দেবদাস ধীবর। নিজস্ব চিত্র
জিভের উপরে গজিয়ে উঠেছে মাংসপিণ্ড। বাঁকুড়ার সোনামুখীর বাসিন্দা দেবদাস ধীবরের জিভের ক্যানসারের অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। তিন মাস ধরে এসএসকেএমে চক্কর কেটে অবশেষে হাতে এসেছে তারিখ।
শিলিগুড়ির বাসিন্দা অ্যালন ইন্দওয়ার মুখের ডান দিকের ফোলা ভাব ক্রমশ বাড়ছে। দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন তাঁরও। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, ১৩ সেপ্টেম্বরের আগে তা সম্ভব নয়।
দেবদাস, অ্যালনের হয়রানি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। উৎকর্ষ কেন্দ্র ‘ইনস্টিটিউট অব অটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’ বিভাগে অস্ত্রোপচারের দিন পেতে তিন মাসেরও বেশি রোগীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। রোগীর চাপের নিরিখে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। তার জন্য পঞ্চাশেরও বেশি রোগী অস্ত্রোপচারের জন্য অপেক্ষার তালিকায় রয়েছেন।
তবে শীঘ্রই সেই অপেক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে বলে দাবি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এত দিন হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার শল্য চিকিৎসক ছিলেন মাত্র এক জন। কিন্তু রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি জানার পরে আরও এক জন হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার শল্য চিকিৎসক, ফেসিও-ম্যাক্সিলারি শল্য চিকিৎসক এবং প্লাস্টিক সার্জনকে চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দেবদাসের স্ত্রী চুমকি ধীবর বলেন, ‘‘তরল খাবারও গিলতে অসুবিধা হচ্ছে স্বামীর। গলার কাছে এত তীব্র যন্ত্রণা যে, কথা বলতে অসুবিধা হয়। ওই কষ্ট দেখা যায় না।’’ আগামী বুধবার বহির্বিভাগে দেখানোর দিন রয়েছে দেবদাসের। ফোনে চুমকি বলেন, ‘‘এ বারও অস্ত্রোপচারের তারিখ পাব না? ওর শরীর তো দিন দিন খারাপ হচ্ছে।’’ শিলিগুড়ির বাসিন্দা অ্যালন আবার আশঙ্কা নিয়ে জানান, দিন পেয়েও হঠাৎ সমস্যা দেখা দেওয়ায় অনেকের অস্ত্রোপচার বাতিল করতে হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, তেমন কিছু হবে না তো? এসএসকেএম সূত্রের খবর, দ্রুত অস্ত্রোপচারের জন্য ডাক্তারদের হাত চেপে ধরে রোগীর পরিজনেরা কান্নাকাটি করছেন, এমন দৃশ্যও বহির্বিভাগে বিরল নয়।
রোগীর চাপের কথা স্বীকার করে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হেড অ্যান্ড নেক ক্যানসার শল্য চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘জটিল অস্ত্রোপচারে পুনর্গঠনের বিষয় রয়েছে। এক-একটি অস্ত্রোপচার করতে আট থেকে ন’ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে এক-দু’টির বেশি অস্ত্রোপচার করা যেত না।’’ তবে দ্রুত ছবিটা বদলানোর ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, সরকারি পরিকাঠামোয় মুখের ক্যানসারে সাফল্যের হার দেখে তৎপরতার সঙ্গে আরও তিন জন চিকিৎসক নিয়োগে সম্মতির সিলমোহর পড়ে। সে কথা জানার পরে ইতিমধ্যে সপ্তাহে দু’দিন বহির্বিভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অস্ত্রোপচারের দিনও দু’দিন থেকে বেড়ে তিন দিন হয়েছে।
‘ইনস্টিটিউট অব অটোরাইনোল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি’র প্রধান অরুণাভ সেনগুপ্ত দাবি করেন, ‘‘এখন পূর্ব ভারতের মধ্যে সেরা পরিষেবা দেওয়ার প্রশ্নে এসএসকেএম কোনও অংশে পিছিয়ে নেই।’’ তবে এক জন চিকিৎসক বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান কতটা হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy