—প্রতীকী ছবি
আর পাঁচটা দিনের মতোই শনিবার রাতে অফিসে থেকে বেরিয়ে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট পেরিয়ে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউয়ের একটু আগে গিয়ে শাটল ট্যাক্সি ধরলাম। গাড়ির সামনে চালকের পাশের আসনে গিয়ে বসি। কিছুটা যেতেই পিছনের আসনে ওঠেন এক ভদ্রলোক। গাড়ি চালু হতেই তিনি নিয়মমাফিক ২০ টাকা বার করে ট্যাক্সিচালকের হাতে দেন। শাটল ট্যাক্সিতে গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ থেকে হাওড়া পর্যন্ত যাওয়ার ভাড়া
সেটিই নেওয়া হয়। সহযাত্রীর টাকা দেওয়া হয়ে গেলে, আমিও ২০ টাকা বার করে চালকের হাতে দিতে যাই। কিন্তু তিনি আমার থেকে এত ‘কম’ নিতে নারাজ। চালক বলে উঠলেন, ‘‘আপনি তো মহিলা। মেয়েদের আলাদা ভাড়া, বেশি টাকা লাগবে।’’ সেটা কত? ট্যাক্সিচালকের দাবি, ‘‘১০০ টাকা লাগবে।’’
এত দিন ধরে একই পথে যাতায়াত করছি। এমন আগে কখনও ঘটেনি। ক্ষণিকের বিস্ময় ঝেড়ে ফেলে জিজ্ঞেস করলাম, একই দূরত্ব যেতে মহিলাদের আলাদা ভাড়া কেন দিতে হবে? আর হাওড়া যেতে ১০০ টাকা দিতে হলে শাটল ট্যাক্সিই বা ধরব কেন? গলা চড়ল চালকের। সপাটে উড়ে এল উত্তর, ‘‘অত জানি না। আপনি মহিলা। নিয়ে যাচ্ছি। বেশি টাকা দেবেন। কে, কী দিচ্ছে আপনাকে দেখতে হবে না।’’
এ কেমন যুক্তি? মহিলাদের ভাড়া আলাদা কেন হবে? আরও কড়া কণ্ঠে এ বার চালক সাফ বললেন, ‘‘বেশি টাকা দিতে পারলে চলুন। না দিতে পারলে আপনাকে সামনের মোড়ে নামিয়ে দিয়ে চলে যাব। তখন বুঝবেন।’’ এত বছর এই শহরে চলাফেরা করছি, মহিলা বলে আলাদা ভাড়া দেওয়ার কথা কখনও ওঠেনি। আমিও জানালাম, গেলে ন্যায্য ভাড়াতেই যাব। মহিলা যাত্রী হিসেবে বেশি টাকা দেব না। এ বার অবশেষে আমার হয়ে মুখ খুললেন পিছনের আসনে বসা সহযাত্রীও। চালকের উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘‘এ ভাবে নামিয়ে দেবে?’’ তবে ওইটুকুই। তাঁর প্রশ্ন শুনেই চিৎকার শুরু করলেন চালক। সঙ্গে সঙ্গে চুপ করে গেলেন পিছনে বসা ভদ্রলোকও। এমন অন্যায় ভাবে সহযাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে শুনেও চুপ থাকলেন তিনি। মহাকরণের আগে রাস্তার মাঝে নামিয়ে দেওয়া হল আমাকে। রাত তখন সওয়া ন’টা।
আরও পড়ুন: রাতপথে জোর করে তরুণীকে নামিয়ে দিলেন ট্যাক্সিচালক
এমনিতেই অতটা রাতে ফাঁকা হয়ে যায় অফিস পাড়া। তার উপরে দিনটা শনিবার। বহু অফিসে আগে ছুটি হয়ে যায়। ফলে ওই এলাকা অন্য ব্যস্ত দিনের তুলনায় একটু বেশিই নির্জন থাকে। তবু নেমে যেতে বাধ্য হলাম।
তবে এমন পরিস্থিতিতে সাহায্যের হাত বাড়ালেন আর এক ট্যাক্সিচালকই। আমাকে ওই ফাঁকা জায়গায় নেমে যেতে দেখে এগিয়ে এলেন সেখানে দাঁড়ানো ওই চালক। নিজেই জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘দিদি কোনও সমস্যা হয়েছে?’’ বললাম, হাওড়া যাব। চালক উত্তর দিলেন, ‘‘কোনও চিন্তা নেই। আমি পৌঁছে দেব।’’ মিটার চালিয়ে যেতে শুরু করলেন তিনি। ওই ট্যাক্সিতে উঠে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা ফোন করে বলতে শুরু করি এক সহকর্মীকে। ফোন রাখতেই চালক বললেন, ‘‘দিদি, ট্যাক্সির নম্বরটা নিয়েছেন তো? অভিযোগ জানাবেন।’’
আরও পড়ুন: ভিন্দেশিকে টাকা দিয়ে সাহায্য ট্র্যাফিক সার্জেন্টের
এই শহরেই ছোট থেকে রয়েছি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে চাকরি। রাতের কলকাতা অচেনা নয়। কলকাতার এমন কোনও রাস্তা নেই যেখানে কাজের সূত্রে যেতে হয় না। তবে ওই রাতে যে কলকাতা এবং ট্যাক্সিচালককে দেখলাম, তা বড়ই অচেনা ঠেকল। শহরটা এত বদলে গেল কখন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy