Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সীমান্ত পেরিয়ে বাইক পাচার, ধৃত চক্রের তিন জন

সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামে তাঁদের আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত এক যুবা-দম্পতির। সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়মমতো নিয়মিত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করত। এক সময়ে তাঁরা মুখ চেনা হয়ে গিয়েছিলেন জওয়ানদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩৮
Share: Save:

সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামে তাঁদের আত্মীয়ের বাড়ি। সেখানে নিয়মিত যাতায়াত এক যুবা-দম্পতির। সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়মমতো নিয়মিত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করত। এক সময়ে তাঁরা মুখ চেনা হয়ে গিয়েছিলেন জওয়ানদের।

বছর খানেক আগে পুলিশ গ্রেফতার করে সেই যুবককে। জানা যায়, তিনি ওপারে মোটরবাইক পাচার করতেন। যে যুবতীকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতেন, তিনি এক যৌনকর্মী। পরে তাঁকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা এ ভাবেই বিএসএফ-এর চোখের সামনে দিয়ে কাজ করেছেন একটি বাইক পাচার চক্রের হয়ে।

ফেরার পথে তাঁদের সঙ্গে যে আর বাইক থাকত না, তা খেয়াল রাখা সম্ভব ছিল না জওয়ানদের। প্রতি বারই যে তাঁরা আলাদা বাইক নিয়ে যেতেন, তা-ও নজর এড়িয়ে গিয়েছিল। পুলিশ জানতে পারে, বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত ঘেঁষা ওই গ্রাম থেকে সে সব বাইক পাচার হয়ে যেত।

রবিবার মধ্যমগ্রামের মাঝেরগাঁও এলাকা থেকে তিন যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রথমে তাঁদের থেকে নিষিদ্ধ তরল মাদক উদ্ধার হয়। পরে জেরায় জানা যায়, শঙ্কর বিশ্বাস, আব্দুল রহিম সর্দার এবং সিদ্ধেশ্বর দাস বাইক পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের কাছ থেকে ন’টি চোরাই বাইকও উদ্ধার করেছে মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। তিন অভিযুক্তকেই সোমবার হাজির করা হয় বারাসত আদালতে।

সোমবার বারাসত পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, মধ্যমগ্রাম, নিউ ব্যারাকপুর ও বারাসত থানা এলাকায় গত এক মাসে ওই ন’টি বাইক চুরি গিয়েছিল। তিন থানা এলাকাতেই পুলিশের কাছে বাইক চুরির অভিযোগ ছিল। ধৃতদের বাড়ি বসিরহাট এলাকায়।

পুলিশ ও বিএসএফ সূত্রে খবর, বছর কয়েক আগে বনগাঁ, গাইঘাটা, পেট্রাপোল, বসিরহাট, স্বরূপনগরের হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে প্রচুর গরু পাচার হত। মাঝে তা অনেকটাই কমেছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গরু পাচার বেড়ে যাওয়ার ফলেই বাইক পাচারে ভাটা পড়েছিল। সম্প্রতি সীমান্ত এলাকায় পুলিশ ও বিএসএফের ধরপাকড় বেড়ে যাওয়ায় গরু পাচারে ভাটার টান। তাই ফের মাথাচাড়া দিয়েছে উঠেছে বাইক পাচার।

বিএসএফ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাইক পাচারের কাজ মূলত তিন ভাগে হয়। চোরেরা বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইক চুরি করে। তারা তা বিক্রি করে দালালদের কাছে। পাচারকারীদের হাত ঘুরে তা ওপারে চলে যায়। সীমান্ত এলাকায় যারা বাইক চুরি করে, তাদের কয়েক জনের সঙ্গে বাংলাদেশি এজেন্টের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে।

পাচারকারীদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, শুধু বাইক নয়, বাইকের যন্ত্রাংশ খুলেও তা পাচার করা হয়। বিএসএফ-এর চোখে ধুলো দিতে খেতের ফসল, ঝোপ-ঝাড় এবং মাটির নীচে তা পুঁতে রাখা হয়।

বিএসএফ জানিয়েছে, স্থানীয় চাষিদের অনেকেই পাচারকারীদের আড়কাঠি। বিএসএফ ও পুলিশের গতিবিধি দেখে তাঁরাই পাচারকারীদের খবর দেন। পরে পরিস্থিতি বুঝে বাইক পাচার হয়ে যায়। পুলিশ জানতে পেরেছে, বাইকের যন্ত্রাংশ খুলে প্লাস্টিকে মুড়ে বড় বাঁশ বা কলাগাছের সঙ্গে আটকে জলে ভাসিয়ে রাখা হয়। তা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। রাতে ওই কচুরিপানার আড়ালেই বাইকের যন্ত্রাংশ পাচার হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Smuggling BSF
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE