Advertisement
E-Paper

‘গর্বিত, আনন্দিত এবং কিছুটা উন্নাসিকও’

মিস্টিক রসের ভারে নম্রনত মানুষটিই জাপানি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন; আইনস্টাইন বা হাইজেনবার্গের সঙ্গে তর্কে মাতেন যিনি, তিনিই পায়ের বেগে নিজস্ব পথ কেটে নেন সংগীতের; উপনিষদকে আপন গরজে ‘এডিট’ করে আধুনিক মানুষের ধর্ম গড়েন যিনি, তিনিই ব্যক্তিজীবনে, হয়তো রাজনীতি-ভাবনাতেও, অন্যায় আপস করেন, শিকার হন ডিপ্রেশনের; ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে অগ্রাহ্য করে নিজেকে যিনি শিক্ষিত করেন...

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৪ ২৩:০৯

মিস্টিক রসের ভারে নম্রনত মানুষটিই জাপানি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন; আইনস্টাইন বা হাইজেনবার্গের সঙ্গে তর্কে মাতেন যিনি, তিনিই পায়ের বেগে নিজস্ব পথ কেটে নেন সংগীতের; উপনিষদকে আপন গরজে ‘এডিট’ করে আধুনিক মানুষের ধর্ম গড়েন যিনি, তিনিই ব্যক্তিজীবনে, হয়তো রাজনীতি-ভাবনাতেও, অন্যায় আপস করেন, শিকার হন ডিপ্রেশনের; ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থাকে অগ্রাহ্য করে নিজেকে যিনি শিক্ষিত করেন... সেই একজন রবীন্দ্রনাথকে, তার খণ্ড-খণ্ড অস্তিত্বকে সমগ্রতায় দেখতে চেয়েছেন আশীষ লাহিড়ী তাঁর রবীন্দ্রসংগীত থেকে রবীন্দ্রনাথে ব্যক্তিগত এক অভিযাত্রা-য় (কারিগর, ২৮০.০০)। এই ভাবনা থেকেই কবির সুর, স্বর, কবিতা, রাজনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা, প্রত্যাখ্যান ও পুনরাবিষ্কারের নানা পথ ঘুরে তিনি পৌঁছেছেন ব্যক্তিগত এক অভিযাত্রায়। বিজ্ঞানের ইতিহাস ও বিজ্ঞানের দর্শন যেহেতু তাঁর বিশেষ আগ্রহের বিষয়, সেই প্রেক্ষিত থেকেও রবীন্দ্রনাথকে বোঝার চেষ্টা করেছেন তিনি।

রবীন্দ্ররচনার সমাজতাত্ত্বিক অন্বেষণ শমিত করের সাম্য, সমাজতত্ত্ব ও রবীন্দ্রনাথ-এ (কে পি বাগচী, ২৭০.০০)। বইয়ের শুরুতেই লেখক রবীন্দ্রচিন্তা সম্পর্কে জানিয়েছেন ‘তাঁর চিন্তার অন্যতম দৃষ্টিকোণ হল মানুষের মধ্যে যে অনন্য অন্তর্নিহিত আত্মশক্তি রয়েছে তার অন্বেষণ করা এবং তার উজ্জীবন ঘটানো। প্রতিটি সমাজবদ্ধ মানুষের মধ্যে যে সুবিপুল আত্মশক্তি রয়েছে তার যদি যথার্থ বিমোচন ঘটানো যায় তাতে একদিকে যেমন ব্যক্তিমানুষের আত্মনির্ভরতা তৈরি হতে পারে, তেমনি এই আত্মনির্ভর ব্যক্তিসত্তার সম্মেলনে সমাজে প্রকৃত সাম্য ও সমানাধিকার ব্যাপ্তি পেতে পারে।’

কবিগান একই সঙ্গে গ্রামীণ এবং নাগরিক, কবিগানের এই বিশেষত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের ভিতর যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছিল তার ইতিহাস বিধৃত হয়েছে সর্বানন্দ চৌধুরীর গোধূলির পতঙ্গেরা/ রবীন্দ্রনাথ ও কবিগান-এ (গাঙচিল, ১৭৫.০০)। সেই ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে কবিগানের একটি সংগ্রহের কথা, যেটি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা সে কালে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছিল। সর্বানন্দ জানাচ্ছেন যে রবীন্দ্রনাথ ‘যখন গান রচনা করেছেন তখন বার বার কবিগানের আতিথ্য গ্রহণ করেছেন। বোঝা যাচ্ছে, কবিগান থেকে তিনি কোনও না কোনও ভাবে প্রেরণা লাভ করেছিলেন। অথচ কবিগানের সমালোচনাটিতে সেই প্রেরণার ছাপ কোথাও নেই।’

তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গদ্য-গীতাঞ্জলি (গাঙচিল, ২৫০.০০) ইংরেজি গীতাঞ্জলি-র শব্দানুগ বাংলা অনুবাদ। এর পরিশিষ্টে ইংরেজি গীতাঞ্জলি ও তার মূল বাংলা রচনাগুলির মধ্যেকার পার্থক্যের বিস্তারিত যে তালিকা যোগ করা হয়েছে তা নিয়ে নিবেদন-এ অনুবাদক জানিয়েছেন ‘‘ইংরেজি ‘গীতাঞ্জলি’র অনুবাদ-কবিতাগুলি গদ্যে রচিত, মূল বাংলা কবিতা ও গানগুলি ছন্দে লেখা। ছন্দে লেখা বাংলা কবিতা ও গানগুলি পড়লে আমাদের মনে যে-অনুভূতির সৃষ্টি হয় তা গদ্যে অনূদিত ইংরেজি ‘গীতাঞ্জলি’ পড়ার অনুভূতি থেকে অনেকটাই আলাদা। আমার এই শব্দানুগ অনুবাদে ইংরেজি ‘গীতাঞ্জলি’ পড়ার এই আলাদা অনুভূতিকেও ধরতে চেয়েছি।’

মানস বসুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির জীবনধারা ও গান/ প্রথম পর্ব (দে’জ, ১০০০.০০) ঠাকুরবাড়ির সঙ্গীতচর্চার ইতিহাস। বর্তমান পর্বে দেবেন্দ্রনাথ দ্বিজেন্দ্রনাথ গণেন্দ্রনাথ সত্যেন্দ্রনাথ হেমেন্দ্রনাথ বা সৌদামিনী দেবীর সঙ্গীত চর্চা যে পারিবারিক ঐতিহ্য সৃষ্টি করেছিল সে ইতিহাসই বিধৃত। উত্তরসূরিরা এই ঐতিহ্যকে কতটা প্রবহমান করে রাখতে পেরেছিলেন, পর্বে-পর্বান্তরে সে আলোচনাই লেখকের রচনাভিপ্রায়।

রবীন্দ্র-বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন নব রবি কিরণে-র (আশাদীপ, ৪০০.০০) সম্পাদক জয়ন্তী সাহা রায় তাঁর প্রাককথন-এ জানিয়েছেন “আজকের যুগেও রবীন্দ্রনাথ কেমন করে আমাদের জীবন-মন জুড়ে আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন তার কিছু কিছু নমুনা এই ‘নব রবি কিরণে’র মধ্য দিয়ে।” রবীন্দ্রপ্রতিভা বা তার প্রয়োগ নিয়ে বিশিষ্ট জনের রচনাদিতে ঋদ্ধ এ-সংকলনে পিনাকেশ সরকার তাঁর ‘আমাদের সূর্যাবর্ত’তে লিখছেন ‘‘নতুন নতুন জিজ্ঞাসাও জাগছে অনেক। ইদানীং কেউ কেউ প্রস্তাব দিয়েছেন রবীন্দ্রসংগীতকে সাম্প্রতিক শ্রোতার রুচিসংগত করে তুলতে এগুলির গীত-রূপ পরিবেশনাই যথেষ্ট নয়, গানের দৃশ্যায়ন ঘটানোও নাকি জরুরি প্রয়োজন।... কিন্তু সমস্যা হলো, শ্রোতার কল্পনা বলে কি আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না?’ সুশোভন অধিকারী তাঁর ‘পটুয়া রবি ঠাকুরের অভিমান’-এ লিখছেন ‘সত্তর বছর বয়সে কবি রবীন্দ্রনাথের গায়ে উঠল ছবি আঁকিয়ের যে বিচিত্র আলখাল্লা, তাতে তিনি নিজেও রীতিমতো গর্বিত, আনন্দিত এবং নিঃসন্দেহে কিছুটা উন্নাসিকও। তাঁর এই উন্নাসিকতার কারণ ছিল যথেষ্ট। রবীন্দ্রনাথের ছবি-ভাবনা তাঁর স্বদেশ স্বকালের সীমানাকে যেভাবে ছাড়িয়ে গিয়েছিল তা সাধারণভাবে দেশের আর সকলের ক্ষেত্রে ঘটেনি।’

সুশান্তকুমার সামন্তর রবীন্দ্রনাথের গান/ উৎস স্বরূপ অনন্যতা (আশাদীপ, ২০০.০০) নিয়ে ভূমিকায় সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন ‘বিবর্তনের ধারায় রবীন্দ্রনাথের গান ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলা গানের বিবর্তনের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের স্থান এবং গুরুত্ব স্থান পেয়েছে আলোচনায়।’ কবির গানের বিভিন্ন স্তর নিয়ে আলোচনা করেছেন লেখক।

করুণাময় গোস্বামীর রবীন্দ্র নাট্যসংগীত-এ (প্রতিভাস, ৪০০.০০) প্রথম থেকে একেবারে শেষ পর্যন্ত যে সব গীতিনাট্য কাব্যনাট্য ও গদ্যনাট্য কবি রচনা করেছিলেন সে সবে ঠাঁই-পাওয়া যাবতীয় গান নিয়ে আলোচনা। গানের প্রয়োগ নাটকের বক্তব্যকে কতটা তীব্র করেছে, মোটেও যে দর্শকের মন ভোলাতে গানের ব্যবহার রাখতেন না নাটকে কবি, তা প্রমাণেই উদ্যোগী লেখক।

book review
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy