Advertisement
০৪ মে ২০২৪

পুলিশে ফোন, দুই শিশু প্রাণ বাঁচাল বাবার

লালবাজার কন্ট্রোল রুমের ১০০ ডায়ালে ফোনটা যখন বাজল, মঙ্গলবার তখন সকাল ৮টা ৫০। এক প্রান্তে এক শিশুকন্যার উদ্বিগ্ন কণ্ঠ। অপর প্রান্তে কন্ট্রোল রুমের কনস্টেবল।

রাশি ও তালিম

রাশি ও তালিম

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:১৪
Share: Save:

লালবাজার কন্ট্রোল রুমের ১০০ ডায়ালে ফোনটা যখন বাজল, মঙ্গলবার তখন সকাল ৮টা ৫০। এক প্রান্তে এক শিশুকন্যার উদ্বিগ্ন কণ্ঠ। অপর প্রান্তে কন্ট্রোল রুমের কনস্টেবল।

— কাকু তোমরা শীগগির এসো, বাড়িতে খুব ঝামেলা হচ্ছে।

— কী ঝামেলা?

— মা-বাবার প্রচণ্ড ঝামেলা হচ্ছে। বাবা গায়ে আগুন দিতে যাচ্ছে।

— তোমাদের বাড়ির ঠিকানাটা আর যে ফোন থেকে কথা বলছ, তার নম্বরটা এখনই দাও।

দশ বছরের মেয়েটি স্কুলব্যাগ হাতড়ে বার করল এক জায়গায় লেখা ফোন নম্বর আর বাড়ির ঠিকানা। সাহায্য করল তার সাত বছরের ভাই।

দু’মিনিটের মধ্যে সিঁথি থানা থেকে ওই নম্বরে ফোন।

— ১৩৪জি, সাউথ সিঁথি রোড তো? আমরা এখনই আসছি। তোমরা শান্ত হও।

ভাই-বোন, তালিম আর রাশি খন্না আশ্বস্ত হলেও শান্ত হতে পারেনি। সম্ভবত ভাবতেও পারেনি, মায়ের মোবাইল থেকে যে নম্বরে তারা প্রায় রোজই খেলার ছলে ফোন করত, সেই ফোনই তাদের বাবাকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। কারণ পুলিশ বলছে, আর একটু দেরিতে ফোনটা এলে বোধহয় কিছুই করার থাকত না।

এ দিন রাশি আর তালিম যখন ১০০ ডায়ালে ফোন করছে, তার মধ্যেই ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে গায়ে আগুন দিয়েছেন তাদের বাবা রাজীব খন্না। চিৎকার করছেন। আর, কাঁদতে কাঁদতে বাইরে থেকে দরজায় ধাক্কা মারছেন শিশু দু’টির মা শিখা। চলে এসেছেন বাড়ির ভাড়াটেরাও। তাঁরাও নিরুপায়।

ইতিমধ্যেই পৌঁছে যায় পুলিশ। পুলিশকর্মীরা যতক্ষণে দরজা খুলে রাজীবকে উদ্ধার করেন, ততক্ষণে তাঁর শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। সে সময়ে স্বামীর কাছে যেতে গিয়ে শিখার পোশাকেরও কিছুটা পুড়ে যায়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী, ত্রিশোর্ধ্ব রাজীব এখন আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি।

পুলিশ জেনেছে, কিছু দিন ধরেই শিখার বাপের বাড়ির সঙ্গে রাজীবের বাবা-মায়ের অশান্তি চলছিল। এ নিয়ে রাজীব ও শিখার বচসাও হতো। পুলিশের অনুমান, এর জেরেই রাজীব স্ত্রী ও দুই সন্তান-সহ আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেন। তাঁর আরও ক্ষতি হতে পারত, যদি না ওই দুই শিশু বুদ্ধি করে ১০০ ডায়ালে ফোন করত।

ওইটুকু দু’টো ছেলেমেয়ে ১০০ ডায়ালের উপযোগিতা জানল কী করে? রাশি ও তালিম জানায়, সিনেমায় তারা দেখেছে, বিপদে পড়লে ওই নম্বরে পুলিশকে ফোন করতে হয়। তাই, মোবাইল পেলেই এক বার ভাইবোন খেলার ছলে ওই নম্বরে ফোন করত। আর, ও পারে ‘হ্যালো’ বলে সাড়া দেওয়া মাত্রই ফোন রেখে দিয়ে হাসত খিলখিলিয়ে।

তবে, এ দিনের বিপদটা বুঝেছিল ভাই-বোন। তাই উদ্বিগ্ন হয়ে রাশি যখন মোবাইলের বোতাম টিপছে, তালিম বলেছিল, ‘‘দিদি, আজ কিন্তু কথা বলতেই হবে। না হলে বাবাকে বাঁচানো যাবে না।’’ মিহি গলায় শিশুকন্যার আর্তি শোনার সঙ্গে সঙ্গে ওসি কন্ট্রোলকে সতর্ক করেন লালবাজারের ওই কনস্টেবল। তার পরেই ফোন করেন সিঁথি থানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kolkata kids father MostReadStories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE