সমর্থনে: রাস্তাতেই চলছে ক্রিকেট। বুধবার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
রাস্তায় বসেই কেউ খেলছেন দাবা। কেউ কেউ নেমে পড়েছেন ব্যাডমিন্টন, ক্যারম বা ক্রিকেট খেলতে। বাম-কংগ্রেসের শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘট এ ভাবেই পালন করলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীরা। অনেকে আবার রাস্তায় বসেই দিলেন ‘আজাদি’র স্লোগান, গাইলেন আদিবাসীদের লড়াইয়ের গান। ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা বাসের ছাদে উঠে পতাকাও ওড়ালেন তাঁরা।
চার নম্বর গেটের সামনের গড়িয়ামুখী রাস্তাটি এ দিন সকাল থেকেই কার্যত যাদবপুরের পড়ুয়াদের দখলে চলে যায়। সেখানেই চলতে থাকে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, দাবা, ক্যারম। তবে ধর্মঘটের সমর্থক ছাত্রছাত্রীরা দাবি করেন, লাগাতার রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়নি। মাঝেমধ্যে তা খুলেও দেওয়া হয়েছে।
জুলফিকার আহমেদ নামে এক ছাত্র বলেন, ‘‘রাস্তায় খেলাধুলো করে বোঝাতে চেয়েছি, এমন খোলামেলা পরিবেশেই আমরা আনন্দের সঙ্গে বাঁচতে চাই। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া নাগরিকত্ব আইন-সহ বেশ কিছু ভ্রান্ত নীতি মানতে পারছি না।’’ আর এক ধর্মঘট সমর্থক সঙ্গেত দেয়াসির কথায়, ‘‘রাস্তায় বসে দাবা খেলে আমরা এটাই বোঝালাম যে, হিংসার পথে নয়, বুদ্ধির মাধ্যমেই আমরা
যুদ্ধে জিততে চাই।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের ইউনিট সম্পাদক দেবরাজ দেবনাথ জানিয়েছেন, ওই ক্যাম্পাস এ দিন কার্যত তাঁরা অচল করে দিয়েছিলেন। তবে সহ-উপাচার্য চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এ দিন কোনও পরীক্ষা ছিল না। আমরা কেউ ঢুকতে বাধা পাইনি।’’
কলেজ স্ট্রিটে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে এ দিন সকাল থেকেই জড়ো হন ধর্মঘটের সমর্থকেরা। সেখানে টায়ার পোড়ানো হয় বলে অভিযোগ। উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া রোজকার মতো গাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকতে গেলে ধর্মঘট সমর্থকেরা তাঁকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে যেতে অনুরোধ করেন। অনুরাধাদেবী হেঁটেই ভিতরে ঢোকেন। প্রেসিডেন্সির এসএফআই নেতৃত্বাধীন ছাত্র সংসদের সভানেত্রী মিমোসা ঘোড়ই জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলছে বলে ক্লাস হচ্ছে না। তবে আজকের ধর্মঘটের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা পরীক্ষা স্থগিত রাখার অনুরোধ করেছিলেন। সেই মতো কোনও পরীক্ষা হয়নি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস জানান, বাণিজ্য-সহ যে ক’টি বিভাগে পূর্ব-নির্ধারিত পরীক্ষা ছিল, সেগুলি সবই হয়েছে। বালিগঞ্জ সায়েন্স কলেজের টিএমসিপি নেতা অভিরূপ চক্রবর্তী জানান, তাঁরা ধর্মঘট সমর্থন করেননি। তবে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান বিক্ষোভ করেছেন। বারাসত রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ব-নির্ধারিত পরীক্ষা হয়েছে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ও শিক্ষকদের উপরে হামলার জেরে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের আঁচ কলকাতার আইএসআই-তেও। এ দিন বিকেলে শ’দুয়েক ছাত্র-শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসু ভবনের সামনে একটি মানববন্ধন তৈরি করেছিলেন। সংক্ষিপ্ত ওই অনুষ্ঠান শুধু শিক্ষাঙ্গনে হামলাই নয়, দেশে সার্বিক ভাবে বিরোধী স্বরকে দমিয়ে রাখার বিরুদ্ধে সরব হয়। এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বরেও নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিরাট মিছিল করেছিল আইএসআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy