Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হারাতে বসা হিব্রু গানে শান্তির বার্তা ইহুদি কন্যার

লালনের এই গান আগে শোনার সুযোগ হয়নি তাঁর। তবে ভালবেসেছেন  ‘নাথিং টু কিল অর ডাই ফর, নো রিলিজিয়ন টু...’। লেননের সেই স্বপ্নে আস্থা রেখে চারপাশটা নিজের মতো করে বদলাতে চান তিনিও। পড়শিদের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘ফাঁক’ ঘোচাতে চান সুর দিয়ে।

লিয়োনা হট্টা

লিয়োনা হট্টা

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:০২
Share: Save:

সে আর লালন একখানে রয় তবু লক্ষ যোজন ফাঁক রে…

লালনের এই গান আগে শোনার সুযোগ হয়নি তাঁর। তবে ভালবেসেছেন ‘নাথিং টু কিল অর ডাই ফর, নো রিলিজিয়ন টু...’। লেননের সেই স্বপ্নে আস্থা রেখে চারপাশটা নিজের মতো করে বদলাতে চান তিনিও। পড়শিদের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘ফাঁক’ ঘোচাতে চান সুর দিয়ে। এ চেষ্টায় তাঁর হাতিয়ার আদি হিব্রু এবং শেফারডিক গান।

তিনি লিয়োনা হট্টা। স্পেনের এক ইহুদি ঘরের মেয়ে। আপাতত এ শহরে দেশ-দুনিয়ার সঙ্গীতকারেদের সঙ্গে দফায় দফায় গলা মেলাচ্ছেন শান্তির বার্তা ছড়াতে। ব্যক্তিগত ইতিহাস তাঁকে বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে শান্তি আসে ভালবাসার মাধ্যমে বিদ্বেষ জয় করতে পারলে, তবেই।

পারিবারিক ইতিহাস বলতে গিয়ে এখনও চোখ ছলছল করে ওঠে লিয়োনার। জানালেন, হলোকস্টের দুঃস্বপ্ন থেকে কোনওমতে পালিয়ে দক্ষিণ স্পেনে ঠাঁই নিয়েছিলেন এক শিল্পী দম্পতি। তিনি তাঁদেরই সন্তান। আউশউৎজ়ের গ্যাস চেম্বারে প্রাণ হারিয়েছেন দাদু-ঠাকুরমা। ছোট থেকে বুঝেছেন ধর্মের শাসন ছারখার করে দিতে পারে দুনিয়াটা। জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্মেও তাই আস্থা রাখেন না। কিন্তু ইতিহাস রক্ষা করে ভবিষ্যতের পথ মসৃণ করতে চান।

সময়ের গহ্বরে লুপ্ত হতে বসা ইহুদি সমাজের একান্ত আপন কিছু হিব্রু সাহিত্য ও গানকেই তাই তুলে ধরছেন আধুনিকতার দরবারে। নতুন ভাবে জগতের আলো দেখাতে চান এই ভাষাকে। কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে লিয়োনা গড়ে ফেলেছেন ব্যান্ড। নাম লিয়োনা অ্যান্ড সেরেনা স্ট্রিংস। আধ্যাত্মিক হিব্রু গানের ঐতিহ্য চেনাচ্ছেন তাঁরা রাবি এহুদা হালেভির সৃষ্টির সুরে। কলকাতায় সুর জহান উৎসবের প্রাঙ্গণে বসে আড্ডার মাঝে লিয়োনা জানালেন, বহু বছর ধরে এমন হিব্রু গান খুঁজেছেন যা ধার্মিক নয়, কিন্তু আধ্যাত্মিক। তিনি সকলকে জানাতে চান, ইহুদিদের ঐতিহ্য ধর্ম-পরিচয়ে আবদ্ধ নয়। ধ্বংসের স্মৃতি হাতড়ে এ ভাবেই খুঁজে বেড়ান পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগের উৎস।

ইতিমধ্যে তিনি শুনে নিয়েছেন, ভারতও নানা ধর্মের দেশ। এড়ানো যায়নি ভেদাভেদ। হয়েছে দেশভাগ। রাজনীতি সমাজনীতি প্রেম-ভালবাসা বন্ধুত্ব সংসার শিক্ষা— সবেতেই চোখ রাঙিয়েছে ধর্ম। জানেন, বিশ্বজুড়ে ধর্ম এমনই করে। তাই লিয়োনা বলেন, ‘‘হলোকস্ট নানা দেশে নানা ভাবে হয়েছে। সেই ধ্বংসের স্মৃতি যেন আরও ধ্বংস না ডেকে আনে। সে কারণেই এমন একটা সময়ের গান শোনাই আমি, যখন ইউরোপীয়দের মধ্যে এত ভাগাভাগি ছিল না। যখন ইহুদিদের একটার পর একটা দেশ ছেড়ে চলে যেতে হত না।’’ শেফার্ডিক গানও সে সূত্রেই বেছে নেওয়া। স্পেন অঞ্চলের আদি ইহুদিরা মূলত সেই জনজাতিরই মানুষ যে! তাঁরা কী ভাবে ভালবাসার কথা শোনাতেন, তা মনে করাতে চান তিনিও।

লিয়োনা একা নন, ধর্ম পরিচয়ের দিক থেকে প্রান্তিক বহু জাতির গান নিয়েই এ বারের উৎসবে হাজির হয়েছেন দেশ-বিদেশের শিল্পীরা। সাইপ্রাস, কেপ ভার্দে, মিশর, হাঙ্গেরির শিল্পীদের সুরের সঙ্গে তাল মেলাচ্ছেন এ বাংলার বাউলেরা। মোহর কুঞ্জে সেই জমজমাট আসর দেখে লিয়োনার বিশ্বাস আরও পোক্ত হচ্ছে। মানছেন, সুর মিললে কয়েক যোজন করে ফারাক কমবেই পড়শিদের মধ্যে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hebrew Song Jewish Girl Concentration Camp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE