Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
School Reopening

স্কুল খুললেও সংশয় থাকছে স্বাস্থ্য-বিধি রক্ষা নিয়ে

স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নিরিখে বেসরকারি স্কুলগুলির অবস্থা কিছুটা ভাল হলেও সরকারি, সরকার-পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের অবস্থা খুবই খারাপ।

—ছবি সংগৃহীত

—ছবি সংগৃহীত

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৩৭
Share: Save:

অতিমারির কারণে টানা দশ মাস বন্ধ থাকার স্কুল খোলার দাবি তুলেছে অভিভাবক ও শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন। তাদের দাবি, স্বাস্থ্য-বিধি মেনে পড়ুয়াদের একাংশকে এই মাস থেকে স্কুলে যেতে দেওয়া হোক। আবার স্কুল খোলার পরে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষায় যথেষ্ট পরিকাঠামো থাকবে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে।

অভিযোগ, স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নিরিখে বেসরকারি স্কুলগুলির অবস্থা কিছুটা ভাল হলেও সরকারি, সরকার-পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের অবস্থা খুবই খারাপ। অভিযোগ, বেশির ভাগ স্কুলে পর্যাপ্ত সাফাইকর্মীই নেই। ফলে এই পরিস্থিতিতে স্কুল খুললে স্কুল ভবনের নিয়মিত সাফাই কাজ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকদের একটি বড় অংশ।

শিক্ষকদের একাংশ জানিয়েছেন, সরকার পোষিত বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বেশির ভাগ স্কুলেই স্থায়ী সাফাইকর্মী নেই। অনেক অভিভাবকের অভিযোগ, শৌচালয়ে অনেক সময়ে হাত ধোয়ার সাবান পর্যন্ত থাকে না।

আরও পড়ুন: প্রিয়াঙ্কা ঘুঁটি মাত্র? টলি-প্রভাবশালীর হাত জুনিয়র খুনে? খুঁজছে সিবিআই

আরও পড়ুন: শহরে ‘বিবেকের ডাকে’ ১২ জানুয়ারি শুভেন্দু-দিলীপ, মুকুল-কৈলাস

হেয়ার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রণবকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁদের স্কুলে মাত্র এক জন সাফাইকর্মী। প্রণববাবু বলেন, ‘‘অতিমারির পরিস্থিতিতে স্কুল খুললে কী ভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল চলবে, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। এমনকি, স্কুল খোলার নির্দেশ পেলে কী ভাবে দ্রুত গোটা স্কুল সাফাই হবে, সে নিয়েও চিন্তাভাবনা করছি।’’

সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া সিংহ মহাপাত্র জানান, তাঁদের স্কুলে তিনটি সাফাইকর্মীর পদ রয়েছে। কিন্তু আছেন মাত্র এক জন। তিনি আবার ফেব্রুয়ারিতেই অবসর নেবেন। পাপিয়াদেবী বলেন, ‘‘সামনের মার্চ মাস থেকে কোনও সাফাইকর্মী থাকবেন না। এ দিকে কোভিড পরিস্থিতির পরে স্কুলের শৌচাগার আরও বেশি পরিচ্ছন্ন থাকার কথা। মেয়েদের স্কুলের শৌচাগার তো আরও পরিষ্কার রাখা জরুরি।’’

কোনও স্থায়ী সাফাইকর্মী নেই। এক জনকে অস্থায়ী ভাবে রেখে স্কুল পরিষ্কারের কাজ চলছে যাদবপুর বিদ্যাপীঠে। প্রধান শিক্ষক পরিমল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতির পরে প্রতিটি স্কুলে স্থায়ী সাফাইকর্মী থাকা প্রয়োজন।’’ বেলতলা গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অজন্তা মুখোপাধ্যায় জানান, তাঁদের স্কুলে এক জন অস্থায়ী সাফাইকর্মী রয়েছেন। কিন্তু স্থায়ী কর্মী ছাড়া স্কুল পরিষ্কার রাখা কঠিন।

মধ্যমগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আশুতোষ ঘোষ জানান, সেখানেও স্থায়ী সাফাইকর্মী নেই। অস্থায়ী ভাবে তিন জনকে দিয়ে কাজ চলানো হয়।

স্কুলে সাফাইকর্মী নিয়োগ করা নিয়ে সরব বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন। মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা অনিমেষ হালদার বলেন, “আমরা শিক্ষা দফতরে বার বার চিঠি লিখে স্কুলে স্থায়ী সাফাইকর্মী নিয়োগের আবেদন জানিয়েছি। নিজেদের টাকায় সাফাইকর্মী নিয়োগের সামর্থ্য নেই সব স্কুলের।” শিক্ষকদের মতে, স্কুল খোলার পরে মিড-ডে মিল চালু হলে সেখান থেকে যাতে সংক্রমণ না-ছড়ায়, সেটা দেখা খুব জরুরি। অনেক সময়ে স্কুলে সাবান না থাকায় শুধু জল দিয়ে কোনও রকমে মিড ডে মিলের থালা ধোয়া হয়।

স্কুলপড়ুয়াদের মায়েদের একটি সংগঠন রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ওই সংগঠনের সদস্যা মনিকা অরোরা বলেন, “স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি ঠিক মতো পালন করার পরিকাঠামো আছে কি না, তা দেখে তবেই ফের পঠনপাঠন চালু করা দরকার।” স্কুলে স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিয়ে কর্মরত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আধিকারিক নম্রতা দত্ত বলেন, “আমাদের সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শহর এলাকায় ৩০টি স্কুলের মধ্যে ১৫টিতে শৌচালয়ের ঠিকঠাক পরিকাঠামোই নেই। নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থাটুকুও।”

শিক্ষা দফতরের এক কর্তা অবশ্য জানান, স্কুল সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করে তবেই ফের পঠনপাঠন শুরু হবে। তাঁর দাবি, “স্কুল বন্ধ থাকলেও মিড-ডে মিলের চাল, ডাল নিতে অভিভাবকেরা স্কুলে আসছেন। সেই সময়ে সাবানও বিতরণ করা হয়। হাত ধোয়ার ঠিকঠাক পরিকাঠামো আছে কি না, তা খতিয়ে দেখে তবেই স্কুল খোলা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Reopening Health protoocls coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE