Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কার্টুন, লজেন্সে ছোটদের বন্ধু হবে থানা

দেওয়াল জুড়ে নানা রঙিন আঁকিবুকি। কোথাও কার্টুন, তো কোথাও নানা মজার চরিত্র। সঙ্গে বিভিন্ন ‘ইন্ডোর গেম।’ রয়েছে শোয়ার বা বসার জন্য ছোট ছোট খাটও। আর আছে লজেন্স কিংবা মুখরোচক কিন্তু স্বাস্থ্যকর শুকনো খাবার-দাবার। ছোটদের প্লে-স্কুল নয়, থানা। পোশাকি নাম ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি’ থানা।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

দীক্ষা ভুঁইয়া
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০২:১৬
Share: Save:

দেওয়াল জুড়ে নানা রঙিন আঁকিবুকি। কোথাও কার্টুন, তো কোথাও নানা মজার চরিত্র। সঙ্গে বিভিন্ন ‘ইন্ডোর গেম।’ রয়েছে শোয়ার বা বসার জন্য ছোট ছোট খাটও। আর আছে লজেন্স কিংবা মুখরোচক কিন্তু স্বাস্থ্যকর শুকনো খাবার-দাবার। ছোটদের প্লে-স্কুল নয়, থানা। পোশাকি নাম ‘চাইল্ড ফ্রেন্ডলি’ থানা।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী এ বার এ রাজ্যেও সরকারি ভাবে এ ধরনের ৩৭টি শিশুবন্ধু থানা তৈরি হতে চলেছে। এর মধ্যে কলকাতার আটটি ডিভিশনে আটটি এবং রাজ্যের বাকি অংশে ২৯টি এমন থানা গড়ার কথা বলা হয়েছে। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, সম্প্রতি নেওয়া এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে ইতিমধ্যেই যে সব থানা রয়েছে, সেগুলিকেই শিশু বন্ধু থানা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ ক্ষেত্রে মূল থানার ভিতরেই একটি অংশে আলাদা করে এই ব্যবস্থা করা হবে।

শিশুবন্ধু থানায় কী কী বৈশিষ্ট্য থাকতে হবে? প্রশাসন সূত্রের খবর, নাবালিক-নাবালিকা ও শিশুদের মনের মতো ঘর তৈরি করতে হবে থানায়। রাখতে হবে আলাদা শৌচাগার। আর থাকতে হবে খেলার ঘর, পড়ার বই, আঁকার সরঞ্জাম থেকে শুরু করে খাবারদাবারও। এই শর্তগুলিকে ‘ইন্ডিকেটর’ বলা হয়। ‘ইউনাইটেড নেশনস চিলড্রেন ফান্ড’ (ইউনিসেফ)-এর তৈরি এমন ২৬টি ‘ইন্ডিকেটর’ রয়েছে, এমন থানাকেই শিশুবন্ধু থানা বলে সিলমোহর দেওয়া হবে। এই থানাগুলির জন্য নিয়োগ করা হবে সেই সব পুলিশকর্মীকে, যাঁদের এ বিষয়ে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ রয়েছে।

লালবাজারের এক কর্তা জানান, ‘জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী অন্য দুষ্কৃতীদের সঙ্গে একই জায়গায় নাবালক-নাবালিকাদের রাখা, জি়জ্ঞাসাবাদ বা কথা বলা অপরাধ। এমনকী, অভিযুক্ত নাবালক, নাবালিকার পরিচয় গোপন করার পাশাপাশি থানা থেকে তাদের ছবিও বাইরে প্রকাশ করা নিষেধ। এখন শিশুবন্ধু থানা না থাকায় অভিযুক্ত কিংবা নিগৃহীতদের সাধারণ থানাতেই নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে অন্য অভিযুক্ত এবং লোকজনের মাঝখানেই তাদের অভিযোগ নেওয়া বা জেরা করা হয়। সে ক্ষেত্রে অভিযুক্ত এবং নিগৃহীত— সব শিশুরই পরিচয় সর্বসমক্ষে চলে আসে। তা ছাড়া, অন্য অভিযুক্তদের মাঝে বাচ্চাদের নিয়ে গেলে তাদের এক ধরনের মানসিক চাপও তৈরি হয়। এ সব থেকে দূরে রাখতেই শিশুবন্ধু থানা তৈরির সিদ্ধান্ত।

সম্প্রতি নবান্নে ইউনিসেফ এবং রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। থানাগুলি কেমন হবে, তার খসড়াও তৈরি করে রাজ্যের ডিজি এবং পুলিশ কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়। তাতে বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপার এবং কলকাতা পুলিশের কাছে সেই সব থানার নাম চাওয়া হয়েছে, যেগুলিতে শিশুদের উপযুক্ত করে সম্পূর্ণ আলাদা একটি অংশে ‘শিশু বন্ধু’ থানা তৈরি করা যাবে।

লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা জানান, কলকাতা পুলিশের তরফে বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে টালিগ়ঞ্জ থানার পাশে একটি কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আপাতত সেই সব অভিযুক্ত বা নিগৃহীত বাচ্চাকে রাখা হয়, যাদের জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ড কিংবা শিশুকল্যাণ সমিতি (সিডব্লিউসি)-র সামনে হাজির করানোর প্রয়োজন রয়েছে।

ওই পুলিশকর্তা আরও জানান, এ বার যে ধরনের থানা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেগুলি কোনও কেন্দ্র নয়। পুলিশ থানাই হবে। ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশ তাদের ৮ টি ডিভিশনের থানার নাম স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে শুধু কলকাতা নয়। রাজ্য পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁরাও রাজ্যের জন্য ২৯টি থানাকে চিহ্নিত করে একটি নামের তালিকা স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠিয়েছেন।

প্রশাসন জানিয়েছে, ইউনিসেফের সদস্যদের নিয়ে রাজ্য সরকারের গড়া কমিটি পুলিশের পাঠানো তালিকাভুক্ত থানাগুলি পরিদর্শন করে দেখার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE