ফুটপাথে হকার-রাজ। মঙ্গলবার, কালীঘাটে। —নিজস্ব চিত্র
ফুটপাথ জুড়ে হকার থাকবে কি থাকবে না, তা নিয়ে দোলাচলে এ বার খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়া কালীঘাট। আর সেই সমস্যায় মহা ফাঁপরে কলকাতা পুর-প্রশাসন। মেয়র থেকে বাজার দফতরের মেয়র পারিষদ— কেউই এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি।
কালীঘাট মন্দির চত্বরে স্থায়ী দোকানের সামনে জায়গা দখল করে নিচ্ছেন একদল হকার। পুলিশ এবং প্রশাসনের সামনেই এই ঘটনা বাড়তে থাকায় ক্ষুব্ধ ওই দোকানদারেরা। মঙ্গলবার তাঁরা এ নিয়ে থানায় অভিযোগও জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, থানার সামনেই এমন ঘটনা ঘটছে, কিন্তু পুলিশ নীরব। আগামী চার দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হলে প্রতিবাদে আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা। অন্য দিকে হকারেরাও থানায় গিয়ে জানান, অনেক দিনের দোকান তাঁদের। কোনও ভাবেই তাঁরা সরতে রাজি নন। এ বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, “কিছুই জানি না।”
পুর-মহলের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে বর্তমান পুরবোর্ড এমনিতেই হকার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে। তার উপরে সামনেই পুরভোট। স্বভাবতই এ সব প্রশ্ন এড়ানো এখন বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করেছেন মেয়র। বিরোধী দলের বক্তব্য, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মদতেই বসে হকারেরা। তাই ওদের দাপটও বেশি। বাসিন্দাদের কী অসুবিধা হচ্ছে, তা দেখার প্রয়োজনই মনে করে না পুরবোর্ড।
এ দিন কালীঘাট চত্বরে গিয়ে দেখা গেল, পুরনো স্থায়ী দোকানের সামনে পসরা নিয়ে সার দিয়ে বসেছেন হকারেরা। ফুটপাথের একটি বড় অংশ জুড়ে হকার বসায় সেখান দিয়ে চলাফেরা বেশ অসুবিধের। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই হকারেরা কিছুটা ফুটপাথ, কিছুটা রাস্তার উপরে বসেছেন। সম্প্রতি রাস্তায় চলাচলের সময়ে এক মহিলা পড়ে যাওয়ায় পুলিশ হকারদের ফুটপাথে সরে যেতে বলে। এর পরেই ওই হকারেরা স্থায়ী দোকানের সামনে বসে পড়েন।
ব্যবসায়ী সমিতি সংগঠনের সম্পাদক শশিশেখর সাহা বলেন, “চার দিনে কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না হলে তো বলেই দিয়েছি, আন্দোলন করব।” হকার বিনোদ সর্দার বলেন, “ঠাকুরদার আমলে ফুটপাথে হকারি শুরু হয়েছিল। স্থায়ী দোকান পরে হয়েছে। এখন সেটাই বন্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন দোকানদারেরা।”
পুলিশের বক্তব্য, শুধু কালীঘাট কেন, সর্বত্র এখন হকারেরা ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করছেন। হকার তাড়ানো পুলিশের কাজ নয়। দোকানদারেরা পুরসভায় অভিযোগ জানান। প্রশাসনিক দিক থেকে হকার সরানোর সিদ্ধান্ত হলে, পুলিশ তাতে সহায়তা করবে। পুলিশের এক অফিসার জানান, তাঁদের কাজ আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা। হকারেরা ফুটপাথ থেকে নেমে এসে রাস্তার অনেকটা আটকে ফেলেছিলেন। তা সরিয়ে দিয়েছে পুলিশ।
কালীঘাটের থেকেও খারাপ অবস্থা খাস পুরভবনের সামনে, নিউ মার্কেট চত্বরে। সেখানে তো ফুটপাথ ছেড়ে সামনের রাস্তার একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছে এক দল হকার। তাঁদের সরাতে গত জুলাইয়ে রীতিমতো কোমর বেঁধে প্রস্তুতি শুরু করেছিল পুরসভার বাজার দফতর। এমনকী, হকারদের নেতা তথা মন্ত্রী মদন মিত্রকে নিয়ে বৈঠকও হয়েছিল পুরসভায়। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে কলকাতার ঐতিহ্যশালী নিউ মার্কেট চত্বরের সামনের রাস্তা থেকে সরানো হবে হকার। পুরসভার বাজার দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ তখন জানিয়েছিলেন, বাট্রাম স্ট্রিট ও শ্রীরাম আর্কেডের সামনে প্রায় ২২৫ জন হকার রয়েছেন। তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য রাস্তা মাপামাপিও শুরু হয়েছিল। ব্যস, ওই পর্যন্তই। এর পরে এক ‘অদৃশ্য’ কারণে ওই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। কালীঘাট নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারকবাবুও জানান, তিনি কিছু জানেন না।
কংগ্রেস কাউন্সিলর মালা রায় বলেন, “ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মদতেই হকারেরা বসেন। তাই তাঁদের সরানো কঠিন।” বিজেপি-র বিজয় ওঝার কথায়, “ভোটের আগে নিজেদের কিছু কর্মী-সমর্থককে খুশি করতেই পুরবোর্ডের নেতারা এ সব করছেন।” পুরসভার বিরোধী দলনেত্রী সিপিএমের রূপা বাগচী বলেন, “সামনে ভোট। তাই শহরের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা ভুলে দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এই সব বিষয়ে চোখ বন্ধ করে রাখছে।” সিপিএম দীপঙ্কর দে বলেন, “ওই সমস্যায় মধ্যস্থতা করতে হবে পুরবোর্ডকেই। এড়িয়ে গেলে চলবে না। প্রয়োজনে পুর-অধিবেশনে এ নিয়ে আলোচনা হোক।” হকারদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি যাঁরা পুরসভাকে কর দিয়ে ব্যবসা করছেন, তাঁদের স্বার্থও দেখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy