Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আহত ‘অতিথিকে’ শুশ্রূষা ভাইবোনের

দমদম স্টেশনের কাছে গায়ে গায়ে লেগে থাকা বাড়ির মধ্যে গৌতম সরকারের চার কাঠা জমির খানিকটা জুড়ে আম-জাম-কাঁঠালের বাগান। রবিবার সকালে সেখানেই হাজির অচেনা অতিথি। আহত, উড়তে পারছে না। ইঁট-কাঠ-জঙ্গলের মাঝে গোটাকয়েক গাছপালা দেখতে পেয়ে সেখানে এসেই নেমেছে।

উদ্ধার হওয়া সেই জলমুরগি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়া সেই জলমুরগি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

ঘুম ঘুম চোখে ভাইবোন গিয়েছিল বাগানে। সেখানে জামগাছের তলায় পড়েছিল অচেনা এক পাখি।

অচেনা কারণ, এমন পাখি আগে দেখেনি ইন্দ্রাণী-সর্বজিৎ। হলুদ ও লাল মেশানো ঠোঁট। চেহারাটা পায়রার থেকে খানিকটা বড়। গায়ের রং ধূসর। দমদম স্টেশনের কাছে গায়ে গায়ে লেগে থাকা বাড়ির মধ্যে গৌতম সরকারের চার কাঠা জমির খানিকটা জুড়ে আম-জাম-কাঁঠালের বাগান। রবিবার সকালে সেখানেই হাজির অচেনা অতিথি। আহত, উড়তে পারছে না। ইঁট-কাঠ-জঙ্গলের মাঝে গোটাকয়েক গাছপালা দেখতে পেয়ে সেখানে এসেই নেমেছে।

রবিবার সকালটা এই আহত অতিথিকে নিয়েই কেটে গিয়েছে সরকার পরিবারের। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘দেখেই বোঝা যাচ্ছিল পাখিটার বাঁ পা ভেঙে গিয়েছে।’’ ওকে তুলে ঘরের ভিতরে এনে শুরু হয় শুশ্রূষা। কোনওরকমে ওআরএস-জল খাইয়ে প্রথমে কিছুটা চাঙ্গা করার চেষ্টা করা হয়। ঠিক কী ধরনের পাখি এটি তা জানতে উচ্চ মাধ্যমিক পাঠরতা ইন্দ্রাণী শরণাপন্ন হয় গুগলের। ছবি দেখে মিলিয়ে দেখা যায় একে ‘কমন মুরহেন’ বলে। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘আমরা তো প্রথমে
ভেবেছিলাম, বিদেশ থেকে আসা কোনও পরিযায়ী পাখি। কমন মুরহেনও দেখলাম উত্তর ও মধ্য ইউরোপে পাওয়া যায়।’’

তবে, পরে বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ, ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সুচন্দ্রা কুণ্ডু জানিয়েছেন, একে মুরহেন অথবা বাংলায় জলমুরগি বলা হয় এবং তা খুব একটা বিরল নয়। তবে, যে ভাবে পাখিটার শুশ্রূষা করে তাকে বন দফতরের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সরকার পরিবার উদ্যোগী হয়েছে, তার প্রশংসা করেছেন সুচন্দ্রা। গৌতমবাবু জানান, ইন্টারনেটে খুঁজে বন দফতরের যতগুলো নম্বর তাঁরা পান, তার বেশির ভাগেই সাড়া পাওয়া যায়নি। শেষে ওয়াইল্ড লাইফ-এর একটি নম্বরে ফোন করতে এক ব্যক্তি তোলেন। জানা যায়, বানতলার কাছে সাপ ধরতে বেরিয়েছে অফিসারদের দল। সেখান থেকে বেহালা ঘুরে তবে দমদম যেতে পারবেন তাঁরা। তবেই উদ্ধার হবে পাখি। রাতে অবশ্য বন দফতরের তরফে জানানো হয়, তারা সোমবার সকালে এসে পাখিটিকে নিয়ে যাবে।

গৌতমবাবু বলেন, ‘‘যখন বন দফতরকে ফোনে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না, তখন খানিকটা অধৈর্য হয়েই ১০০ নম্বরেও ডায়াল করি। তবে পুলিশ যে নম্বর দেয় তাতে আগেই ফোন করে ফেলেছিলাম। পাখিটার বাঁ পা একটু বেঁধে দিই। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখি ওই পাখি কেঁচো খায়।’’ দশ বছরের সর্বজিৎ বাবার সঙ্গে বাগান থেকে সেই কেঁচো তুলে আনে। সন্ধ্যায় গৌতমবাবু জানিয়েছেন, পাখি কেঁচো খেয়েছে। একটু ভাল আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Moorhen Injured Siblings
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE