Advertisement
০৩ মে ২০২৪
book review

প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ও সভ্যতার দিগ্‌দর্শন

“সারা মেদিনীপুর জেলায় বাস করেন অজস্র গুণী ইতিহাস গবেষক যাঁদের আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষণা-সঞ্জাত গ্রন্থের প্রতুলতা বিস্ময়কর।”

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২২ ০৯:৫১
Share: Save:

ভয়েসেস ফ্রম দ্য লস্ট হরাইজ়ন

অন্বিতা অব্বি

৯৯৫.০০

নিয়োগী বুকস

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লুপ্তপ্রায় একটি জনগোষ্ঠী ‘গ্রেট আন্দামানিজ়’। ওঙ্গে, জারোয়া, সেন্টিনালিজ় ও গ্রেট আন্দামানিজ়— এই চারটি গোষ্ঠী এক সঙ্গে ‘গ্রেট আন্দামানিজ়’ জনগোষ্ঠী গঠন করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীনতম এই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষের জীবনযাপন প্রথম থেকেই গোটা বিশ্বের থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন, সে সূত্রেই তাঁদের সভ্যতা, ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতি অন্যদের থেকে আলাদা। তবে সময়ের সঙ্গে এই জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি ও ‘গ্রেট আন্দামানিজ় ভাষা’ও লুপ্ত হতে বসেছে। এই জনগোষ্ঠীর কাছে তাঁদের ভাষা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইতিহাসের এক চিহ্নমাত্র, কারণ দৈনন্দিন জীবনে তাঁরা এ ভাষা ব্যবহার করেন না, কথা বলেন আন্দামানি হিন্দিতে। আগামী প্রজন্মকেও তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি শেখাতে ইচ্ছুক নন গোষ্ঠীর সদস্যরা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ‘আদিবাসী’ জনগোষ্ঠীর এই লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টায় লেখা হয়েছে এই বইটি, সে সূত্রেই সংযোজিত হয়েছে ওই জনগোষ্ঠী থেকে সংগৃহীত দশটি বিরল গল্প এবং ৪৬টি বিরল গান। দ্বীপের প্রতিটি গল্প বলা হয়েছে তাঁদের আঞ্চলিক ভাষায়, বলেছেন গ্রেট আন্দামানিজ়দের সবচেয়ে বয়স্ক সদস্য নাও জুনিয়র। তাঁর থেকেই জানা গিয়েছে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের প্রথম সদস্য ‘ফেরটাজিরোর’ কথা, যার আবির্ভাব একটি বাঁশের মুখ থেকে! জানা গিয়েছে জুরোর কথা, যার কাজ ছিল সমুদ্রসৈকত থেকে মানুষকে অপহরণ করে তাঁদের খেয়ে ফেলা। জুরো নিহত হয়েছিল তার ছেলের হাতেই। এই ধরনের গল্প ও গানের মাধ্যমে লেখক দেখিয়েছেন, কী ভাবে এই জনগোষ্ঠী নিজেদের চেষ্টায় সব ধরনের বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে বেঁচে থাকত। সুবীর রায়ের করা সুদৃশ্য অলঙ্করণে সজ্জিত বইটিতে রয়েছে ‘কিউআর কোড’, যা স্ক্যান করে শোনা যেতে পারে বিভিন্ন রেকর্ডিংও।

মেদিনীপুর আঞ্চলিক ইতিহাস গ্রন্থ (দ্বিতীয় খণ্ড)

প্রধান সম্পাদক: হরিপদ মাইতি

সম্পা: মন্মথনাথ দাস, আশুতোষ দাস, সুস্নাত জানা

৩৫০.০০

মেদিনীপুর আঞ্চলিক ইতিহাস

চর্চা কেন্দ্র

“সারা মেদিনীপুর জেলায় বাস করেন অজস্র গুণী ইতিহাস গবেষক যাঁদের আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষণা-সঞ্জাত গ্রন্থের প্রতুলতা বিস্ময়কর।” বইয়ের ভূমিকায় লেখা এই একটি বাক্যই মেদিনীপুর অঞ্চলকে অনেকখানি চিনিয়ে দেয়। আত্মবিস্মৃত জাতি হিসাবে বাঙালির অপযশ কম নয়। নিজের ইতিহাস নিয়ে তার অসচেতনতা, বলা ভাল উদাসীনতা বিস্তর— মননের ঐতিহ্যেও, আবার ইট কাঠ পাথরেও। সে দিক থেকে মেদিনীপুরকে অনেকাংশেই ব্যতিক্রম বলা যায়। শিকড়ের গভীর টানই তার অভিজ্ঞান। মেধাচর্চাতেও আলাদা করে চিনে নেওয়া যায় মেদিনীপুরকে, তা যেমন তার মেধার প্রকাশ, তেমনই স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখারও। তার স্থানিক ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণার সংখ্যা প্রচুর, সাধারণ পাঠকদের মধ্যে সে বিষয়ে উৎসাহও চোখে পড়ার মতো। এই গ্রন্থে মধুপ দে, সুকুমার মাইতি, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কামরুজ্জামানদের মতো গবেষকদের কলমে উঠে এসেছে গোপীবল্লভপুরের ইতিহাস থেকে মেদিনীপুরে বৈষ্ণবধর্মের প্রভাব, ঝাড়গ্রামের লোকপরব থেকে লোহানী পীরবাবার কাহিনি। প্রবন্ধগুলি পড়তে পড়তে বোঝা যায়, নিয়মিত চর্চার ধারা ইতিহাসের সম্পদকে সংহত আকারে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছে। পর পর দু’বছর আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে দু’টি খণ্ড, এবং ভবিষ্যতে আরও কিছু খণ্ডের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা— সহজ কথা নয়। সে জন্য অঞ্চল নিয়ে ভালবাসা ও কাজের নিষ্ঠা থাকা চাই। আঞ্চলিক ইতিহাসচর্চার পরিসরে তা গোটা বাংলাকেই পথ দেখাতে পারে।

সিন্ধু সভ্যতার অগ্নি পূজা ও বৈদিক যজ্ঞ: একটি তুলনামূলক আলোচনা

দীপান ভট্টাচার্য

৪৫০.০০

বাঙলার মুখ

প্রায় তিন হাজার বছর ধরে যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বালুচিস্তান থেকে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, আবার জম্মু থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে, সেই সভ্যতা নিয়ে আবহমান কাল ধরে যে মানুষের কৌতূহলের শেষ থাকবে না, তা প্রত্যাশিত। দীর্ঘ কালই এই সভ্যতার নগরবিন্যাস, সমাজ-অর্থনীতি নিয়ে চর্চা চলেছে। লেখক এই বইটিতে বেছে নিয়েছেন অগ্নি উপাসনার বিষয়টি, এর সঙ্গে তুলনা করেছেন বৈদিক যজ্ঞের। সিন্ধু সভ্যতা সম্পর্কে সামগ্রিক আলোচনা দিয়ে শুরু করে লেখা বিস্তৃত হয়েছে কালিবঙ্গান, লোথাল, বানাওয়ালি-সহ বিভিন্ন স্থানের অগ্নিকুণ্ডের বিবরণ এবং যজ্ঞবেদির সঙ্গে তার তুলনামূলক আলোচনায়। পাশাপাশি উঠে এসেছে সিন্ধু সভ্যতায় ঘরোয়া কাজে চুল্লি ব্যবহারের কথা— প্রয়োজন অনুযায়ী বানানো হত বিভিন্ন আকারের ও ধরনের উনুন। সে কালের তৈরি উনুনের আকার এবং ধরন এখনও ভারতের পশ্চিম দিকের রাজ্যগুলিতে দেখতে পাওয়া যায়। গোটা বইটিতেই তথ্যের পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক ছবি ও নকশার ব্যবহারে বিষয়বস্তুকে ফুটিয়ে তোলার সনিষ্ঠ প্রয়াস দেখা গিয়েছে। যাঁরা সিন্ধু সভ্যতাকে প্রকৃত অর্থেই বুঝতে চান, এবং নিজের বোঝার পরিধিকে শুধু মহেঞ্জোদরোর স্নানাগার, হরপ্পার মাতৃমূর্তি অথবা শস্যাগারের তথ্যেই আবদ্ধ রাখতে চান না, তাঁদের কাছে বইটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

book review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE