সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লেকটাউন মোড়ে ট্রাফিক আইন ভাঙা এবং এক কনস্টেবলকে চড় মারার অভিযোগের পর কেটে গিয়েছে এক মাসেরও বেশি সময়। এখনও পর্যন্ত অভিযোগকারী সেই কনস্টেবলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়া তদন্ত এগোয়নি। তদন্তকারী অফিসারেরা জানাচ্ছেন, প্রত্যক্ষদর্শী না মেলায় তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে অসুবিধা হচ্ছে। অবশ্য তাঁরা জানাচ্ছেন, এই তদন্ত এক দিনেই শেষ হয়ে যেত, যদি লেকটাউন মোড়ে লাগানো থাকত সিসিটিভি। সিসিটিভি-র ফুটেজ দেখেই অভিযোগের সত্যতা বিচার করা যেত। কিন্তু ওই মোড়ে সিসিটিভি না থাকায় তদন্ত এখন বিশ বাঁও জলে।
শুধু এই চড়-কাণ্ডই নয়, বিধাননগর কমিশনারেট এলাকায় এই রকম বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলির তদন্ত থমকে গিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মোড়ে সিসিটিভি না থাকায়। নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনারেটের বিস্তীর্ণ এলাকায় সিসিটিভির প্রয়োজনীয়তার কথা পুলিশকর্তারা স্বীকার করে নিলেও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এখনও লাগানো হয় নি সিসিটিভি। কিছু দিন আগে ডানকুনি টোলপ্লাজায় সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান আবু আয়েশ চৌধুরী টোল না দিয়ে চলে যেতে গেলে তাঁকে আটকান টোলপ্লাজার এক কর্মী। কেন তাঁকে টোলপ্লাজায় আটকানো হয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে ওই কর্মীকে আবু আয়েশ চৌধুরী জুতো দিয়ে মারেন বলে অভিযোগ ওঠে। পুরো বিষয়টি ধরা পড়ে যায় সিসিটিভি ফুটেজে। বিধাননগর কমিশনারেটের বাসিন্দাদের মতে, লেকটাউন মোড়ে সিসিটিভি বসানো ছিল না বলেই চড়-কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত পার পেয়ে গেলেন। তদন্তই আর ঠিক মতো এগোলো না।
অভিযোগ, ‘দ্রুত সব জায়গায় সিসিটিভি বসানো হবে’, এই কথা বছরখানেক ধরে বলে আসছেন বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা। এমনকী চলতি বছরের বর্ষবরণের উৎসবে ঠিক হয় অন্তত ভি আই পি রোড ও নিউ টাউন মেন রোডের কয়েকটি জায়গায় দ্রুততার সঙ্গে সিসিটিভি বসানো হবে। প্রশ্ন ওঠে, কলকাতায় যেখানে পার্ক স্ট্রীট বা গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে সিসিটিভি বসানো হয়েছে সেখানে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢোকার মূল দুই রাস্তায় কেন সিসিটিভি থাকবে না?
আবার অভিযোগ উঠেছে, সল্টলেকের যে মোড়গুলিতে সিসিটিভি রয়েছে সেই জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা সব সময় ঠিক মতো কাজ করছে না। বিধাননগর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “সল্টলেকের সব ব্লকে সিসিটিভি নেই। আর যে রাস্তাতে আছে সেই সব সিসিটিভির লেন্স এতটাই খারাপ যে অনেক সময়েই ঠিক মতো ছবি ধরতে পারে না। ছবি ঝাপসা হয়ে যায়। ফলে সিসিটিভি লাগানো, আর না লাগানো সমান হয়ে যাচ্ছে। কমিশনারেটের কর্তাদের আমরা বার বার অনুরোধ করেছি যেন দ্রুত উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন লেন্স সিসিটিভিতে লাগানো হয়।” বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি দেবাশিস ধর জানাচ্ছেন, “নতুন পুলিশ কমিশনার এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সিসিটিভি নেই ও কোন মোড়ে সিসিটিভি থাকা সত্ত্বেও ঠিক মত কাজ করছে না, তা পর্যবেক্ষণ করে দেখা হচ্ছে।”
এডিসিপি দেবাশিস ধর আরও জানিয়েছেন, হোটেল বা ব্যাঙ্কগুলিতে সিসিটিভি লাগানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, সল্টলেকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গা, যেমন নগরোন্নয়ন ভবন, ময়ূখ ভবন, বিকাশ ভবন বা এসএসসি অফিসের সামনে সিসিটিভি লাগানো দরকার। কারণ এসব জায়গায় অনেক সময়েই নানা কারণে প্রচুর লোকের জমায়েত হয়। বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিম বলেন, “কাজ শুরু হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই কমিশনারেটের পুরো এলাকা এবং নিউ টাউন মেগাসিটিও সিসিটিভির অধীনে চলে আসবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy