প্রতীকী চিত্র।
দিন কয়েক আগে বারুইপুর থানার মল্লিকপুর স্টেশন চত্বর থেকে গ্রেফতার হয়েছিল বেনিয়াপুকুরের তিলজলা রোডের ‘বাবলি-বান্টি’, শেখ খালেক এবং ফরিদা বিবি।
এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে ক্রেতা সাজিয়ে সেখানে ফাঁদ পেতেছিলেন স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের অফিসারেরা। এ বার ধৃতদের জেরা করে জানা গেল ঠিক কী ভাবে তারা অপারেশন চালাত? যা জেনে তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা।
তদন্তকারীরা জানান, ওদের হাতে অস্ত্র বলতে ছিল, খালেকের পকেটে রাখা একটি ছোট ক্ষুর আর তার স্ত্রীর সাহায্য। এর জোরেই দিনে ১৫-২০টি মোবাইল সাফ করাটা জলভাত ছিল খালেকের। কী ভাবে চলত সেই অপারেশন? ভিড় বাসে ওঠার পরে শিকার খুঁজত খালেক। চোখে চোখে কথা হয়ে যেত স্বামী-স্ত্রীর। এর পরেই স্বামীর সুবিধা করে দিতে শিকারের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ত ফরিদা। ঠেলাঠেলি করে যাত্রীর সঙ্গে বচসা জুড়ে দিত সে। সেই ফাঁকেই ব্যাগ বা পকেটে ক্ষুর চালিয়ে মোবাইল, টাকা সাফ করত খালেক। কাজ হতেই চোখের ইশারায় স্ত্রীকে জানিয়ে দিত। আলাদা ভাবে বাস ও ট্রেন থেকে নেমে পড়ত ওরা।
তদন্তকারীদের কথায়, ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের কসবা, রুবি মোড়, সায়েন্স সিটি, তিলজলা এলাকায় বিভিন্ন বাসে প্রায় বছর তিনেক ধরে মোবাইল চুরি করছিল এই দম্পতি। তা ছাড়া শিয়ালদহ থেকে যাদবপুরের ট্রেনেও একই ভাবে অপারেশন চালাত তারা। ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে, চোরাই মোবাইল খিদিরপুর ও চাঁদনি এলাকার বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করে দিত দম্পতি। তদন্তে উঠে আসছে, চোরাই মোবাইল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলে আইএমইআই নম্বর পর্যন্ত বদলে দিত। ধৃতেরা প্রায় অর্ধেক দামে ওই সব মোবাইল ব্যবসায়ীদের বিক্রি করত।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আতঙ্কের বিষয় এই যে, ধৃতেরা চুরি করা মোবাইলগুলির আইএমইআই নম্বর পর্যন্ত বদলে দিতে সক্ষম ছিল। সেটা কী ভাবে সম্ভব হত, তাই এখন ভাবাচ্ছে তদন্তকারীদের। ধৃতদের আরও জেরা করে ‘গোপন’ সেই পদ্ধতিই জানার চেষ্টা চলছে। জেরায় উঠে এসেছে আরও তথ্য, বছর ছয়েক আগে একটি কেপমারি দলে ছিল এই দম্পতি। চুরির মাল বিক্রি করে অর্ধেক টাকা চক্রের মাথাকে দিত তারা। পার্ক সার্কাসের এক ডেরায় হাত সাফাইয়ের হাতেখড়ি দু’জনের। কাজ করতে করতেই দু’জনের বন্ধুত্ব। বছর চারেক আগে বিয়ে করে তারা। বিয়ের পর থেকে স্বাধীন ভাবে এই কেপমারের ব্যবসাও শুরু করে।
এক তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন, চোরাই মোবাইল বিক্রি করে দু’জনে দিনে প্রায় ৫০-৬০ হাজার টাকা আয় করত। ধৃতদের জেরা করে চাঁদনি ও খিদিরপুরের ব্যবসায়ীদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। সম্প্রতি ধরা পড়া এক মোবাইল চোরের থেকে খালেক ও ফরিদার হদিস মেলে। লাখ খানেক টাকার মোবাইল কেনা হবে বলে ওই চোরকে দিয়ে খালককে ফোন করে ফাঁদ পাতা হয়। এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে ক্রেতা সাজানো হয়। নিয়মিত খালেক ও ফরিদার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ রাখতেন তিনি।
সেই টোপেই পা দিয়ে মোবাইল নিয়ে দিন কয়েক আগে মল্লিকপুর স্টেশন চত্বরে হাজির হয় খালেক ও ফরিদা। তখনই হাতেনাতে ধরা হয়। উদ্ধার হয় ২৫টি মোবাইল। ধৃতদের থেকে আইফোন-সহ প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টাকার মোবাইল মিলেছে বলে জানান তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy