অনেকটা চৈত্র সেল বা সপ্তাহান্তে দোকানের বিশেষ ‘অফার’-এর মতো!
নিজেদের প্রকল্পকে জনপ্রিয় করে তুলতে এ বার বিপণনের নতুন মোড়কের আশ্রয় নিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। এ ক্ষেত্রে যাত্রার শুরুটা হল সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালের হাত ধরে।
ওষুধের পাশাপাশি হৃদ্রোগীদের অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির জন্য এসএসকেএম-এর ন্যায্যমূল্যের দোকানে স্টেন্ট বিক্রি শুরু হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগেই। বাজারের চেয়ে বেশ খানিকটা কম দামে স্টেন্ট কেনার সুযোগ থাকলেও খুব কম রোগীর পরিবারই সেখান থেকে স্টেন্ট কিনছিলেন। অভিযোগ, হাসপাতালে ফুলেফেঁপে ওঠা দালালচক্র তো বটেই, পাশাপাশি চিকিৎসকদের একটা অংশও রোগীর পরিবারকে বোঝাচ্ছিলেন যে ওই স্টেন্টের মান যথেষ্ট খারাপ। ওই স্টেন্ট বসানো এবং না বসানো কার্যত একই বিষয় বলে রোগীদের ভয়ও দেখাচ্ছিলেন তাঁরা। ফলে ন্যায্যমূল্যের দোকানে স্টেন্ট মজুত থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছিল না কোনও ভাবেই। মুখ থুবড়ে পড়ছিল সরকারের নতুন ওই প্রকল্প।
এই পরিস্থিতিতে স্টেন্টের বিক্রি বাড়াতে অভিনব একটি প্রক্রিয়া চালু করেছে এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, স্টেন্ট বসানোর জন্য আনুষঙ্গিক সর়ঞ্জাম কিনতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এসএসকেএম-এর ক্ষেত্রে যে সব রোগী ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে স্টেন্ট কিনবেন, তাঁদের ওই সরঞ্জাম কেনার কোনও খরচ লাগবে না। সবটাই হাসপাতাল থেকে নিখরচায় পাওয়া যাবে। হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের চালু করা ওই ব্যবস্থায় ইতিমধ্যেই ফল মিলতে শুরু করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশা, এ ভাবে চলতে থাকলে পরবর্তী সময়ে আরও ভাল ফল পাওয়া যাবে।
কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মতো সরকারি হাসপাতালও এই ধরনের বিপণনী চমক দিলে সেটা ভুল বার্তা বহন করবে না তো? কোনও ভাবে ন্যায্যমূল্যের দোকানদারদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠবে না তো?
প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের আসল উদ্দেশ্য হল সরকারি প্রকল্পের সুফল সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। নানা বাধার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। সেই কারণেই আমাদেরও বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবতে হল। এ নিয়ে আমরা কোনও আপস করতে চাই না।’’
হাসপাতালের কর্তারা জানিয়েছেন, বড় হাসপাতালে অনেক রোগী কোনও কিছু কিনলে তা বেশ খানিকটা কম দামে বিক্রি করা সম্ভব। সেটা ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের পক্ষেই সুবিধাজনক। কিন্তু বিক্রেতারা যদি দেখেন, দোকানে কোনও সরঞ্জাম মজুত রাখা সত্ত্বেও তা বিক্রি হচ্ছে না, তা হলে তাঁরাও সরঞ্জামটি দোকানে রাখার ব্যাপারে উৎসাহ হারাবেন। এর ফলে ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়বেন রোগীরাই।
এসএসকেএম-এর এই নজির কী ভাবে অন্য হাসপাতালগুলিতেও ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সে নিয়ে স্বাস্থ্য ভবনেও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। দফতরের এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘গরিবদের জন্য নিখরচায় পেসমেকারের পাশাপাশি নিখরচায় স্টেন্ট দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কিন্তু এমন রোগীরা, যাঁরা দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকরারী (বিপিএল) নন, কিন্তু আর্থিক সামর্থ্য কম, তাঁদের কী হবে? তাঁরা তো বিপিএল স্টেন্ট পাবেন না। তাঁদের চিকিৎসার খরচে সাশ্রয় ঘটানোর জন্য ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানে স্টেন্ট বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে। কোনও রকম প্রতিবন্ধকতাই এ ক্ষেত্রে বরদাস্ত করা হবে না।’’
শুধু স্টেন্ট নয়, হার্ট ভাল্ভও কম খরচে পাওয়া যাচ্ছে ন্যায্যমূল্যের দোকানে। বেসরকারি হাসপাতালে হার্ট ভাল্ভ প্রতিস্থাপনে খরচ পড়ে দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা। এমনকী, অন্য সরকারি হাসপাতালেও খরচটা এক লাখের কাছাকাছি। কিন্তু এসএসকেএম-এ খরচ পড়ছে ৬৫ হাজার টাকার মতো। সে ক্ষেত্রেও হার্ট ভাল্ভ-এর মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাসপাতালের ডাক্তারদের একটা অংশ। তাই ভাল্ভ বিক্রি হচ্ছে কম। ফলে সেই প্রকল্পও কতদিন চালু থাকবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy