বহিরঙ্গে সংস্কার-চাকচিক্যের অভাব নেই। কিন্তু প্রেসিডেন্সির অন্তরঙ্গের দৈন্য যে ক্রমবর্ধমান, তা নিয়ে এ বার সরব হল পশ্চিমবঙ্গ সরকারি কলেজের শিক্ষক সমিতিও।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিম্নমুখী মান নিয়ে কিছু দিন ধরেই দুর্ভাবনা ও সমালোচনা চলছে। এ বার বেশ কিছু আসন খালি পড়ে থাকায় সেটা চরমে ওঠে। যে-প্রতিষ্ঠান কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপীঠের সম্মান পেয়ে এসেছে বরাবর, তার দুর্দশায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি। ‘‘প্রেসিডেন্সি কলেজও রইল না, বিশ্ববিদ্যালয়ও হতে পারল না,’’ রবিবার যাদবপুরে সমিতির ৪৬তম বার্ষিক সম্মেলনে খেদ প্রকাশ করেন সংগঠনের প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনী শ্যামল চক্রবর্তী। সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস সরকার জানান, প্রেসিডেন্সির মান বাঁচাতে হলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সব সরকারি কলেজকে নিয়ে আসা উচিত। কলেজ অনুমোদনের অধিকার দেওয়া উচিত প্রেসিডেন্সিকে। এটা আগেও জানানো হয়েছে সরকারকে।
দেবাশিসবাবুর অভিযোগ, রাজ্যে গত সাত বছরে সরকারি কলেজের সংখ্যা ১৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭। কিন্তু সেই হারে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর সংখ্যা বাড়েনি। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর অভাবে ধুঁকছে সরকারি কলেজগুলি। প্রেসিডেন্সির মতো একটি ছাতার আওতায় সব সরকারি কলেজকে আনলে উচ্চশিক্ষার মান উন্নত করা সম্ভব হবে বলে জানান বক্তারা।
শিক্ষা শিবিরের অনুযোগ, পরপর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হলেও পঠনপাঠন উপেক্ষিত। প্রায় ৫০% কলেজ শিক্ষক ও কর্মীর সঙ্কটে ভুগছে। মান বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বহু শিক্ষাবিদ। দেবাশিসবাবু জানান, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ১৮৯ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৫২ জনের পদোন্নতি লাল ফিতের ফাঁসে আটকে আছে।
এই আমলে মর্যাদার সঙ্গে শিক্ষকতা করা কঠিন বলে মন্তব্য করেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা-র সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ। শিক্ষক-নিগ্রহের নিন্দা করেন তিনি। বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গণতন্ত্র বিপন্ন। পথে না-নামলে মর্যাদা বা অধিকার কোনওটাই ফেরত পাওয়া যাবে না।’’ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পার্ট ওয়ানে পাশ করতে না-পেরে এক ছাত্রীর মৃত্যুর প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। বলেন, ‘‘নিজেদেরই সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে গিলতে (পরীক্ষার নতুন নিয়ম চালু করেও পুরনোয় ফেরা) হল। যে-ভাবে ছাত্রীর মৃত্যু হল, সেটা তো খুন! অথচ শিক্ষকদের সঙ্গে কোনও কথাই বলা হল না। মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী বলে দেবেন আর বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে, এটা মানা যায় না।’’
পাল্টা দেন শাসক দলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু (ঘোষ)। তিনি বলেন, ‘‘বাম আমলে শিক্ষকদের কণ্ঠরোধ করা হত। বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষকদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। তাই ওয়েবকুটা-র তরফে সরকারের সমালোচনা শোভা পায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy