শীতের রাতে পাড়ায় আগুন পোহাচ্ছিলেন কয়েক জন যুবক। হঠাৎ তাঁরা দেখলেন, গুলি ছুড়তে ছুড়তে ছুটে এল কয়েক জন দুষ্কৃতী। প্রাণে বাঁচতে দৌড়লেন ওই যুবকেরা। কিছু ক্ষণ পরে তাঁরা দেখতে পেলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছেন পা়ড়ারই বাসিন্দা এক যুবক। মঙ্গলবার এন্টালির পটারি রোডে এই ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ইন্দ্রজিৎ রায় ওরফে ছোটু নামে ওই যুবক নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনায় সুখেন দাস ও তাপস নস্কর নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাবু নামে আরও এক দুষ্কৃতীকে খঁুজছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, সে গুলি চালিয়েছিল। ধৃতেরা নানা দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত বলে পুলিশের দাবি। এই ঘটনায় অভিযুক্ত বাকিদেরও খোঁজ চলছে। হামলাকারী পাঁচ জনের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা এবং অস্ত্র আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এন্টালির ওই এলাকায় এমন ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও সাতসকালে বা সন্ধ্যায় গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। তার পরেও কেন পুলিশ দুষ্কৃতী দমনে সক্রিয় হচ্ছে না, সেই
প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। শুধু তা-ই নয়, লালবাজারের কর্তারা বারবার শহরে অস্ত্র
বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু থানা এবং লালবাজারের গুন্ডা দমন শাখা সেই নির্দেশ পালনে কতটা সক্ষম হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে এন্টালির এই ঘটনা।
পুলিশেরই একাংশ বলছে, শহরে দুষ্কৃতীদের হাতে যে প্রচুর বেআইনি অস্ত্র রয়েছে, তা আরও এক বার প্রমাণ হয়ে গেল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, মঙ্গলবার রাতে এন্টালিতে অন্তত ১০ রাউন্ড এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়েছে দুষ্কৃতীরা। এ দিন সকালেও এলাকা থেকে গুলির খোল পেয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তিন রাউন্ড গুলি চলেছে।
ঠিক কী ঘটেছিল সেখানে?
স্থানীয় বাসিন্দা এবং প্রত্যক্ষদর্শী বাপ্পা দে জানান, ছোটু ওই এলাকারই পুরনো বাসিন্দা। এখন অবশ্য ধাপার কাছে থাকেন। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন তিনি। প্রতিদিনই অফিস থেকে ফিরে পুরনো পাড়ায় আড্ডা মারতে আসতেন তিনি। ছোটু এলাকায় নিরীহ যুবক হিসেবেই পরিচিত বলে বাপ্পার দাবি। তিনি বলেন, ওই এলাকার বস্তির ভিতর দিয়ে ধাপা বা ট্যাংরার দিকে চলে যাওয়া যায়। সেই গলি দিয়েই এসেছিল দুষ্কৃতীরা। গুলি ছুড়তে ছুড়তে কনভেন্ট রোডের দিকে চলে গিয়েছিল।
এলাকাবাসীর দাবি, ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের একাধিক দল রয়েছে। তাদের মধ্যে নির্মাণ ব্যবসা এবং তোলাবাজি নিয়ে গোলমাল লেগেই থাকে। স্থানীয় থানাগুলিও তাদের বাগে আনতে পারছে না। মঙ্গলবার রাতেও সম্ভবত তেমনই কোনও গোলমালের জেরে গুলি চলেছিল। এর মধ্যে ছোটু বা স্থানীয় যুবকদের সঙ্গে কারও কোনও ঝামেলা হয়েছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। প্রয়োজনে ছোটুর সঙ্গেও কথা বলা হবে।
পুলিশ জানিয়েছে, পটারি রোড, মালিপাড়া-সহ এন্টালির ওই এলাকায় কেলো ও নেটো নামে দুই দুষ্কৃতী রয়েছে। তাদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা বেধে যায়। এলাকার তোলাবাজির রাশ কার হাতে থাকবে, তা নিয়েই মূলত দুই গোষ্ঠীর বিবাদ। তদন্তকারীদের দাবি, জখম ছোটু কেলোর দলের লোক। এ ছাড়াও ওই দলে রয়েছে লোলো এবং কালার মতো এলাকার পুরনো দুষ্কতীরা। অন্য দিকে, নেটোর দলে রয়েছে তাপস
ও কিষাণের মতো দুষ্কৃতী, যাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে পুলিশের খাতায়।
লাগাতার দুষ্ক়ৃতী-তাণ্ডবে আতঙ্কিত ওই এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, এমন ঘটনা যখন বারবার ঘটছে, তখন বস্তির ভিতরের সরু গলিপথগুলি বন্ধ করে দেওয়া হোক, যাতে দুষ্কৃতীরা সেখান দিয়ে আসতে বা পালাতে না পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy