Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্ধুর বোনকে হেনস্থার প্রতিবাদ, খুন যুবককে

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দনের খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর বোন বিয়ের সূত্রে ওড়িশায় থাকেন। অভিযোগ, সেই তরুণীকেই নানা ভাবে অশালীন প্রস্তাব পাঠিয়ে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করছিল বুল্টি।

অকুস্থল: এখানেই কুপিয়ে মারা হয় চন্দন বেরাকে (ইনসেটে)। সোমবার, হাওড়ার ধাড়সায়। নিজস্ব চিত্র

অকুস্থল: এখানেই কুপিয়ে মারা হয় চন্দন বেরাকে (ইনসেটে)। সোমবার, হাওড়ার ধাড়সায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

বন্ধুর বিবাহিতা বোনকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। আর সেই ‘অপরাধেই’ ওই যুবককে নৃশংস ভাবে খুন করার অভিযোগ উঠেছে আর এক যুবকের বিরুদ্ধে। রবিবার গভীর রাতে এই ঘটনা ঘটেছে হাওড়ার জগাছা থানার অন্তর্গত ধাড়সার সাতাশি এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত যুবকের নাম চন্দন বেরা (২৫)। আগে তিনি একটি কারখানায় কাজ করতেন। বর্তমানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাড়িতেই ছিলেন। যার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ উঠেছে, সেই সুরজিৎ কর্মকার ওরফে বুল্টি চন্দনেরই বন্ধু এবং একই পাড়ার বাসিন্দা। বুল্টির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পরেই সে চম্পট দিয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চন্দনের খুব ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর বোন বিয়ের সূত্রে ওড়িশায় থাকেন। অভিযোগ, সেই তরুণীকেই নানা ভাবে অশালীন প্রস্তাব পাঠিয়ে নিয়মিত উত্ত্যক্ত করছিল বুল্টি। রবিবার রাতে বুল্টিকে পাড়ায় দেখতে পেয়ে তাকে এ নিয়ে ভর্ৎসনা করেন চন্দন। দু’জনের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুরু হয়। শেষে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যস্থতায় তখনকার মতো বিষয়টি মিটে যায়। এলাকায় ভাল মানুষ বলে পরিচিত চন্দন ঝামেলা এড়াতে বাড়ি চলে যান। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গভীর রাতে তাঁকে বারবার ফোন করে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য ডাকতে থাকে বুল্টি। প্রথমে যেতে না চাইলেও বুল্টি বারবার ফোন করায় শেষে কিছুটা বিরক্ত হয়েই তার সঙ্গে দেখা করতে যান চন্দন। এর পরে গভীর রাতে চন্দনকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখা যায়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চন্দনের দুই ঊরুসন্ধি এবং দুই গোড়ালিতে ধারালো অস্ত্রের গভীর ক্ষত ছিল। পুলিশের ধারণা, আক্রোশের বশেই ওই যুবককে ওই ভাবে কুপিয়ে মারা হয়েছে। পরদিন সকালেই চন্দনের পরিবার বুল্টির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করে।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি ধারালো ছুরি ও একটি হেডফোন পাওয়া গিয়েছে। হেডফোনটি রাস্তার পাশে কিছুটা দূরে ঝোপের মধ্যে পড়ে ছিল। পুলিশের ধারণা, খুনিদের সঙ্গে চন্দনের বেশ কিছু ক্ষণ ধস্তাধস্তি হয়েছিল।

সোমবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকা থমথমে। মোড়ে মোড়ে জটলা। রাস্তার এক জায়গায় চাপচাপ রক্ত। সেখান থেকে রক্তের দাগ চলে গিয়েছে রাস্তার পাশে বাঁশের তৈরি একটি মাচা পর্যন্ত। তদন্তকারীদের ধারণা, হামলাকারীরা তাঁর গোড়ালি ও ঊরুর শিরা কাটার পরেও ওই যুবক সেখান থেকে পালানোর একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মাচার সামনেই বসে পড়েন তিনি।

সেখানেই তাঁকে প্রথম দেখতে পান পাশের বাড়ির এক মহিলা ও তাঁর স্বামী। তাঁরাই স্থানীয় একটি ক্লাবে খবর দিলে ওই ক্লাবের লোকজন চন্দনকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান।

নিহত যুবকের মা ঊর্মিলাদেবী জানান, রাতে বাড়ি ফিরে খেতে বসেছিলেন চন্দন। তখনই বারবার ফোন আসতে থাকে বুল্টির। এর পরে খেয়েই বেরিয়ে যান চন্দন। সারা রাত ছেলের অপেক্ষায় বসে ছিলেন তিনি। পরদিন সকালে জানতে পারেন, ছেলে খুন হয়ে গিয়েছেন।

বাবা রঘুনাথ বেরা বলেন, ‘‘সুঠাম চেহারার চন্দনকে কারও একার পক্ষে খুন করা অসম্ভব। এই ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা পুলিশের কাছে ঠিকঠাক তদন্তের দাবি জানিয়েছি।’’ প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশও মনে করছে, এই খুনে বুল্টির সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। তবে বুল্টিকে ধরতে পারলেই সবটা জানা যাবে বলে পুলিশের ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Sexual Harassment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE