Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Domestic Violence

থানায় অভিযোগ করেও স্বামীর গ্রেফতারিতে বাধা

বিয়ের পর থেকেই ওই তরুণীকে নানা অছিলায় মারধর করত তাঁর স্বামী।

—প্রতীকী ছবি।

—প্রতীকী ছবি।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:২৪
Share: Save:

স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার বাড়িতে চলে এসেছিলেন এক তরুণী। অভিযোগ, সেই বাড়িতে এসেও স্ত্রীকে মারধর করতেন স্বামী। পরিস্থিতি সহ্যের বাইরে চলে যাওয়ায় গলায় কাপড়ের ফাঁস লাগিয়ে শুক্রবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তরুণী। কোনও মতে তাঁকে রক্ষা করে দেগঙ্গা থানায় নির্যাতনের অভিযোগ জানায় তরুণীর পরিবার। যার ভিত্তিতে সে দিন রাতেই পুলিশ অভিযুক্তকে ধরতে যায়। কিন্তু তখন তরুণী ও তাঁর পরিজনেরাই উল্টে বেঁকে বসেন। শনিবার তাঁরা দাবি করেন, অভিযুক্ত হাতে-পায়ে ধরে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছে। তাই তরুণী ও তাঁর সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই অভিযুক্তকে আর একটি সুযোগ দিতে চান তাঁরা।

তরুণীর পরিজনেরা জানিয়েছেন, নির্যাতনের অভিযোগ তুলে নিতে চান তাঁরা। কিন্তু পুলিশের বক্তব্য, এক বার এমন অভিযোগ দায়ের করার পরে তা তুলে নেওয়া যায় না। এ হেন পরিস্থিতিতে আতান্তরে পড়েছে পুলিশও। পরবর্তীকালে ওই অভিযুক্ত যদি আবার একই রকম অত্যাচার শুরু করে, তা হলে কী হবে? তরুণী ও তাঁর পরিবারকে পুলিশ বারবার এ কথা বোঝানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের।

এ দিন তরুণীর দাদা বলেন, ‘‘আমার ভগ্নীপতি বোনের আর আমাদের হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে কান্নাকাটি করছে। ওদের ছোট্ট একটা মেয়েও আছে। ও কথা দিয়েছে, ভবিষ্যতে আর বোনকে মারধর বা অশান্তি করবে না। সমস্ত দিক ভেবেই আমরা পুলিশের কাছে আবেদন করেছি, যাতে ওকে গ্রেফতার করা না হয়।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিয়ের পর থেকেই ওই তরুণীকে নানা অছিলায় মারধর করত তাঁর স্বামী। পুলিশের কাছে অভিযোগে শুক্রবার তেমনটাই জানিয়েছিলেন তরুণী। বছর সাতেক আগে নৈহাটির বাসিন্দা ওই যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় অভিযোগকারী তরুণীর। বিয়ের পর থেকে কোনও কাজকর্ম করত না ওই যুবক। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে কয়েক বছর আগেই মেয়েকে নিয়ে মা-বাবার বাড়িতে চলে আসেন ওই তরুণী। তাঁর পিছন পিছন চলে আসে স্বামীও। কিন্তু সেখানেও স্ত্রীর উপরে অত্যাচার চালাতে থাকে সে।

উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার অতুল বিশ্বনাথন জানান, এই ধরনের ঘটনার ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীর পরিবার সাধারণত তাঁর পাশেই দাঁড়ায়। বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে পুলিশকেও সাবধানে এগোতে হয়। তবে এই ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

‘ইন্ডিয়ান সাইকায়াট্রিক সোসাইটি’র সহ-সভাপতি গৌতম সাহা বলেন, ‘‘আসলে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সংসার কী ভাবে চলবে, লোকে কী বলবে, এ সব ভাবনা এখনও খুব বেশি মাত্রায় কাজ করে। বিয়ে দেওয়ার পরে মেয়েকে জামাই ও শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি বলে মনে করেন অনেক মা-বাবাও। অনেক মেয়েও আবার বলেন, ‘আমার স্বামী আমাকে মারছে, তাতে তোমার কী’?’’ গৌতমবাবুর সংযোজন, ‘‘তবে অনেক পরিবর্তন হচ্ছে, সমাজও এগোচ্ছে। অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে প্রতিবাদও হচ্ছে। এটাই আশার কথা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Domestic Violence Suicide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE