Advertisement
E-Paper

শুভবোধের সঞ্চার জাগিয়ে তোলে ‘স্বস্তিকা’

শুভবোধের সঞ্চার জাগিয়ে তোলে ‘স্বস্তিকা’ আইসিসিআর-এ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘স্বস্তিকা’ শীর্ষক প্রদর্শনীটি দেখে এলেন মৃণাল ঘোষস্বস্তিকা’ একটি সুপরিচিত প্রতীক। এর আভিধানিক অর্থ ‘মঙ্গলের প্রতীক প্রায় ক্রুশাকার চিহ্নবিশেষ’। এখানে দুটি শব্দ আসছে ‘প্রতীক’ এবং ‘চিহ্ন’। সব প্রতীকের ভিতরই চিহ্নের অনুষঙ্গ থাকে।

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
প্রদর্শনীর একটি ছবি

প্রদর্শনীর একটি ছবি

স্বস্তিকা’ একটি সুপরিচিত প্রতীক। এর আভিধানিক অর্থ ‘মঙ্গলের প্রতীক প্রায় ক্রুশাকার চিহ্নবিশেষ’। এখানে দুটি শব্দ আসছে ‘প্রতীক’ এবং ‘চিহ্ন’। সব প্রতীকের ভিতরই চিহ্নের অনুষঙ্গ থাকে। কিন্তু সব চিহ্ন প্রতীক নয়। প্রতীক হচ্ছে এমন একটি দৃশ্যমান প্রতিমা বা ‘ইমেজ’ যা ওই ইমেজ-কে অতিক্রম করে আরও ব্যাপ্ততর কোনও ভাবনার স্মারক হয়ে ওঠে। সুইস মনোবিজ্ঞানী কার্ল গুস্টাফ ইয়ুং (১৮৭৫-১৯৬১) চিহ্ন ও প্রতীকের মধ্যে পার্থক্য করেছিলেন এভাবে: চিহ্ন পরিচিত কোনও কিছুকে সূচিত করে, যেমন শব্দ একটি সূচক বা ‘রেফারেন্ট’। কিন্তু প্রতীক তা নয়। প্রতীক যার প্রতিনিধিত্ব করে, তা অনেক ব্যাপ্ত এবং অনেক সময়ই অজানা। জোসেফ ক্যাম্বল-এর মতে প্রতীকের ভিতর থাকে শক্তি উৎসারণ ও নির্দেশনের ক্ষমতা। সে দিক থেকে দেখতে গেলে ‘স্বস্তিকা’ চিহ্নের গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রতীকে উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। মানুষ, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় ‘হোমো স্যাপিয়েন্স’ বলা হয়, তার একটি বিশেষত্ব হচ্ছে – সে একটি প্রতীক উৎসারণকারী প্রাণী। সুদূর অতীত থেকে, প্রত্ন-প্রস্তর যুগ থেকেই মানুষ প্রতীক উৎসারিত করে আসছে। ‘স্বস্তিকা’ সেরকমই একটি অতি-প্রাচীন প্রতীক। যদিও এই প্রতীক ভারতে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে আছে প্রায় খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক থেকে, তবু এর উৎস সন্ধান করতে গেলে আরও অনেক পিছিয়ে যেতে হয়।

এই প্রতীক শুভসূচক মঙ্গল চিহ্ন হলেও এর গৌরবকে বিধ্বস্ত করেছে বিংশ শতকের পাশ্চাত্যের কোনও দেশ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানি যখন নাৎসিবাদের প্রতীক হিসেব গ্রহণ করল ‘স্বস্তিকা’-কে, আর এই প্রতীককে সামনে রেখে লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করা হল, তখন সারা বিশ্বেই এই প্রতীক তার গৌরব হারাল।

এই ‘স্বস্তিকা’ নিয়ে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের পৃষ্ঠপোষকতায় গভীর গবেষণা করেছেন আইআইটি খড়গপুরের কিছু গবেষক। তাঁদের এই উদ্যোগটির নাম সন্ধি অর্থাৎ ‘সায়েন্স অ্যান্ড হেরিটেজ ইনিসিয়েটিভ’। এই ‘সন্ধি’র উদ্যোগে তাঁদের গবেষণার ফসল নিয়ে সমৃদ্ধ একটি প্রদর্শনী হল সম্প্রতি আইসিসিআর-এ, যার শিরোনাম ‘স্বস্তিকা’।

শুধু এই প্রতীকটির ইতিহাস ও তাৎপর্য নয়, এর সূত্র ধরে তাঁরা গিয়েছেন অনেক গভীরে। আজকের বিশ্বের যে প্রধান সংকট — পরিবেশ বিপর্যয় ও সহমর্মিতা ও সহনশীলতার বিলয়, একেও বিশ্লেষণ করে সামগ্রিক মঙ্গলবোধের উদ্বোধন চেয়েছেন।

এই প্রদর্শনীতে তাঁরা ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান ও ইতিহাসে এই স্বস্তিকা-র অন্তরালবর্তী যে মূল্যবোধ এবং তা কেমন করে বিশ্ব জুড়ে প্রবাহিত হয়ে এসেছে, তা বোঝাতে অত্যন্ত সুপরিকল্পিত এক একটি প্যানেল তৈরি করেছেন। তথ্য, চিত্র, আলোকচিত্র ও নক্শা-র সমন্বয়ে সেই প্যানেলগুলি এক দিকে যেমন সহজে অনুধাবনযোগ্য তথ্যের আকর হয়ে উঠেছে, তেমনি হয়েছে দৃষ্টিনন্দনও।

এই প্রদর্শনীর বড় অংশ জুড়ে রয়েছে দেশের বিভিন্ন অংশে যে উন্নয়ন-প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, আইআইটি খড়গপুর যার সঙ্গে যুক্ত, সে সম্পর্কে তথ্যের উপস্থাপনা। এর মধ্যে বেনারস প্রকল্পটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিজ্ঞান ও কলা-শিল্পের সৃজনময়তাই পারে শুভবোধের সঞ্চার করতে, ‘স্বস্তিকা’ যার স্মারক।

প্রদর্শনীতে চিত্রকলার কিছু দৃষ্টান্তও রাখা হয়েছে। অনন্যা দত্ত-র ‘দীপাবলী’ ছবিটি ও অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবেশ-ভাবনা সম্পৃক্ত কয়েকটি ছন্দিত চিত্র এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যকে সুচারুভাবে উন্মোচিত করেছে। এত উদাত্ততা সত্ত্বেও কয়েকটি অভাব এই প্রদর্শনী সম্পর্কে কিছু সংশয় জাগায়। ফ্যাসিবাদ কীভাবে স্বস্তিকা-কে কলুষিত করল, সে সম্পর্কে এখানে আলোকপাতের কোনও প্রয়াস নেই।

ভারতবর্ষের ইতিহাস বিস্তৃতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু তাতে ঐস্লামিক পর্ব এত সংকুচিত কেন? চৈনিক ক্যালিগ্রাফিতে স্বস্তিকার অবস্থান সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে। ঐস্লামিক ক্যালিগ্রাফি প্রসঙ্গ একেবারেই এল না কেন? সর্বধর্মসমন্বয় ছাড়া ভারতবর্ষের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। স্বস্তিকা এই বাণীও কি সঞ্চার করে না?

symbol of swastika exhibition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy