Advertisement
১৬ মে ২০২৪
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১

অন্দরমহল ও বাইরের জগতের যোগসূত্র বৈঠকখানা

সম্প্রতি বিপিন পাল রোডে অনুষ্ঠিত হল ‘বৈঠকখানা ন্যারেটিভ’ শীর্ষক প্রদর্শনী। লিখছেন মৃণাল ঘোষগত বছর থেকে খোঁজ: কলকাতার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বৈঠকখানা ন্যারেটিভ’ শিরোনামে কলকাতার অতীত ইতিহাস নিয়ে অভিনব শিল্পকর্ম শিবির। এর দ্বিতীয় পর্যায়টি অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার ৪, বিপিন পাল রোডে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের বসতবাড়িতে।

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০১
Share: Save:

গত বছর থেকে খোঁজ: কলকাতার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বৈঠকখানা ন্যারেটিভ’ শিরোনামে কলকাতার অতীত ইতিহাস নিয়ে অভিনব শিল্পকর্ম শিবির। এর দ্বিতীয় পর্যায়টি অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতার ৪, বিপিন পাল রোডে প্রখ্যাত ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদারের বসতবাড়িতে। পুরোনো কলকাতার বসতবাড়িতে বৈঠকখানা এমন একটি পরিসর যেখানে বাইরের অতিথিদের আপ্যায়ন করা হত। অন্দরমহল ও বাইরের জগতের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপিত হত বৈঠকখানার মধ্য দিয়ে। বৈঠকখানা ন্যারেটিভের ভিতর দিয়ে কলকাতার সেই লুকোনো ইতিহাসকে আজকের আলোয় উন্মীলিত করার প্রয়াসই ‘খোঁজ’-এর এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। রমেশচন্দ্র মজুমদারের পুরোনো বাড়ি নিয়ে কাজ করার মধ্যে ইতিহাস নির্মাণের বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা ও সাম্প্রতিকের সঙ্গে অতীতের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণার প্রয়াসও নিহিত রয়েছে। এই উদ্যোগের অন্যতম পরিকল্পক বিশিষ্ট শিল্পী ছত্রপতি দত্ত।

ছত্রপতি ও সৌমিক চক্রবর্তী যৌথভাবে যে প্রকল্পটি করেছেন তার শিরোনাম ‘সারভাইভিং অ্যালফাবেটস— রিরাইটিং হিসট্রি’। সাইট-স্পেসিফিক ইনস্টলেশন ও ভিডিও-র মাধ্যমে করা এই প্রকল্পে তাঁরা দেখাতে চেষ্টা করেছেন কেমন করে সংস্কৃতির বিভিন্ন স্তরের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া চলে। ক্ষমতাসম্পন্ন উচ্চবর্গের সংস্কৃতি সেখানে প্রাধান্য পায়। এর দাপটে হারিয়ে যায় নিম্নবর্গের সংস্কৃতি। ফলে একটি জনগোষ্ঠীর প্রকৃত ইতিহাস সব সময়ই দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়।

এখানে আমরা দেখতে পাই বইয়ের উপর বই সাজিয়ে মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত একটি সুউচ্চ স্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সংস্কৃতির দম্ভের প্রকাশ। তলায় মেঝের উপর ওই স্তম্ভকে ঘিরে বিপন্ন মানুষজন ঘোরাফেরা করছে। স্তম্ভের দম্ভের কাছে তাঁদের অস্তিত্ব বা আত্মপরিচয় সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। পিছনে দেওয়ালে ভিডিও-র মাধ্যমে প্রক্ষিপ্ত হয়েছে সঞ্চরমাণ বর্ণমালার আবহ। এ ছাড়া ঘরের পরিমণ্ডলে রয়েছে পুরোনো দিনের আসবাব, আলোকচিত্র ইত্যাদি।

ছত্রপতি দত্ত অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্মিলিত ভাবে করেছেন আর একটি প্রকল্প। এর শিরোনাম ‘খাতরার যাত্রা’। আজকে শিক্ষাক্ষেত্রে যে প্রবল নৈরাজ্য, শিক্ষার রাজনীতিকরণের মধ্য দিয়ে সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থাকেই যে নৈরাজ্যময় করে দেওয়ার উদ্যোগ, এরই বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদী আখ্যান নির্মাণ করেছেন এই শিল্পীদ্বয়। ‘খাতরার যাত্রা’ নামে একটি ছোট পুস্তিকাও তাঁরা প্রকাশ করেছেন।

মধুজা মুখোপাধ্যায় ও অমৃতা সেন একসঙ্গে করেছেন ‘নো ডেটস’ শিরোনামে একটি প্রকল্প। মধুজা-র পিতামহ গগনচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমৃতার পিতামহ প্রশান্তকুমার সেন— দুজনেই শিল্পী ছিলেন। তাঁদের ছবিতে অতীতের সঙ্গে শিল্পীদ্বয়ের সৃজনকর্মের বর্তমানকে অন্বিত করে তাঁরা গড়ে তুলতে চেয়েছেন অতীত ও সাম্প্রতিকের এক সংলাপ। দেবাশিস বারুই-এর প্রকল্পের নাম ‘রিটেনশন’। ফোটোগ্রাফ ও ভিডিও-র মধ্য দিয়ে তিনি ইতিহাসের এক বিকল্প ভাষ্য গড়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দৃশ্যতার দিক থেকে তাঁর প্রকল্পের নান্দনিকতা খুবই সীমিত।

শঙ্খ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুরাধা পাঠকের ইনস্টলেশন প্রকল্পের শিরোনাম ‘ডোমিসাইল অব দ্য ডিফেন্ডার অব ফেম’। রমেশচন্দ্রের তিনতলা বাড়িটিকে নিয়ে তাঁরা কাজ করেছেন। এই বাড়ির নীচের তলায় এখন রয়েছে তালপাটালি তৈরির একটি কর্মশালা। তাঁদের ইনস্টলেশনের নীচের ধাপে রয়েছে তালপাটালি সম্পর্কিত তথ্য ও সেখানকার পরিবেশের আবহ। উপরের দুটি স্তরে রমেশচন্দ্রের বাড়ির আবহমণ্ডল। রমেশচন্দ্রের রেশন কার্ডটিও রয়েছে।

বিতান বসু, সৌম্যদীপ রায় ও অভিজিত্‌ গুপ্ত সম্মিলিত ভাবে করেছেন ‘আননোন ফাইলস: আ হিস্টোরিকাল ফিকশন’ নামে ভিডিও ইনস্টলেশন প্রকল্প। বাড়ির ভিতরের পরিবর্তনের সঙ্গে বাইরের ঘটনা পরম্পরাকেও তাঁরা দেখিয়েছেন। ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত দেশের বাস্তব পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই প্রকল্পকে গুরুত্বপূর্ণ করেছে। ধ্বনির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক দৃশ্য থাকলে ভাল হত। এ ছাড়াও এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছেন তমাল মিত্র, সৌরভ মুখোপাধ্যায়, সৌম্যদীপ ঘোষাল, দেবাঞ্জন রায়, রাজীব ভট্টাচার্য, দেবতোষ কর প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

art exhibition mrinal ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE