিকেলে নিরাপত্তার দাবিতে জুনিয়র চিকিৎসকেরা হাসপাতাল চত্বরে প্রতিবাদ-মিছিলের আয়োজন করেন। সেখানেও তাঁরা পরিষেবা বন্ধ হওয়ার অভিযোগ মিথ্যা বলে জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করলে কাজের পরিবেশ থাকবে না। এ দিন জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে ওই মিছিলে হাঁটেন অধ্যক্ষ শৈবাল মুখোপাধ্যায়ও।
স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, পুরনো রোগই নতুন রূপে ফিরেছে! জুনিয়র চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি ঘোষণা করলে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন। সর্বস্তরে সমালোচনাও হয়। পরিষেবা চালু রাখতে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হয়। জরুরি ভিত্তিতে অন্যান্য চিকিৎসক, এমনকি শিক্ষক-চিকিৎসকদেরও হাসপাতালে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু কর্মবিরতি ঘোষণা না করে কাজ বন্ধ রাখলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয় না। অথচ, রোগীদের ভোগান্তি চরমে ওঠে।
রবিবার রাত পর্যন্ত বৈঠক করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হলেও পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ মানতে নারাজ স্বাস্থ্য দফতর। সোমবার স্বাস্থ্য ভবনের এক শীর্ষ কর্তা জানান, ঘটনার দিন হাসপাতালের পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তা রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কাছে পাঠিয়েছেন। পাঠানো রিপোর্টে জানানো হয়েছে, অধ্যক্ষের ঘরের সামনে কয়েক জন জুনিয়র চিকিৎসক যখন অবস্থানে বসেছিলেন, তখন বাকিরা দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন।
পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলেই জুনিয়র চিকিৎসকেরা পরিষেবা বন্ধ করে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। আরও অভিযোগ, শাস্তির ভয়েই কর্মবিরতি ঘোষণা না করে কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন তাঁরা। যার জেরে ভোগান্তি বাড়ছে রোগীদের। এই ধরনের অভিযোগ কি রোগীর প্রতি জুনিয়র চিকিৎসকদের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে না?
এন আর এসের জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, রোগীদের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁদের রয়েছে। তাই মহিলা ইন্টার্নের শারীরিক হেনস্থা হওয়ার পরেও অন্য ইন্টার্নরা কাজ চালিয়ে গিয়েছেন। পরিষেবা বন্ধের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। সহকর্মীর হেনস্থার প্রতিবাদ করার অধিকার সকলেরই রয়েছে। নিরাপদ কর্মক্ষেত্রের দাবিতেই তাঁদের লড়াই। রোগীর বিরুদ্ধে কোনও লড়াই চলছে না। তাই রোগী কিংবা পরিজনদের সঙ্গে কোনও খারাপ ব্যবহার করা হয়নি। অবস্থান-বিক্ষোভ চলেছে অধ্যক্ষ, অর্থাৎ কর্তৃপক্ষের সামনে। জুনিয়র চিকিৎসকদের সংগঠন ‘জুনিয়র ডক্টর্স ইউনিটি’র তরফে চিকিৎসক কবিউল হক বলেন, ‘‘রবিবারের ঘটনায় জুনিয়র চিকিৎসকদের দায়িত্বহীনতা প্রকাশ পায় না। বরং প্রকাশ পায় এ রাজ্যের ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। একের পর এক হাসপাতাল ঘুরে রোগীরা আসছেন। ফলে বিপদ আরও বাড়ছে। প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো থাকছে না। ফলে, যা ঘটার তা-ই ঘটছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের উপরে দায় চাপিয়ে আর কত দিন সরকার পিঠ বাঁচাবে!’’
পুরো ঘটনা প্রসঙ্গে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র অবশ্য এ দিন বলেন, ‘‘প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয়। হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তবে, রবিবার রোগী-পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy