ধস নামার পরে সারানো হচ্ছে রাস্তা। মঙ্গলবার, ই এম বাইপাসে। —নিজস্ব চিত্র
সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ ই এম বাইপাসে আচমকা বসে গেল রাস্তা। মঙ্গলবার রুবি মোড়ের কাছে টেগোর পার্ক এলাকার সল্টলেকমুখী লেনে এই ধসের জেরে দীর্ঘক্ষণের জন্য থমকে গেল যানচলাচল। বাসে-গাড়িতে-অটোয় আটকে ব্যস্ত সময়ে তুমুল ভোগান্তির শিকার হলেন মানুষ।
পুলিশ জানায়, শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে গড়িয়ামুখী লেন দিয়েই দু’দিকের যানবাহন চলাচল করানো হয়। ততক্ষণে স্কুল-কলেজ-অফিসের ব্যস্ত সময়ে প্রায় দেড় দু’ঘণ্টা পথেই আটকে থেকেছেন যাত্রীরা। গাড়ির চাকা নড়েনি। যা-ও বা এগিয়েছে, তা-ও শম্বুক গতিতে। এক লেন দিয়ে দু’দিকের গাড়ি যাতায়াতের ফলে এবং যানজট এড়াতে বিভিন্ন গাড়ি আশপাশের রাস্তা ধরায় অলিগলিতেও তুমুল যানজট হয়। প্রায় চার-পাঁচ ঘণ্টা এমন পরিস্থিতি ছিল।
এমনিতেই ভেঙেচুরে কাহিল দশা বাইপাসের। রুবি থেকে চিংড়িহাটা, পাটুলি থেকে গড়িয়া খন্দপথে নিত্য যন্ত্রণা শহরের। এ দিনের এই ধসের জন্য অবশ্য বাইপাসে মেট্রো রেলের কাজকেই দায়ী করেছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর অভিযোগ, মেট্রো রেলের কাজের জন্য ঘিরে রাখা অংশে জল জমে রাস্তার নীচে চলে যাচ্ছে। ফলে ফাটল ধরে যাচ্ছে রাস্তায়।
এ দিন বিকেলে পুরমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মেট্রোর ওই প্রকল্পের চিফ ম্যানেজার এবং ইঞ্জিনিয়ারেরা। মহাকরণ সূত্রের খবর, বৈঠকে ঠিক হয়েছে, শুক্রবার মেট্রো ও কেএমডিএ-র ইঞ্জিনিয়াররা যৌথ ভাবে বাইপাস সংলগ্ন ওই এলাকায় রাস্তার হাল খতিয়ে দেখবেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার পরে। পুরমন্ত্রী জানান, রাস্তার যেখানে ধস নেমেছে তা কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেবেন মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই।
পুরমন্ত্রী বলেন, “মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বাইপাসের রাস্তায় তাদের কাজ শেষ হতে আরও দেড় থেকে দু’বছর সময় লাগবে। ওই সময়ের জন্য তাঁরা যদি নিয়মিত ভাবে প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন না করে তা হলে বাইপাসের রাস্তা বারবার ভাঙবে।”
তবে মন্ত্রীর দাবি, মেট্রোকর্তারা আশ্বাস দিয়েছেন ওই যৌথ সমীক্ষার আগেই তাঁরা প্রয়োজনীয় বেশ কিছু জরুরি ব্যবস্থা নেবেন। মেট্রোর তরফে বলা হয়েছে, মন্ত্রী তাঁদের বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রকল্পের কাজ করছে রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড (আরভিএনএল)। তাঁদের তরফে জানানো হয়, তাঁদের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। তবু মন্ত্রী বলায় শুক্রবার তাঁর যৌথ সমীক্ষায় যাবেন। তার পরে ঠিক হবে, কারা ব্যবস্থা নেবেন। আরভিএনএল কর্তাদের অবশ্য দাবি, রাস্তা তৈরি করতে গিয়েই ধস নেমেছে বাইপাসে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, পুরমন্ত্রীর যুক্তি মেনে মেট্রোকর্তারা বলেছেন, প্রকল্পের কাজের জন্য যে সব জায়গায় অস্থায়ী বেড়া দেওয়া হয়েছে, সেই সব জায়গায় জল জমা আটকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে সেই সব বেড়া ভেঙে দেওয়া হবে। তা ছাড়া, ভারী বৃষ্টি হলে জল বার করে দেওয়ার জন্য বসানো হবে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প।
দ্বিতীয় যে ব্যবস্থার কথা মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তা হল রাস্তার উপরে তৈরি করা স্তম্ভগুলির সংলগ্ন এলাকাকে ‘সেমি সলিড’ করে দেওয়া হবে। এখন ওই স্তম্ভগুলির গোড়ার মাটি আলগা হয়ে থাকায় সহজেই জল চলে যাচ্ছে মাটির তলায়। তা ছাড়া, মেট্রোর কাজের জন্য লোহার দাঁত লাগানো যে গাড়িগুলি ব্যবহার করা হয়, সেগুলি অনেক সময়ে রাস্তা নষ্ট করে। তাই ঠিক হয়েছে, রাস্তায় ওই গাড়িগুলি চলার সময়ে যখন ওই ধাতব দাঁতের প্রয়োজন নেই, তখন সেগুলিকে রবারের প্যাড দিয়ে মুড়ে দিয়ে কাজের যায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy