Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

এক শিক্ষক এবং এক ছাত্রী নিয়ে চলছে উচ্চ বিদ্যালয়

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির এই বিদ্যালয় থেকে ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন চার জন শিক্ষক। নতুন করে আর শিক্ষক নিয়োগ হয়নি।

টিমটিমে: এ ভাবেই চলে পঠানপাঠন। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

টিমটিমে: এ ভাবেই চলে পঠানপাঠন। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৬
Share: Save:

বছর তিনেক আগের কথা। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় গাছের নীচে চলত স্কুলের পড়াশোনা। সেই খবর সংবাদপত্রে প্রকাশের পরে নড়ে বসে প্রশাসন। ১৫ লক্ষেরও বেশি টাকা খরচ করে ছাদ-সহ তিনটি পাকা শ্রেণিকক্ষ তৈরি হয় সেই বছরে। পানীয় জলের জন্য বসানো হয় নলকূপ। মিড-ডে মিলের ব্যবস্থাও হয়। তখন বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল শতাধিক, শিক্ষক ছিলেন পাঁচ জন। সেই স্কুলে বর্তমানে খাতায়-কলমে চার জন ছাত্রছাত্রী থাকলেও উপস্থিত থাকে মাত্র এক জন। শিক্ষকও সেই আছেন এক জন। কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, এমনই চিত্র দেগঙ্গার আমুলিয়া পঞ্চায়েতের বেলগাছিয়া জুনিয়র হাইস্কুলে।

কেন এই দুরবস্থা?

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির এই বিদ্যালয় থেকে ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন চার জন শিক্ষক। নতুন করে আর শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। মাত্র এক জন শিক্ষকের হাতে না ছেড়ে বাধ্য হয়েই সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের অন্যত্র ভর্তি করেছেন অভিভাবকেরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২–’১৩ শিক্ষাবর্ষে বেলগাছিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ‘জুনিয়র হাইস্কুলের’ অনুমোদন পায়। চালু হয় পড়াশোনা। সেই সময়ে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ১২৪। কিন্তু জুনিয়র স্কুলের অনুমোদন মিললেও বাড়তি শ্রেণিকক্ষ তৈরি হয়নি। ফলে প্রাথমিক স্কুলের সামনে গাছের নীচে পলিথিন বিছিয়ে চলত জুনিয়র স্কুলের ক্লাস। ২০১৬ সালে সেই ছবি ও খবর প্রকাশ হওয়ার পরে শিক্ষা দফতরের উদ্যোগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তৈরি হয় শ্রেণিকক্ষ। নতুন ভবনে টেবিল, বেঞ্চ, আলো-পাখা— সব কিছুরই ব্যবস্থা হয়।

সেই স্কুলবাড়ি

স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, শ্রেণিকক্ষের এক কোণে সার দিয়ে পড়ে রয়েছে নতুন বই। মন্টুকুমার পাল নামে একমাত্র শিক্ষক উপস্থিত। তিনি ক্লাস নিচ্ছেন স্কুলের একমাত্র ছাত্রী, সপ্তম শ্রেণির জেসমিনা পরভিনের। মন্টুবাবু বলেন, ‘‘অবসরের পরে আর নিয়োগ না হওয়ায় ২০১৬ থেকে পড়ুয়ার সংখ্যা কমতে কমতে চারে এসে ঠেকেছে।’’ মিড-ডে মিল রান্নার কাজে যুক্ত মালেকা বিবি বলেন, ‘‘এক জনের জন্য রান্না করে ক’দিন বেতন পাব, জানি না।’’

ওই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে সন্তানকে অন্যত্র ভর্তি করেছেন জুলফিকার আলি। তাঁর কথায়, ‘‘সরকার শ্রেণিকক্ষ তৈরি করেছে। অথচ মজার ব্যাপার হল, তাতে পড়ানোর কেউ নেই।’’ আর এক অভিভাবিকা আজমিরা বেগম বলেন, ‘‘বোড়ামারি, বাওরাটি, বেলপুর ও বেলেডাঙা— এই চারটি এলাকার মধ্যে এটিই একমাত্র জুনিয়র হাইস্কুল। বাধ্য হয়ে তিন কিলোমিটার দূরে রায়পুর হাইস্কুলে ছেলে-মেয়েদের ভর্তি করতে হচ্ছে।’’

এ ব্যাপারে দেগঙ্গা শাখার বিদ্যালয় পরিদর্শক সানাওয়াজ আলম বলেন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় জুনিয়র হাইস্কুলগুলিও অতিথি শিক্ষকদের দিয়ে চালাতে হয়। অতিথি শিক্ষকও সব সময়ে পাওয়া যায় না। আর এই স্কুলে এখন পড়ুয়ার সংখ্যা কম হওয়ায় শিক্ষক নিয়োগ আর হবে কী ভাবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Student Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE