Advertisement
E-Paper

বিশ্বের দরবারে পৌঁছল বাংলার বনবিবির কাহিনি

বনবিবি-বিশ্বাস ও পাঁচালিগানে হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান লক্ষণীয়।

শেষ আপডেট: ০৫ জুন ২০২১ ০৫:১৮
Share
Save

জাঙ্গল নামা: স্টোরি অব দ্য সুন্দরবন
অমিতাভ ঘোষ
৬৯৯.০০

হার্পারকলিন্স ইন্ডিয়া

সুন্দরবনের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি বার বার জেগে উঠেছে অমিতাভ ঘোষের কলমে। দ্য হাংরি টাইড-এও নজর কেড়েছিল বনবিবির প্রতি লেখকের মুগ্ধতা। বনবিবির পালা-রই একটি পর্ব অবলম্বনে নতুন পদ্যের বই লিখেছেন জ্ঞানপীঠ বিজেতা। যাত্রা, পালাগানের দাক্ষিণ্যে কাহিনি আমাদের চেনা। দুখীকে জঙ্গলে নিয়ে যায় তার চাচা। বাঘরূপী পিশাচ দক্ষিণ রায়ের গ্রাসে তুলে দেয় তাকে। বিনিময়ে পায় ডিঙিভরা জঙ্গলের ধন। দুখীকে বাঁচান বনবিবি আর তাঁর ভাই শাহ জংলি।

বনবিবির জহুরানামা পুঁথিগুলি পাঁচালির ঢঙে দ্বিপদী পয়ারে লেখা। জাঙ্গল নামা-য় সেই সুরেলা মেজাজ ধরে রাখতে বাংলা পয়ারেরই একটি প্রকরণ ব্যবহার করে ছন্দে বেঁধেছেন প্রতিটি কাপলেট বা যুগ্মক। বনবিবি-বিশ্বাস ও পাঁচালিগানে হিন্দু-মুসলিম সহাবস্থান লক্ষণীয়। তাই কাদামাটির গন্ধ লাগা আরবি-ফারসি পাঁচমিশালি শব্দে তরতরিয়ে এগিয়েছে তাঁর কলমডিঙা। পয়ারে বাঁধা ছন্দ এখানে কাব্যের অবয়বমাত্র নয়, লোভ আর বাসনাকে সংযমের শৃঙ্খলায় বেঁধে রাখার প্রতীক। বনের বাঘ আর মনের বাঘের বিরুদ্ধে মানবসন্তানের জাদুবর্ম। পৃথিবীর মহাসঙ্কট জলবায়ু পরিবর্তন— আগেও বলেছেন সাহিত্যিক। এই আপাত শিশুপাঠ্য কাহিনির জমকালো নকশার আড়ালেও তারই করাল ছায়া। এই পুনর্কথনে বনবিবির পাঁচালির খাঁটি স্বাদ পৌঁছবে আন্তর্জাতিক পাঠকের ঘরে। দেশি পাঠকের প্রাপ্তি তাঁর শব্দবিন্যাস। তা কখনও উইলিয়াম ব্লেকের ‘দ্য টাইগার’, ‘দ্য ল্যাম্ব’-এর দুনিয়ায় নিয়ে যায়, কখনও স্পষ্ট শোনায় গ্রামবাংলার ঢাক-মাদল বাজনা, কখনও শব্দগুলোই বাঘ হয়ে গর্জায়। সলমন তুরের প্রচ্ছদ ও চিত্রকলায় পাতাজোড়া গোলকধাঁধা-ছবি মেডুসার বিভ্রম তৈরি করে।

ঠাকুরবাড়ির স্মৃতিবিজড়িত বাগানবাড়ি
শান্তা শ্রীমানী
২৫০.০০

পত্রলেখা

দ্বারকানাথের বেলগাছিয়া বাগানবাড়ির সঙ্গে ইন্দ্রিয়বিলাস সমার্থক বলে মনে করা হত। প্রজন্মান্তরে ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে যুক্ত বাগানবাড়ি, বাংলো, রাজপ্রাসাদ হয়ে ওঠে বঙ্গসংস্কৃতির অনুপ্রেরণা ও সৃষ্টিস্থল। কোথাও তাঁরা থাকতেন, কোনওটা ভাড়া নেন, কোথাও বেড়াতে গিয়েছিলেন। ডালহৌসির বকরোটা পাহাড়ের বাংলোয় মহর্ষি সমীপে রবিমননে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে উপনিষদের আলো। বরাহনগরের টেগোর ভিলার সৌন্দর্যায়নে জাপানি উদ্যানশিল্পীকে আনান রবীন্দ্রনাথ। পেনেটির বাড়িতে গঙ্গার দিকে চেয়ে সৃষ্টি করেন কাব্যমুকুল। চৌরঙ্গির বাড়িতে মহামারিতে সন্তানহারা অবনীন্দ্রনাথের হৃদয়ের রক্তই ‘শাজাহানের মৃত্যু-প্রতীক্ষা’ ছবিটিকে অপার্থিব করে তোলে। বাংলা ছাড়াও অমৃতসর, লাহৌর, ভোপাল, আমদাবাদ, বান্দ্রা, গিরিডি, আলমোড়া-সহ প্রায় দু’শো বাগানবাড়িতে ঠাকুরবংশজদের দিনযাপনের কাহিনি আছে এ বইয়ে। ঠাকুরবাড়ি সংক্রান্ত পাঁচটি বইয়ের লেখিকা গবেষণায় সাজিয়েছেন বাড়িগুলির ইতিহাস। আছে দুষ্প্রাপ্য ছবিও। তবে, তথ্যবুনন ও সঙ্কলনে সাহিত্যরস কিছু অপ্রতুল, জনপ্রিয় কিছু প্রসঙ্গও অনালোচিত। চোখে লাগে বানান ভুল। বহু বিক্ষিপ্ত তথ্য একত্র করার পরিশ্রম প্রশংসনীয়। পাতালবাড়ির গঙ্গার জলতলের নীচের একটি তলা, পার্ক স্ট্রিটের বাড়িতে জ্ঞানদানন্দিনীর কিংবদন্তিসম অতিথিসেবা, পলতায় জ্যোতিদাদা, বৌঠান আর কবির গানের আসর— দু’মলাটে ঝলমল করছে সোনার সময়।

সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ বাঙালি সমাজ
জাহিরুল হাসান
৩০০.০০

পূর্বা

মৃত্যুর পর অর্কেস্ট্রা পত্রিকায় সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের যে সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে তাঁকে ভবিষ্যৎদ্রষ্টা মনে হয়। তিনি বলেন পারিপার্শ্বিকের শ্বাসরোধকর অবস্থার কথা, টুঁ শব্দ করলেই গলায় হাত, লেজে পা পড়লে ছোবল। শুনতে পেয়েছিলেন সাম্প্রদায়িকতার আর্তনাদ। তাঁর কথায়: ‘শ্বাস নেওয়ার জন্য দরকারি হাওয়ায় অক্সিজেন দ্রুত কমে যাচ্ছে’। সিরাজের জীবনী শুধু একজন মানুষের জীবনকথা হতে পারে না, হতে হয় তাঁর ধাত্রীভূমির কাহিনিও। জাহিরুল হাসান অভিন্ন বাঙালি সমাজের পটভূমিতে স্থাপন করতে পেরেছেন সিরাজকে। সময়ের ক্রম মেনে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের গল্প খুঁজে বার করেছেন, সঙ্গে এগিয়েছে ইতিহাসের কালানুক্রমিক ভাষ্য। ছেলেবেলার কথা শুরু করার আগে আছে মুর্শিদাবাদের ইতিহাস ও তাঁর বংশপরিচয়। যদিও বইয়ের দুর্বলতাও বিস্তৃত বিবরণই। নিয়মতান্ত্রিক অধ্যায়ে, উপ-অধ্যায়ে বিভাজিত লেখার ধরন বহু তথ্য জানালেও গল্প বলার ভঙ্গিটিকে নীরস করে তোলে।

book review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy