Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহ, ‘আত্মঘাতী’ বধূ

পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শিপ্রা দে দলুই (৩৮)।

শিপ্রা দে দলুই

শিপ্রা দে দলুই

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

অভিযোগ, স্বামীর সঙ্গে এক আত্মীয়ার সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরে সে কথা জানতে পেরে শ্বশুরবাড়ির বদলে স্বামীকে নিয়ে মা-বাবার কাছে এসেই থাকতে শুরু করেন তরুণী। কিন্তু এ বার পুজোর আগে থেকে ফের মানসিক অত্যাচার শুরু হয়েছিল। স্ত্রীকে ফেলে স্বামী ফিরে যান নিজের বাড়ি। অভিযোগ, স্বামী জোর করে বিবাহ-বিচ্ছেদের কাগজেও সই করিয়ে নিয়েছিলেন। সোমবার রাতে ফের স্বামীকে ফিরিয়ে আনাতে তরুণী হাজির হয়েছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু সেখানে কেউ দরজা না খোলায় তরুণী ফিরে যান নিজের বাড়িতে। মঙ্গলবার সেই তরুণী বধূরই অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার হল বাড়ির ঘর থেকে।

পরে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শিপ্রা দে দলুই (৩৮)। ঘটনাটি ঘটেছে হরিদেবপুর থানা এলাকার করুণাময়ী ঘাট রোডে। ঘটনার পরে তরুণীর বাড়ির লোকজন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তবে শিপ্রার স্বামী, ওই আত্মীয়া তাঁর স্বামী ও মেয়ে-সহ পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশকে মৃতার পরিবার জানিয়েছে, এ দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পাড়ারই এক মহিলা শিপ্রার বাড়ি থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখেন। বাড়ির সামনে গিয়ে তিনি দেখেন ভিতর থেকে আগুনের হল্কা আসছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি শিপ্রার দাদাদের ডেকে তোলেন। চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে পড়শিরা এসে দেখেন ভিতর থেকে দরজা এবং জানলা বন্ধ। ডাকাডাকি করেও শিপ্রার সাড়া মিলছিল না। বাইরে থেকে দরজা ধাক্কা মেরে খুলে ফেলেই তাঁরা দেখেন ঘরের মেঝেতে পড়ে দাউদাউ করে জ্বলছেন শিপ্রা। শরীর পুড়ে কালো হয়ে গিয়েছে। পড়শি এবং বাড়ির লোকজন জল দিয়ে আগুন নেভাতে চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। ঘরের আসবাবপত্রে তত ক্ষণে আগুন লেগে গিয়েছিল। ওই অবস্থায় সবাই থানা এবং দমকলে খবর দেন। পরে আগুন নিভিয়ে যখন শিপ্রাকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যান তত ক্ষণে তাঁর শরীরে কোনও সাড় ছিল না বলেই পরিবারের লোকজনের দাবি। হাসপাতালে শিপ্রাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। মৃতার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, সোমবার রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে অপমানিত হয়ে ফেরত আসার সময়েই শিপ্রা বলেছিলেন আত্মহত্যা করবেন। রাত পর্যন্ত সে নিয়ে পড়শিরা তাঁকে বুঝিয়ে ঘরে ফেরত পাঠান। কিন্তু ভোরবেলা যে সত্যিই এ রকম কিছু ঘটবে, তা কেউ ভাবতে পারেননি।

২০০৩ সালে দেখাশোনা করে সোদপুর মোল্লাপাড়ার বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় শিপ্রার। কিন্তু বিয়ের এক মাসের মধ্যেই শিপ্রা নিজের বাড়িতে ফেরত আসেন। অভিযোগ, বিয়ের পরে শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে শিপ্রা জানতে পারেন ওই আত্মীয়ার সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক রয়েছে আর সেটা শ্বশুরবাড়ির সকলেই জানেন। ফলে বাড়ির জায়গাতেই একটি ঘর তৈরি করে স্বামীর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। কিন্তু পুজোর আগে থেকে ফের স্বামীর পরিবর্তন শুরু হয়। তিনি ফের ওই আত্মীয়ার কাছে যেতে শুরু করেন। তারই মধ্যে শুরু হয় মানসিক নির্যাতন। অভিযোগ, সেই সময়েই শিপ্রার নামে কেনা জমি জোর করে লিখিয়ে নেন তাঁর স্বামী। এমনকি, বারবার বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকাও ধার করেন তিনি। ফলে বাজারে তাঁর দেনা বেড়ে গিয়েছিল। তার জেরে আয়ার কাজ ধরতে বাধ্য হন শিপ্রা। কিন্তু তাতেও দেনার পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারেননি তিনি। মৃতার বাড়ির লোকজনের অভিযোগ, স্বামীর ঋণ এবং তার পরে জোর করে বিবাহ-বিচ্ছেদের কাগজে সই করানোর জন্যই এই ঘটনা ঘটল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Haridevpur Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE