Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মামলা জিতে গেলেও লড়াই চলছে তরুণীর

কলকাতার শরৎ বসু রোডের বাসিন্দা তরুণী জানাচ্ছেন, ২০১১ সালে বিয়ের দিন থেকে শুরু হওয়া তাঁর লড়াই এখনও শেষ হয়নি। অভিযোগ, দিল্লির প্রভাবশালী শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে থাকতে দেওয়া হয়নি। বিয়ের দু’বছরের মধ্যেই জোর করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৪৩
Share: Save:

শ্বশুরবাড়ির সকলকে বিয়েতে পণ হিসেবে সোনার চেন দিতে হবে। দিল্লির পাঁচতারা হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠান এবং ঘর সাজানোর আসবাবপত্রের খরচ আলাদা।

কলকাতার শরৎ বসু রোডের বাসিন্দা তরুণী জানাচ্ছেন, ২০১১ সালে বিয়ের দিন থেকে শুরু হওয়া তাঁর লড়াই এখনও শেষ হয়নি। অভিযোগ, দিল্লির প্রভাবশালী শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে থাকতে দেওয়া হয়নি। বিয়ের দু’বছরের মধ্যেই জোর করে বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, তাঁর অজান্তেই দিল্লির আদালতে বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা দায়ের করেন স্বামী।

২০১৫ সাল থেকে তিন বছর ধরে সেই মামলা লড়ে জিতে গিয়েছেন ওই তরুণী। গত ৬ ডিসেম্বর তাঁর পক্ষে রায় দিয়ে আদালত স্বামীর দায়ের করা বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা খারিজ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে খোরপোষ দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই তরুণীর গুরুত্বপূর্ণ সব নথি এবং ‘স্ত্রী-ধন’ আটকে রাখার জন্য স্বামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছেন আলিপুরের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। তরুণীর অবশ্য অভিযোগ, আদালতের নির্দেশ হাতে পাওয়ার পরেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। উল্টে, ওই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি স্বামী ফেরত না দেওয়ায় কোথাও চাকরির আবেদনও করতে পারছেন না তিনি। তরুণীর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘যা বলার, আমার আইনজীবী বলবেন।’’ তার পরে ফোন কেটে দেন। তাঁর আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তা কী, জানতে চেয়েও উত্তর মেলেনি।

২০১১ সালে সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন দেখে কেন্দ্রীয় সরকারের এক প্রাক্তন আমলার দিল্লি-নিবাসী ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ওই তরুণীর। তরুণীর দাবি, বিয়ের পরে প্রথম এক বছরে চার বার বিদেশ ভ্রমণ করেছিলেন তাঁরা। সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব ছিল না। কিন্তু এক বছর পর থেকেই তিনি ঠিক মানিয়ে নিতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে শ্বশুরবাড়ির তরফে। ওই সময়ে আর্থিক বিষয় নিয়ে তরুণীর বাবা-মাকে ডেকে হেনস্থা করা হয় বলেও অভিযোগ। এর পরে তরুণী জানতে পারেন, তাঁর স্বামীর মৃগী রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মানিয়ে নিয়ে চলার চেষ্টা করছিলাম। ২০১৩ সালে শ্বশুরবাড়ি থেকে আমাকে বলা হয়, কয়েক দিনের জন্য বাপের বাড়ি ঘুরে আসতে। কিন্তু বেরিয়ে আসার পরে আর কিছুতেই আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল না। এর পরে যত বারই গিয়েছি, শ্বশুরবাড়ির লোকজন ঢুকতে দেননি।’’

কলকাতায় মায়ের কাছে থাকাকালীনই তরুণী জানতে পারেন, ২০১৪ সালের এপ্রিলে স্বামী বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা করেছেন দিল্লির আদালতে। তাঁর পক্ষে দিল্লি গিয়ে মামলা লড়া সম্ভব নয় জানিয়ে তরুণী সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। সেই আবেদনের ভিত্তিতে মামলাটি কলকাতার আলিপুরে পাঠানো হয় ২০১৫ সালে। সেই থেকে নিজেই মামলা লড়ছেন তিনি। গত মার্চের শেষে ভবানীপুর থানায় ‘স্ত্রী-ধন’ এবং তাঁর কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি ফেরত না দেওয়ার জন্য স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। সেই অভিযোগেও মামলা দায়ের হয় আলিপুর আদালতে। এর মধ্যেই তরুণীর স্বামী দিল্লি কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তী জামিন নিয়েছিলেন। তবে আলিপুর আদালত গত ১ ডিসেম্বর সেই অন্তর্বর্তী জামিন খারিজ করে তাঁকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছে।

মঙ্গলবার ওই তরুণী বলেন, ‘‘আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রভাবশালী। তাঁরা অনেক কিছু করতে পারেন। ওঁদের অনেক টাকা, দেশ ছেড়েও চলে যেতে পারেন।

রায় হয়ে যাওয়ার পরেও গত দশ দিনে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’ তরুণীর আরও বক্তব্য, ‘‘খোরপোষের টাকা পাব কি না জানি না। অন্তত আমার কাজের নথিগুলো ফেরত পেলে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারি।’’

কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ) মিরাজ খালিদের সঙ্গেও দেখা করে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন বলে তরুণীর দাবি। মিরাজ অবশ্য বলেন, ‘‘থানা নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেবে। আইন মেনে যা করার তা-ই করা হবে।’’ যদিও রায়ের দশ দিন পরেও পদক্ষেপ না করার অভিযোগ প্রসঙ্গে ডিসি-র কোনও উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Court Dowry Compensation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE