Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বসন্তের শহরে অকাল বর্ষা

বুধবার রাত থেকে শহর জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে দফায় দফায়। পুরসভা সূত্রে খবর, বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি জলমগ্ন হয় মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে শুরু করে আমহার্স্ট স্ট্রিট, গার্ডেনরিচের কার্ল মার্কস সরণি, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বেহালার বেশ কয়েকটি এলাকা, খিদিরপুর, থিয়েটার রোডের মতো বেশ কিছু জায়গায়।

 পানি-পথ: ভিআইপি রোডে জমা জলে বিকল হয়ে গিয়েছে গাড়ি। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

পানি-পথ: ভিআইপি রোডে জমা জলে বিকল হয়ে গিয়েছে গাড়ি। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

সময়টা বসন্তকাল না বর্ষাকাল? বৃহস্পতিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে গুলিয়ে ফেললেন অনেক শহরবাসী। বর্ষাকালের মতোই রাস্তা জলমগ্ন। কোনও কোনও রাস্তায় আবার এক হাঁটু জল। বৃষ্টির মধ্যে বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে নাজেহাল অভিভাবকেরা। অফিসযাত্রীরাও বৃষ্টির মধ্যে বেরিয়ে নাকাল হচ্ছেন। রাস্তায় জল জমার সুযোগে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে রিকশা-অটোর ভাড়া। বর্ষাকালে টানা বৃষ্টির জেরে শহরে যে সব ছবি ফুটে ওঠে, হুবহু তেমনটাই যেন দেখা যাচ্ছে ভরা বসন্তে।

বুধবার রাত থেকে শহর জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে দফায় দফায়। পুরসভা সূত্রে খবর, বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি জলমগ্ন হয় মুক্তারামবাবু স্ট্রিট থেকে শুরু করে আমহার্স্ট স্ট্রিট, গার্ডেনরিচের কার্ল মার্কস সরণি, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, বেহালার বেশ কয়েকটি এলাকা, খিদিরপুর, থিয়েটার রোডের মতো বেশ কিছু জায়গায়। পুরসভা সূত্রের খবর, সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে উল্টোডাঙা এলাকায়। এখানে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া দত্তবাগানে হয়েছে ৭০ মিলিমিটার, পামার বাজারে ৪২ মিলিমিটার, এবং ঠনঠনিয়ায় ৪৭ মিলিমিটার। বৃষ্টির সঙ্গে গঙ্গার জোয়ারের জলেও গঙ্গার পাড় সংলগ্ন এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়।

টানা বৃষ্টিতে জল জমায় সকাল থেকেই ভোগান্তির ছবি দেখা যায় শহর জুড়ে। বৃহস্পতিবার ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা- সহ দ্বিতীয় ভাষার পরীক্ষা। জলমগ্ন মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের উপরে একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়ে। পরীক্ষাকেন্দ্রের ভিতরে ব্যাগ নেওয়া নিষেধ। সেখানে অনেক পরীক্ষার্থীকে দেখা গেল রাস্তাতে বৃষ্টির হাত থেকে নিজেকে কোনও রকমে বাঁচিয়ে শেষ বারের মতো বইয়ে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। পুরসভার আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কোনও কোনও এলাকায় পাঁচ ঘণ্টা, কোথাও চার ঘণ্টা, কোথাও আবার তিন ঘণ্টা বৃষ্টিতে জল জমে থেকেছে। বেলা বাড়তে ধীরে ধীরে রাস্তাগুলি থেকে জল নামতে শুরু করে।

স্কুলে পৌঁছতে রিকশাই ভরসা, মুক্তারামবাবু স্ট্রিটে। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ।

কলকাতার মতোই বুধবার রাতভর চলা ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে বিধাননগর পুরনিগম, দমদমের বেশ কিছু জায়গা। খোদ সল্টলেক বা সেক্টর ফাইভে সে ভাবে জল না জমলেও টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে বাগুইআটি, হাতিয়াড়া-সহ বিধাননগর পুরসভার রাজারহাট-গোপালপুর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায়। হাতিয়াড়ার অরুণাচল, সুভাষপল্লি, শ্রীমাপল্লি, পূর্বাচল কো-অপারেটিভ এলাকা, জ্যাংড়ার সুকান্তপল্লি এলাকায় জল জমেছে। জল জমে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত রবীন্দ্রপল্লি এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বিদ্যাসাগর পল্লি এলাকায়। জগৎপুর বাজারেও জল দাঁড়িয়ে যায় দীর্ঘ ক্ষণ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরসভার পরিকাঠামো বাড়লেও জল জমার সমস্যা মেটেনি। বাসিন্দাদের প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিকজাত সামগ্রী যত্রতত্র ফেলা নিয়ে যেমন সচেতনতার অভাব রয়েছে, সে রকমই রয়েছে নিকাশি পরিকাঠামোর সমস্যা। নিকাশি নালার পরিকাঠামোর উন্নয়ন সে ভাবে না করেই যত্রতত্র বহুতল গড়ে উঠেছে। মেট্রোর কাজ চলায় ড্রেনেজ লাইন বিপর্যস্ত হওয়ার মতো কারণও রয়েছে। কৈখালি এলাকায় ভিআইপি রোডের সার্ভিস রোডে হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যায়। জলমগ্ন রাস্তার দু’ধারে আবাসনগুলির বহু বাসিন্দা দুর্ভোগে পড়েন।

ওই জলমগ্ন রাস্তায় বেশ কিছু গাড়িও খারাপ হয়ে যেতে দেখা যায়। তবে বিধাননগর পুরসভার দাবি, আগের চেয়ে দ্রুত জল সরানো সম্ভব হয়েছে। বিধাননগর পুরসভার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিভিন্ন এলাকায় জল নামানোর জন্য ৪২টি পাম্প চালিয়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা হয়েছে।’’

বিধাননগরের মেয়র পারিষদ (নিকাশি) দেবাশিস জানা বলেন, ‘‘একটি বড় অংশে জল জমেনি। যে সব জায়গায় জল জমেছে, সেখানে পাম্প বসিয়ে সরানোর কাজ চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water Kolkata Rain KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE