আশঙ্কা: বুধবার সন্ধ্যায় বালি দমকল কেন্দ্রে মন্ত্রী সুজিত বসু। নিজস্ব চিত্র
করোনা আক্রান্ত হয়ে বিদেশ থেকে ফিরে কলকাতায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন এক আমলার ছেলে। নবান্নে নিজের কর্মস্থলে যোগ দিয়েছিলেন ওই আমলাও। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তুমুল সমালোচিত হন ওই আমলা। একই কারণে এ বার বিতর্কের মুখোমুখি দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু।
চার দিন আগেই সুজিতবাবুর বাড়ির এক পরিচারক করোনায় আক্রান্ত হন। সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি আসা লোকজনের হোম কোয়রান্টিনে থাকাই নিয়ম। কিন্তু গত বুধবারই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত এক দমকলকর্মীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে দফতরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বালি দমকল কেন্দ্রে পৌঁছন সুজিতবাবু। মন্ত্রীর উপস্থিতি ঘিরে ওই কেন্দ্র ও তার আশপাশে বড়সড় জমায়েত হয়। এর পরে সুজিতবাবু করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর চাউর হতে অনেকেই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতেই সুজিতবাবু জানতে পেরেছেন তিনি এবং তাঁর স্ত্রী করোনায় সংক্রমিত। তবে তাঁর ছেলে-মেয়ে সুস্থ আছেন। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘‘দিন চারেক আগে আমার বাড়ির পরিচারকের করোনা ধরা পড়ে। আমি খুবই সতর্ক এ সব ব্যাপারে। বৃহস্পতিবারই আমরা করোনা পরীক্ষা করাই। সন্ধ্যায় আমার এবং আমার স্ত্রীর রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। আমার পুত্র ও কন্যার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।’’
সুজিত বসু করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সেই খবর পাওয়ার পরে শুক্রবার জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে দমকল কেন্দ্র চত্বর। নিজস্ব চিত্র
সুজিতবাবুর অসুস্থতা প্রসঙ্গে এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে কোনও মানুষের হতে পারে। দুর্যোগের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে সুজিতের করোনা হয়েছে। আমার এলাকাও তো করোনা-কবলিত। আমি কী করব? আপনারা কি চান আমি বাড়িতে চুপ করে বসে থাকব? নিজেকে হোম কোয়রান্টিন করে নেব? তা হলে তো কাজও হবে না। ববির (ফিরহাদ) শরীর খারাপ। সব সময়ে বলি সাবধানে থাকতে। কেউ ক্যারিয়ার হলে কী করতে পারি?’’
কিন্তু পরিচারক সংক্রমিত জানা সত্ত্বেও পরীক্ষা না করিয়েই কেন বাড়ির বাইরে বেরোলেন? সুজিতবাবুর উত্তর, ‘‘আমার আরও ১৪ জন নিরাপত্তাকর্মীর পরীক্ষা হয়েছে। শুধু আমারই পজ়িটিভ হয়েছে। কার কী ভাবে রোগ হয় কেউ বলতে পারে না। আমরা হোম কোয়রান্টিনে আছি।’’ ওই পরিচারকও নিজের বাড়িতে কোয়রান্টিনে রয়েছেন।
বুধবার বেলুড়ে গাছ কাটতে উঠে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় মৃত্যু হয় দমকলকর্মী সুকান্ত সিংহরায়ের। ওই দিন বিকেলেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে সুজিতবাবু দফতরের ডিজি জগমোহন ও অন্য উচ্চপদস্থ কর্তাদের নিয়ে বালি দমকল কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। ওই কেন্দ্রের ওসি-র ছোট ঘরের মধ্যেই সুজিতবাবুরা বসেন। সেখানে মন্ত্রীর খুব কাছেই ছিলেন সুকান্তের বাবা সুশান্তবাবু, দাদা সুদীপ্ত ও আরও দুই আত্মীয়। দমকলমন্ত্রী আসায় সেখানে তৃণমূলের বহু স্থানীয় নেতাকর্মীও হাজির হন। স্থানীয় সূত্রে খবর, সে দিন ওই দমকল কেন্দ্রে অন্তত দু’শো মানুষের জমায়েত হয়।
এ দিন বালি দমকল কেন্দ্র ও তার আশপাশ পুরোপুরি জীবাণুমুক্ত করা হয়। ওই দিন কোন কোন আধিকারিক, কর্মী সুজিতবাবুর সংস্পর্শে এসেছিলেন, দমকল বিভাগ সেই তালিকাও তৈরি করছে বলে জানান ডিজি জগমোহন।
দমকলের হাওড়ার ডিভিশনাল অফিসার দীপঙ্কর পাঠক বলেন, ‘‘মন্ত্রীর কাছাকাছি থাকায় সুকান্তর বৃদ্ধ বাবাকেও কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীর কাছাকাছি থাকায় শুক্রবার থেকে আমিও ডিভিশন অফিসে কোয়রান্টিনে থাকছি।’’
বুধবার দমকলমন্ত্রীর কাছাকাছি থাকায় তিনিও কোয়রান্টিনে থাকবেন কি না সে প্রশ্ন করলে ডিজি (দমকল) জগমোহন শুধু বলেন, ‘‘আমরাও কয়েক জন কোয়রান্টিনে থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy