শহরতলি থেকে প্রচুর গাড়ি ঢুকবে কলকাতায়। তাতে যানযন্ত্রণা আরও বাড়ার আশঙ্কা।
শাসক দলের ব্রিগেড সমাবেশ। তা ঘিরেই ফের সপ্তাহান্তে যানজটে ভোগান্তির আশঙ্কা শহরে! পুলিশ সূত্রের দাবি, কাল, শনিবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্রিগেডমুখী মিছিল শুরু হবে। তার ফলে কলকাতার বহু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরুদ্ধ হতে পারে। এর পাশাপাশি জেলা এবং শহরতলি থেকে প্রচুর গাড়ি ঢুকবে কলকাতায়। তাতে যানযন্ত্রণা আরও বাড়ার আশঙ্কা। ট্রেন এবং জলপথের ভিড়ের চাপ নিয়েও রয়েছে চিন্তা। পুলিশ সূত্রের দাবি, এই অবস্থায় আমজনতা ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য মেট্রো রেলে ভরসা করতে পারেন। তাই পাতালপথেও অতিরিক্ত ভিড় হয়ে ঝক্কির আশঙ্কা এড়ানো যাচ্ছে না। তাই প্রতি স্টেশনে বাড়ানো হচ্ছে, রক্ষী। দমদম, এসপ্লানেড ও ময়দানে থাকবে কম্যান্ডো। কাজে লাগানো হবে ডগ স্কোয়াডকেও। শাসক দলের বিধায়ক-সাংসদ-মন্ত্রীদের সকাল ন’টার মধ্যে ব্রিগেডে পৌঁছে যেতে অনুরোধ করেছে লালবাজার।
লালবাজারের একটি সূত্র অবশ্য বলছে, যানজট এড়াতে আজ, শুক্রবার রাত ১০টা থেকেই পথে নামছে ট্র্যাফিক পুলিশের বিশেষ ৬টি দল। এর আগে ২১ জুলাই সমাবেশের আগের রাত থেকে শহরে ঢোকা গাড়ি ময়দান চত্বরের নির্দিষ্ট পার্কিং লটে পাঠিয়ে যানজট কিছুটা হলেও কমাতে পেরেছিল পুলিশ। এ বারও তাই একই পরিকল্পনা করা হয়েছে। এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘অনেকেই গভীর রাত বা ভোরে শহরে ঢুকে পড়েন। তার পরে ইচ্ছেমতো বাস, লরি দাঁড় করিয়ে দেন। সকালে পুলিশ যত ক্ষণে রাস্তায় নামবে, তত ক্ষণে যানজটে তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। সেই সমস্যা এড়াতেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, দু’জন সহকারীর নেতৃত্বে ওই ছ’টি দলের প্রত্যেকটিতে এক জন করে ইনস্পেক্টর এবং অন্যান্য পুলিশকর্মী থাকবেন।
তবে শনিবার সকাল থেকেই শহরের নানা প্রান্তে যে ভাবে তৃণমূল সমর্থকদের ১১টি মিছিল বেরোবে, তাতে যানজট কি আদৌ এড়ানো যাবে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা মানছেন অনেক পুলিশকর্তাও। তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, মিছিলে পথ আটকাবেই। তাই মিছিলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যতটা সম্ভব গাড়ি চালানো হবে। উড়ালপুলে মিছিলের বাস উঠতে দেওয়া হবে না। ‘‘যদিও সে দিন বেসরকারি বাসের কতটুকু অংশ পথে মিলবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে,’’ মন্তব্য এক পুলিশ আধিকারিকের।
লালবাজারের খবর, ব্রিগেডে সভা হলেই রান্না এবং সমাবেশকারীদের দৌরাত্ম্যে পরিবেশ নষ্টের অভিযোগ ওঠে। ময়দানের পরিবেশ রক্ষায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে। এ বার তাই শুক্রবার রাত থেকেই ময়দান চত্বরে পুলিশের ১৫টি দল এ ব্যাপারে নজরদারি চালাবে। এর বাইরে গোয়েন্দা বিভাগের বিশেষ দলও থাকবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ ভিআইপিদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এ বার ১২টি ‘জোন’-এ ভাগ করা হয়েছে ব্রিগেড চত্বর। প্রতি জোনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন এক জন করে ডিসি। মাঠের চারপাশে ৬টি নজরমিনারে দূরবীন নিয়ে সশস্ত্র পুলিশকর্মীরা থাকবেন। নজরমিনার ও মাঠেও সিসিটিভি থাকবে। লালবাজার-সহ তিন জায়গায় থাকবে অতিরিক্ত ফোর্স। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী নিজে ব্রিগেডের মাঠ পরিদর্শন করেন।
পুলিশ সূত্রের দাবি, জমায়েত ও মিছিলে যাতে কোনও বহিরাগত ঢুকে গোলমাল না পাকাতে পারে, তার জন্য ১১টি জমায়েত স্থলের ভিডিয়ো রেকর্ড করা হবে। চারটি জায়গায় ‘ব্যাকপ্যাক’ দিয়ে লাইভ ভিডিয়ো লালবাজারে সম্প্রচারিত হবে। গোয়েন্দা বিভাগের কর্মীরাও সাদা পোশাকে ভিড়ে মিশে ছবি তুলবেন। এর বাইরে স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের দু’টি দল ভিডিয়ো তুলবে। তৃণমূলের ১৪টি ক্যাম্পে এক জন করে পুলিশ আধিকারিক থাকবেন। লালবাজার-সহ ছ’জায়গায় থাকবে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। বিপর্যয় মোকাবিলা দল থাকবে চারটি ফেরিঘাটেও।
লালবাজারের খবর, ধর্মতলা এবং আলিপুরের দু’টি পাঁচতারা হোটেল ভিন্ রাজ্য থেকে আসা অতিথিরা থাকবেন। তার জন্য ওই হোটেলে কমব্যাট বাহিনীর জওয়ানদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং অতিথিদের জ়েড প্লাস নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ওই সব রাজ্যের পুলিশ বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে পৃথক নিরাপত্তা সেল তৈরি করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী-সহ ভিআইপি-রা কুইন্স ওয়ে এবং ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ দিয়ে সভাস্থলে যাবেন। ওই রাস্তা দু’টিতে যাতে যানজট না হয়, তার জন্য বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে লালবাজারের শীর্ষ স্তর। অর্থাৎ, মঞ্চের পিছন দিয়ে কোনও মিছিল যাবে না। শনিবার ব্রিগেড সংলগ্ন কোনও রাস্তায় গাড়ি পার্ক করতে দেওয়া হবে না।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, যানজট এড়াতে পুলিশ কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রয়োজন মতো ওই দিন রাস্তা বন্ধ করা হবে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এ দিন প্রায় দশ হাজার পুলিশকর্মী মোতায়ন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy