Advertisement
E-Paper

বিদ্যাসাগর চর্চায় কিছু জরুরি সংযোজন

বইয়ের অন্যত্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের সম্পর্ক কোন খাতে বয়েছিল, তা-ও অন্বেষণ করা হয়েছে।

শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২০ ০৬:১২

বিদ্যাসাগর রচনাবলী
পরিকল্পনা ও রূপায়ণ: অজয় গুপ্ত
৫৫০.০০ (প্রথম খণ্ড)

দে’জ পাবলিশিং

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাসের সম্পাদনায় ১৩৪৪-১৩৪৬ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়েছিল তিন খণ্ডের বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী। তারই অনুসরণে প্রকাশিত হল বিদ্যাসাগর রচনাবলী (আপাতত শুধু প্রথম খণ্ড, বাকি দু’খণ্ড প্রকাশিত হবে আগামী কয়েক মাসে)। গ্রন্থাবলীর ‘শিক্ষা ও বিবিধ’-ৈএর ‘বিবিধ’ অংশকে ভাগ করে সংযোজন করা হয়েছে রচনাবলীর প্রথম দুই খণ্ডে, তৃতীয় খণ্ডে যুক্ত হয়েছে বিদ্যাসাগর-কৃত অভিধান (অসম্পূর্ণ) শব্দমঞ্জরী ও দেশি শব্দের সঙ্কলন শব্দসংগ্রহ— গ্রন্থাবলীতে যা ছিল না। প্রতি খণ্ডের শুরুতে ‘প্রকাশকের নিবেদন’ অংশটি অন্য রকম, প্রথম খণ্ডে বিদ্যাসাগরকে লেখা মাইকেল মধুসূদন দত্তের ইংরেজি চিঠি ও তার অনুবাদ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডের ‘নিবেদন’-এ রবীন্দ্রনাথ ও সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা। বিদ্যাসাগরের প্রতিটি রচনার মূল পাঠের আগে যুক্ত হয়েছে ‘রচনা-পরিচয়’, আছে নির্বাচিত চিঠিপত্র, ‘বিদ্যাসাগরিকা’ অংশে মোট ২৮টি পুনর্মুদ্রিত প্রবন্ধ। ‘পরিশিষ্ট’ অংশটিও জরুরি। আছে রামকিঙ্কর বেইজের আঁকা বিদ্যাসাগরের স্কেচ।

“আমার বাবা বর্ণপরিচয় পড়েন ১৯১০-এ, আমি পড়ি ১৯৪৬-এ, আমার মেয়ে পড়ে ১৯৭৬-এ, আমার নাতনি পড়ে ২০০০-২০০১ সালে।” প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কী ভাবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষা বাঙালি পরিবারে সঞ্চারিত হয়, তা এ ভাবেই ব্যক্তিগত সূত্রে দেখতে চান অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য। বইতে মানুষ বিদ্যাসাগর, তাঁর সময় ও বিভিন্ন কাজগুলি নানা টুকরো ছবিতে বাঁধা। তাই ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমিত্রাক্ষর ছন্দ সম্পর্কে অপছন্দের মনোভাব, ভারতচন্দ্র সম্পর্কে এক ধরনের ভক্তি-ভাব প্রভৃতি প্রসঙ্গ উল্লেখ বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিগত রুচির পরিচয় দেয়। বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বঙ্কিমের মনোভাবের কোনও পরিবর্তন পরে হয়েছিল কি না, তা খুঁজেছেন অমিত্রসূদনবাবু। বইয়ের অন্যত্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের সম্পর্ক কোন খাতে বয়েছিল, তা-ও অন্বেষণ করা হয়েছে।

এ সব গুরুগম্ভীর বিষয়ের পাশে, ঈশ্বরচন্দ্রের বেশভূষা, তাঁর তালতলার চটি নিয়ে প্রচলিত নানা গল্পের উল্লেখে লেখক মনীষী-চরিত্রের নানা দিক ফুটিয়ে তুলেছেন। ‘সংস্কৃত যন্ত্র’ নামে ছাপাখানা, ‘সংস্কৃত প্রেস ডিপজিটরি’ নামে বইয়ের দোকান তৈরিতে হদিশ মেলে ঈশ্বরচন্দ্রের কর্মোদ্যোগের।

বিদ্যার সাগর বিদ্যাসাগর
অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য
২০০.০০

আশাদীপ

৬ ডিসেম্বর, ১৮৫০। ‘কাউন্সিল অব এডুকেশন’-এর সেক্রেটারি এফ জে মোয়াটকে শিক্ষা-সংস্কার রিপোর্টটি দিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিদ্যাসাগর বিশেষত জোর দিচ্ছেন পাশ্চাত্য অঙ্ক শিক্ষা বিষয়ে। পাশাপাশি, অলঙ্কার শ্রেণিতে প্রকৃতি বিজ্ঞান পড়ানো, স্মৃতি শ্রেণিতে ব্রাহ্মণের পৌরোহিত্যের জন্য প্রয়োজনীয় রঘুনন্দনের ‘অষ্টাবিংশতি তত্ত্ব’ তুলে দেওয়া, ন্যায় শ্রেণিকে ‘দর্শন শ্রেণি’ বলা-সহ বেশ কিছু প্রস্তাব রয়েছে বিদ্যাসাগরের। বোঝা যায়, বিদ্যাসাগর নতুন প্রজন্মকে করে তুলতে চান সময়োপযোগী, যুক্তিবাদী, প্রগতিপন্থী। এই যুক্তির মনটিই লেখক অরুণাভ মিশ্রের ভাষায় ‘বিজ্ঞানী মন বা বিজ্ঞানমনস্কতা’। ১৪টি অধ্যায়ে সেই মনের আলোয় বিদ্যাসাগরকে খোঁজার চেষ্টা করেছেন লেখক।

বাংলা ভাষা, বিশেষত বাংলা গদ্যের ক্ষেত্রে সংস্কার সাধনের সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষার গুরুত্বও অনুধাবন করেছিলেন বিদ্যাসাগর। তার একটি রূপরেখা মেলে ‘জীবনচরিত: বিজ্ঞানীরা উঠে এলেন বিদ্যাসাগরের কলমে’, ‘আপাদমস্তক বিজ্ঞানের বই বোধোদয়’, ‘খগোল কথামালা আর বর্ণপরিচয়’ শীর্ষক অধ্যায়গুলিতে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারই নয়, মহেন্দ্রলাল সরকারের ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসেসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ তৈরির উদ্যোগে অর্থ সাহায্য, উইলে বীরসিংহ গ্রামে তাঁর তৈরি চিকিৎসালয়ের জন্য টাকা বরাদ্দ, নারী শিক্ষার উন্নতি-সহ নানা কাজের মাধ্যমে জনহিতে বিদ্যাসাগরের আধুনিক বিজ্ঞান মানস তৈরির চেষ্টার মতো বিষয়গুলি বিবৃত হয়েছে বইতে।

Ishwar Chandra Vidyasagar Books Review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy