রুদ্ধ: রাস্তা আটকে মণ্ডপ। ঢাকুরিয়া সেতুর পাশে। নিজস্ব চিত্র
দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার পরেই কালীপুজোর মণ্ডপ তৈরির জন্য বাঁশ ফেলা শুরু হয়েছিল রাস্তায়। বিরক্ত শহরবাসীর মতে, সেই বাঁশই কালীপুজো পর্যন্ত দুর্ভোগের কারণ হয়ে রইল পথচারী ও গাড়িচালকদের জন্য। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ, প্রায় সর্বত্রই রাস্তা ও ফুটপাথ জুড়ে কালীপুজোর মণ্ডপ তৈরি হওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে। ভুক্তভোগীদের বক্তব্য, এ নিয়ে থানায় গেলেও অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি। বলা হয়েছে, ‘দিন দু’য়েকের তো ব্যাপার। একটু মানিয়ে নিন। বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করুন।’
তবে ভোগান্তি যে মাত্র দিন দু’য়েকের নয়, তা মেনে নিচ্ছেন কালীপুজোর কর্তারাও। মণ্ডপ বাঁধা থেকে বিসর্জন পর্যন্ত ধরলে প্রায় এক মাসের ধাক্কা।
শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আমহার্স্ট স্ট্রিটের উপর দিয়ে যেতে হলে অন্তত তিন বার হোঁচট খেতে হবে। অভিযোগ, দুর্গাপুজোর পর থেকেই রাস্তা জুড়ে শুরু হয়েছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। ওই রাস্তা দিয়ে নিয়মিত গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করেন যাঁরা, তাঁদেরই এক জন জানালেন, ধর্মতলায় যেতে হলে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের যানজট এড়াতে অনেক সময়েই তিনি আমহার্স্ট স্ট্রিট ব্যবহার করেন। এখন ওই রাস্তাতেও যানজট। শুধু মণ্ডপ নয়, রাস্তার উপরে বসে গিয়েছে নাগরদোলাও। আমহার্স্ট স্ট্রিটে যে পুজোগুলি হয়, তার মধ্যে একটি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের পুজো বলে পরিচিত। সোমেনবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা রাস্তার বেশি অংশ আটকাই না। পুজোর সময়ে আমাদের ক্লাবের ছেলেরাও পুলিশের সঙ্গে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করে।’’
প্রায় একই অবস্থা সুকিয়া স্ট্রিট, ক্রিক রো এবং বেলেঘাটা মেন রোডের। বেলেঘাটা মেন রোডে আবার দেখা গেল, পুজোমণ্ডপের পাশেই বাঁধা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সেখানে সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উল্টোডাঙা মেন রোডেও মুচিবাজারের কাছে এক জায়গায় দেখা গেল, কালীপুজোর আগেই শুরু হয়ে গিয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। তার জেরে রাস্তায় তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। সেই প্রভাব গিয়ে পড়েছে অটোর ভাড়ায়। সুযোগ বুঝে শোভাবাজার-উল্টোডাঙা রুটের অটোচালকেরা ভাড়া বাড়িয়ে ২৫ টাকা করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
এসএন ব্যানার্জি রোডের জানবাজার এলাকায় একটি নামী পুজোর মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল দুর্গাপুজোরও মাস দুই আগে থেকে। ফলে ওই রাস্তায় ভোগান্তি তখন থেকেই শুরু। সেখান দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করা বাসযাত্রীরা জানালেন, যানজটের জন্য এখন জানবাজারেই তাঁরা বাস থেকে নেমে যাচ্ছেন। তার পরে হেঁটে ধর্মতলার অফিসে পৌঁছচ্ছেন। যদিও জানবাজারের ওই পুজোকর্তা বলেন, ‘‘এ বছর পুজোর সুবর্ণ জয়ন্তী বলে একটু আগে থেকে মণ্ডপ তৈরি করা শুরু হয়েছে। আমরা অনেকটা রাস্তা ছেড়েই মণ্ডপ গড়েছি।’’
দমদম রোডে যানজট এমনিতেই নিত্যদিনের সমস্যা। তার উপরে রাস্তা জুড়ে মণ্ডপ তৈরি হওয়ায় সেই যন্ত্রণা আরও তীব্র হয়েছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তাঁদের অনেকেই জানালেন, যানজটের কারণে ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটেই মেট্রো স্টেশনে যাতায়াত করছেন তাঁরা।
একই অবস্থা দক্ষিণের রাস্তাগুলিতেও। মনোহরপুকুর রোড থেকে শুরু করে টালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া— সর্বত্রই দেখা গিয়েছে রাস্তা জুড়ে কালীপুজোর মণ্ডপ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যান চলাচলের। ঢাকুরিয়া সেতুর পাশে একটি নামী পুজো এমন ভাবে মণ্ডপ বেঁধেছে যে, গাড়ি ঘোরানোর রাস্তাও খুব সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, এ নিয়ে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? ব্যারাকপুর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পুজোর সঙ্গে ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই পুরনো পুজোগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা কঠিন। তবে ওদের বলেছি, যতটা সম্ভব রাস্তা ছেড়ে পুজো করতে। রাস্তার উপরে নতুন কোনও পুজোর অনুমতি দেওয়া হয়নি।’’
ব্যারাকপুর কমিশনারেট এ নিয়ে কথা বললেও কলকাতা পুলিশের কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকারকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জবাব দেননি মেসেজের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy