Advertisement
E-Paper

গ্রন্থভাবনাটি অভিনব

সুপরিচিত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এর আগে রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে গল্প উপন্যাস লিখেছেন। বাংলাদেশের অনেক জায়গায়, বিশেষত শিলাইদহের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজে ঘুরে ঘুরে রবীন্দ্রনাথের দেখা শিলাইদহের ছবি মনে মনে এঁকেছেন।

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৯ ১১:৪০

রবীন্দ্রনাথের সময়
সেলিনা হোসেন
২০০.০০, দে’জ পাবলিশিং

সুপরিচিত সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এর আগে রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে গল্প উপন্যাস লিখেছেন। বাংলাদেশের অনেক জায়গায়, বিশেষত শিলাইদহের বিভিন্ন অঞ্চলে নিজে ঘুরে ঘুরে রবীন্দ্রনাথের দেখা শিলাইদহের ছবি মনে মনে এঁকেছেন। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ‘আঁতুড় ঘর’ দেখে রবীন্দ্রনাথের সময়ের একটি ধারাবাহিক বিবরণ প্রস্তুতের অভীপ্সা তাঁর মনে জাগে। আলোচ্য রবীন্দ্রনাথের সময় সেই অভীপ্সার ফসল, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশি বছরের জীবন এবং তাঁর জন্মের আগের পাঁচ বছরের প্রেক্ষাপট মিলিয়ে মোট পঁচাশি বছরের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ধরা পড়েছে এই দুই মলাটে।’’ রবীন্দ্রনাথের জন্ম থেকে কবির সময়কে শুধু কবির জীবনবৃত্তে সীমাবদ্ধ রাখেননি তিনি, বিশ্বব্যাপী সমসাময়িক ঘটনার বা বিশিষ্ট ব্যক্তির জন্মের, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের প্রসঙ্গও পাশাপাশি এনেছেন। পরাধীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের সময়কে সংক্ষেপে জায়গা দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের সমসাময়িক ও উত্তরসূরি কবি-সাহিত্যিক-দেশনেতা-সমাজসেবীদের জীবনকাল কর্ম ইত্যাদি এবং সেই সময়ের নানা প্রসঙ্গ, ইতিহাসের বহু উপকরণ এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। গ্রন্থভাবনাটি অভিনব, পড়তে বেশ ভাল লাগে।

বঙ্গদর্শন পত্রিকার বঙ্গভাবনা/ বঙ্কিমচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথ
স্বরূপ দে
৪০০.০০, অক্ষর প্রকাশনী

১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ‘বঙ্গদর্শন’ পত্রিকা যখন প্রকাশিত হল, সে পত্রিকা যে আলোর দীপ্তি নিয়ে এল, যে রসের ভোজ সে পরিবেশন করল তা এক অনাস্বাদিত সময়ের সূচনা। রবীন্দ্রনাথ স্মরণ করেছেন ‘বঙ্গদর্শন’ হাতে পাওয়ার জন্য তাঁরা সকলেই কী আগ্রহে অপেক্ষা করতেন, বাড়িতে পত্রিকাটি এলে একে একে সব বড়দের হাত ঘুরে তবেই নাগালে আসত। দুপুরবেলা বেশ জোর গলায় পড়তেন, নতুন বৌঠান নিজে পড়ার চেয়ে শুনতেই বেশি ভালবাসতেন, ‘‘আমি পড়তে পারতাম ভালোই, উদ্বৃত্ত পেতাম হাতপাখার হাওয়া।’’ বঙ্কিমচন্দ্রের তিরোধানের পর সেই অনন্য সাহিত্যস্রষ্টার যে মূল্যায়ন রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন, তার কথাও ভোলা যায় না। তখন প্রবন্ধলেখক নিজেও জানতেন না যে এই বঙ্গদর্শন (নবপর্যায়) বছর ছয়েক পরে তাঁর সম্পাদনায় পুনঃপ্রকাশিত হবে, আর কেউই সে দিন সে কথা ভাবেননি। রবীন্দ্রনাথের কালে যে ভাবে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলির ধারাবাহিক প্রকাশ সাহিত্যরসিক বাঙালি পাঠকের প্রাণকে উদ্বেলিত করেছিল, ভিন্ন ভাবে ভিন্ন সময়ে নবপর্যায় ‘বঙ্গদর্শন’-এ ‘চোখের বালি’ ও পরে ‘নৌকাডুবি’-র প্রকাশ আবারও নতুন করে বাঙালি সমাজকে মাতিয়েছিল। অনেক কাল কেটে গিয়েছে, বাংলা সাহিত্যের সেই অতীত ইতিহাস আজও তার সজীবতা হারায়নি। সদ্য প্রকাশিত স্বরূপ দে-র বইটি সেই কথাই জানাল। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে রবীন্দ্রনাথের সম্পাদনাপর্বে বাংলা সাহিত্যের বিবর্তনের পরিচয় তুলে ধরেছেন লেখক।

‘উদীচী’র রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন
সম্পাদক: দেবযানী দে
৩২০.০০, পত্রলেখা

‘উদীচী’ পত্রিকার সঙ্গে প্রত্যক্ষ পরিচয় যাঁদের ছিল তাঁদের মনে হবে এই তো সে দিনের কথা। বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে উজ্জ্বল মুখে পৌষমেলার প্রাঙ্গণে সদ্য প্রকাশিত ‘উদীচী’ হাতে নিয়ে আসতে দেখার অভিজ্ঞতা তাঁদের স্মৃতিতে আজও অম্লান হয়ে আছে। যখন ‘উদীচী’ প্রকাশিত হত, শান্তিনিকেতনে গেলে আগে সে পত্রিকাটি সংগ্রহের আগ্রহ থাকত, এত দিন কেটে গেল! সম্প্রতি প্রকাশিত পত্রিকাটির একটি সঙ্কলন গ্রন্থ হাতে এসেছে। তার থেকে জানা যাচ্ছে, ‘উদীচী’র আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র এক দশক— আষাঢ় ১৩৮৫ (সংখ্যা ১) থেকে পৌষ ১৩৯৪ (সংখ্যা ২০), একুশতম তথা শেষ সংখ্যাটি বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণ সংখ্যা। কবি বীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এর প্রাণপুরুষ, সহযোগী স্বপনকুমার ঘোষ। এই পত্রিকার চরিত্র বোঝাতে সঙ্কলক-সম্পাদক রবীন্দ্রযুগে প্রকাশিত ‘বুধবার’, ‘শান্তিনিকেতন’ ও ‘ব্রতী বালক’ এই তিন পত্রিকার উল্লেখ করেছেন। ‘উদীচী’-তে কেবল প্রবন্ধ, কবিতা এবং স্মৃতিকথাই প্রকাশিত হত। শান্তিনিকেতনের অ্যান্ড্রুজ় পল্লিজাত ষাণ্মাসিক পত্রিকাটি আপন মূল্যে একটি মর্যাদার স্থান অধিকার করেছিল। ‘উদীচী’-র উদ্দেশ্য ছিল শান্তিনিকেতনের কাছের ও দূরের মানুষদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা। কুড়িটি সংখ্যার মধ্যে প্রথম চার বছরের আটটি সংখ্যা থেকে রবীন্দ্রনাথ ও শান্তিনিকেতন বিষয়ক রচনাগুলি আলোচ্য সঙ্কলনে গ্রন্থিত হয়েছে। শান্তিনিকেতনের পরিবেশ, শান্তিনিকেতন-ভাবনায় ভাবিত রবীন্দ্রনাথ ও যে সব ত্যাগব্রতী শিক্ষকরা এই বিদ্যালয়ের শিক্ষাকে প্রাণিত করেছিলেন তার বেশ কিছু উজ্জ্বল পরিচয় এই সঙ্কলনে বিধৃত হয়েছে। এই বই হাতে নিয়ে ‘উদীচী’-র সঙ্গে যাঁদের যোগ ছিল তাঁরাও যেমন নতুন করে সে দিনের কথা স্মরণ করবেন, এ কালের পাঠকের প্রাপ্তিও সামান্য হবে না।

Book Book Review Literature
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy