Advertisement
১১ মে ২০২৪
Cyclone Amphan

বদলে যাওয়া দুই সরোবরে ফিরলেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা

একের পর এক গাছগুলিকে এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখে হাঁটতে হাঁটতে মাঝপথে দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন অনেক প্রাতর্ভ্রমণকারী।

ফেরা: হেলে পড়া বাতিস্তম্ভের পাশ দিয়েই চলছে প্রাতর্ভ্রমণ। রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে। বুধবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ফেরা: হেলে পড়া বাতিস্তম্ভের পাশ দিয়েই চলছে প্রাতর্ভ্রমণ। রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে। বুধবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৩:১৩
Share: Save:

প্রিয় পলাশ গাছটা মুখ থুবড়ে পড়ে রয়েছে এক পাশে। কোথাও আবার জলাশয়ের পাশের রাস্তার উপরেই ইতস্তত ছড়িয়েছিটিয়ে পড়ে ছাতিম, কৃষ্ণচূড়ার ডালপালা। কোথাও আবার হেলে পড়েছে বাতিস্তম্ভ। আমপানের তাণ্ডবের ছবি চার দিকে।

একের পর এক গাছগুলিকে এ ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখে হাঁটতে হাঁটতে মাঝপথে দাঁড়িয়ে পড়ছিলেন অনেক প্রাতর্ভ্রমণকারী। প্রায় তিন মাস পরে, বুধবার রবীন্দ্র সরোবর চত্বর খুলে দেওয়ার পরে সেখানকার এমন ছবি দেখে অনেক প্রাতর্ভ্রমণকারী মনখারাপ নিয়েই বাড়ি ফিরলেন। অনেককেই বলতে শোনা গেল— ‘‘এ দৃশ্য দেখা বড় কষ্টকর।’’

গত মার্চে, লকডাউনের শুরুতেই সাধারণের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রবীন্দ্র সরোবর এবং সুভাষ সরোবরের দরজা। তার পরে এদের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে মহাঘূর্ণিঝড় আমপান, যার জেরে তছনছ হয়েছে সরোবর চত্বর। কিন্তু ঢোকার উপায় না থাকায় সরোবর চত্বরের কী হাল হল, তা রয়ে গিয়েছিল লোকচক্ষুর অগোচরেই।

আনলক-১ পর্ব থেকে প্রাতর্ভ্রমণকারীরা সকালে বেরোলেও তাঁরা রবীন্দ্র সরোবরের চার দিকের রাস্তা ধরেই হাঁটাহাঁটি করতেন। প্রায় তিন মাস পরে, এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় দুই সরোবরের দরজা।

কেমন দেখছেন রবীন্দ্র সরোবরকে? এ দিন সেখানে হাঁটতে আসা হৈমন্তী রায় নামে এক মহিলা বললেন, “সরোবর চত্বর যেন পাল্টে গিয়েছে। যে পলাশ-ছাতিমের টানে বারবার এখানে আসি, তার প্রায় অধিকাংশই আর নেই। এই দৃশ্য চোখে দেখা যাচ্ছে না।’’ একই কথা জানাচ্ছেন সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা সলিল ধর-ও। এ দিন সরোবর চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, মূল রাস্তাটি হাঁটাচলার উপযুক্ত থাকলেও জলাশয় লাগোয়া রাস্তায় হাঁটা এখনও কার্যত অসম্ভব। তবে তাতে অবশ্য দমছেন না প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। সরোবরে হাঁটতে আসা প্রশান্ত নস্কর বললেন, ‘‘পড়ে যাওয়া গাছ এখনও সরানো হয়নি। এমনকি, জল থেকে শ্যাওলা তুলেও রাস্তার উপরেই ফেলে রাখা হয়েছে। তবে মূল রাস্তা পরিষ্কার থাকায় আমাদের হাঁটাচলার অসুবিধা তেমন কিছু হচ্ছে না। প্রয়োজনে আমরাই নিজেদের স্বার্থে রাস্তা পরিষ্কার করতে পারি।’’

কেএমডিএ সূত্রের খবর, সাধারণত দুই সরোবর চত্বরে ভোরের দিকে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের যে পরিমাণ ভিড় লেগে থাকত, এ দিন সে তুলনায় লোক অনেকটাই কম এসেছিলেন। দুই সরোবর চত্বর খুলে দেওয়া হলেও সেখানকার সুইমিং পুল এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া এ দিন কাউকেই সরোবর চত্বরে প্রবেশ করতে দেননি নিরাপত্তারক্ষীরা। তবে ‘লেক লাভার্স ফোরাম’-এর সদস্য সুমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “মাস্ক থাকলেও অনেকেই হাঁটার সময়ে তা পরছেন না। কোথাও আবার এক সঙ্গে বসে গল্পগুজব করতেও দেখা গিয়েছে তাঁদের।’’

এ দিন ভোরে প্রায় একই ছবি দেখা গেল সুভাষ সরোবরেও। বেলেঘাটার বাসিন্দা সুব্রত সেন বলেন, “প্রায় তিন মাস পরে আজ সুভাষ সরোবর খোলার প্রথম দিনেই হাজির ছিলাম।

কিন্তু জলাশয়ের পাশের রাস্তা থেকে এখনও গাছ সরানো হয়নি।’’ কেএমডিএ কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, দু’টি সরোবরকেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এখনও অন্তত মাসখানেক সময় লাগবে। তাই আপাতত প্রাতর্ভ্রমণকারীদের কথা ভেবেই সরোবর চত্বর দু’টিকে জীবাণুমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE