প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
মরাঠা-মাটিতে দাঁড়িয়ে লোকসভা ভোটের প্রচারে মেরুকরণের রাজনীতি অব্যাহত রাখলেন নরেন্দ্র মোদী। তাঁর চলতি বিভাজনের নীতিতে আজ ইন্ধন জুগিয়েছেন উদ্ধবপন্থী শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত। মোদীকে ঔরঙ্গজেবের সঙ্গে তুলনা করে রাউত একটি জনসভায় বলেছেন, “গুজরাতের যেখানে মোদীর জন্মস্থান সেখানে ঔরঙ্গজেবও জন্মেছিলেন। এই ঔরঙ্গজেবের মতো মানসিকতা গুজরাত থেকে মহারাষ্ট্র এবং দিল্লিতে ছড়িয়েছে, যা মরাঠি অস্মিতা এবং আত্মসম্মানের বিরোধী। তাই বলবেন না মোদী আসছে, বরং বলবেন ঔরঙ্গজেব আসছে। আমরা তাঁকে পুঁতে দেব।”
তাঁর এই মন্তব্যের পর রাউতের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। বলা হয়েছে মোদীর ‘প্রাণনাশের হুমকি’ দিয়েছেন বিরোধী নেতা। অন্য দিকে মহারাষ্ট্রের নন্দুরবাগের জনসভায় মোদী গোটা বিষয়টিকে কাজে লাগিয়েছেন হিন্দু-মুসলমানের রাজনীতিতে। তাঁর কথায়, “কংগ্রেস এবং নকল শিবসেনাদের গরিবদের প্রতি ঘৃণা রয়েছে। তারা বলছে, আমায় জীবন্ত পুঁতে ফেলবে। তারা গালি দেওয়ার সময়েও নিজেদের ভোট ব্যাঙ্কের তুষ্টিকরণের দিকে খেয়াল রাখছে। এমন ভাষায় গালি দিচ্ছে যা তাদের ভোটব্যাঙ্কের পছন্দ হবে! অথচ বালাসাহেব ঠাকরেকে আমি কাছ থেকে দেখেছি, তাঁর হৃদয়ের কথা বুঝেছি। এই নকল শিবসেনা বোমা বিস্ফোরণকারীদের প্রচারের সঙ্গী করছে।” এর পরই তিনি বলেন, “মাতৃশক্তি আমার রক্ষক। মা-বোনেরা রয়েছেন আমার সুরক্ষায়। কেউ চাইলে, আমি মরে গেলেও আমাকে অন্তত মাটিতে পুঁততে পারবে না।”
গত তিন সপ্তাহ ধরে যে প্রচার মোদী করছেন, আজ তারই রেশ ধরে বলেছেন, “কংগ্রেসের কর্মসূচি, দলিত, জনজাতি, ওবিসি সম্প্রদায়ের মানুষের সংরক্ষণকে ছিনিয়ে নিয়ে নিজের ভোটব্যাঙ্ককে দিয়ে দেওয়া। এ কথা জনজাতি সমাজ জেনে রাখুন। কর্নাটকে রাতারাতি মুসলমানদের ওবিসি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওবিসি সংরক্ষণের সব চেয়ে বড় ভাগ দেওয়া হয়েছে মুসলমানদের। এই কর্নাটকের মডেল কংগ্রেস গোটা দেশে চালু করতে চায়। কিন্তু এই মহাবিভাজন আটকাতে মোদী মহারক্ষক হয়ে মহাযুদ্ধ করছে।” কংগ্রেসকে দেওয়া তাঁর চ্যালেঞ্জ, “আপনাদের ১৭ দিন ধরে বলে আসছি, ক্ষমতা থাকলে লিখে দিন তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসির বরাদ্দ, টুকরো করে আপনারা মুসলমানদের দেবেন না।” বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে দু’টি চিঠি ইতিমধ্যেই পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। তাতে নিজেদের ইস্তাহার পাঠিয়ে খড়্গে মোদীকে বলেছেন, কোথাও কংগ্রেস বলেনি তফসিলি জাতি, জনজাতি এবং ওবিসি-র সংরক্ষণ কেড়ে নেওয়া হবে। ফলে যেটা কংগ্রেস বলেনি, সেটাকে ধর্তব্যের মধ্যে এনে লিখিত দেওয়ার প্রশ্নই বা উঠছে কেন?”
গাত্রবর্ণ নিয়ে বিতর্কের জেরে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন কংগ্রেসের বৈদেশিক শাখার চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদা। তাঁর সেই মন্তব্যকে আজ সামনে নিয়ে এসে মোদীর মন্তব্য, “কংগ্রেসের শাহজাদার গুরু আমেরিকাতে থাকেন। তিনি ভারতীয়দের গাত্রবর্ণ নিয়ে টিপ্পনি কেটেছেন। ভয়ংকর অভিযোগ এনেছেন। যার গায়ের রং ভগবান কৃষ্ণের মতো তাকে কংগ্রেস আফ্রিকান বলে মানে! এই কারণেই দ্রোপদী মুর্মুকে কংগ্রেস রাষ্ট্রপতি হিসাবে মানতে চায়নি। এটা অপমান নয়? কংগ্রেসের মানসিকতা কতটা ভয়ংকর তা শাহজাদার গুরু স্পষ্ট করে দিয়েছেন। তিনি এও বলেছেন রামনবমী উৎসব করা, রামমন্দির নির্মাণ ভারতীয়ত্বের বিরোধী। কংগ্রেসের মানসিকতা দেখুন! মোদী মন্দিরে গেলে সেটা ভারতবিরোধী? কংগ্রেস দেশের হিন্দু বিশ্বাস নষ্ট করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে।”
হিন্দুত্বের সঙ্গে জনজাতির আবেগকে সংযুক্ত করতে চেয়ে মোদীর বক্তব্য, “রাম বলেছেন দীন দুঃখীর পীড়াকে যে জানে সেই আমার ভক্ত। রাম জনজাতি সমাজকে, তাদের সংস্কৃতিকে সম্মান করেন। কংগ্রেস তাঁকে ভারতীয়ত্বের বিরোধী বলেছে।” কংগ্রেসের সঙ্গে ছোট দলগুলির সংযুক্ত হয়ে যাওয়া সংক্রান্ত এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের মন্তব্যের জেরে আজ মোদীর বক্তব্য, “গত ৪০ বছর ধরে এখানকার বিচক্ষণ এক নেতা বারামতীর ভোটের পর এতই চিন্তিত যে তিনি অনেকের সঙ্গে শলা পরামর্শ করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি ভাবছেন ৪ জুনের পর রাজনৈতিক জীবনে যদি টিঁকে থাকতে হয় তো ছোট ছোট দলগুলিকে কংগ্রেসের সঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy