Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Crime

ঘর লন্ডভন্ড, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার বৃদ্ধার দেহ

পুলিশ জানিয়েছে, বছর দশেক আগে ওই বৃদ্ধার স্বামী মারা গিয়েছেন। তিন বছর আগে ক্যানসারে মৃত্যু হয় তাঁর ছেলে এবং পুত্রবধূর।

এই ঘর থেকেই উদ্ধার হয় সুষমা চট্টোপাধ্যায়ের (ইনসেটে) দেহ। সোমবার, বারুইপুরে। নিজস্ব চিত্র

এই ঘর থেকেই উদ্ধার হয় সুষমা চট্টোপাধ্যায়ের (ইনসেটে) দেহ। সোমবার, বারুইপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০৫:০৯
Share: Save:

কাপড় দিয়ে মুখ বাঁধা। পিছমোড়া করে বাঁধা হাত এবং পা। এমনই অবস্থায় এক বৃদ্ধার মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুর থানার পশ্চিম সালেপুর এলাকায়। মৃতার নাম সুষমা চট্টোপাধ্যায় (৮০)।

পুলিশ জানিয়েছে, বছর দশেক আগে ওই বৃদ্ধার স্বামী মারা গিয়েছেন। তিন বছর আগে ক্যানসারে মৃত্যু হয় তাঁর ছেলে এবং পুত্রবধূর। তার পর থেকে একাই থাকতেন সুষমাদেবী। তাঁর দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট মেয়ে বহ্নিশিখা থাকেন বিষ্ণুপুর থানা এলাকার জুলপিয়ায়। বড় মেয়ে রাজলক্ষ্মী বেলেঘাটার বাসিন্দা। ছোট মেয়েই মূলত মায়ের দেখাশোনা করতেন। পাশাপাশি ছি‌লেন দুই পরিচারিকা। তবে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই ঘটনার কোনও সূত্র দিতে পারেননি ছোট মেয়ে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃদ্ধাকে খুন করার পাশাপাশি ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র তছনছ করেছে দুষ্কৃতীরা। দু’টি ঘরে থাকা পাঁচটি আলমারি খোলা হয়েছে। আলমারিতে থাকা জিনিসপত্র সারা ঘরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলা হয়েছে। ঘর থেকে বাইরে আনা হয়েছে পাঁচটি লোহার ট্রাঙ্ক। তার মধ্যে চারটির তালা ভাঙা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে বৃদ্ধার দেহে আঘাতের চিহ্ন মেলেনি। পুলিশের অনুমান, মুখে কাপড় চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, শুধু লুটপাট এবং খুন নয়। বৃদ্ধার ঘরে কোনও কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছিল আততায়ীরা। সেই কারণে সব জিনিস ওলটপালট করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে নুরজাহান বিবি নামে এক পরিচারিকা এসে দেখেন, বাড়ির গ্রিলের দরজা খোলা। উঠোনে ছড়িয়ে আছে ঘরের জিনিসপত্র। ভিতরে গিয়ে তিনি বিছানার উপরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সুষমাদেবীকে পড়ে থাকতে দেখেন। নুরজাহানই প্রতিবেশীদের ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ এসে দেহ উদ্ধার করে। বৃদ্ধার আর এক পরিচারিকা মামণি বেগম রবিবার রাত ন’টা পর্যন্ত ওই বাড়িতে ছিলেন। পুলিশের অনুমান, গভীর রাতে দরজার তালা ভেঙে হামলা চালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। লুটপাটে বাধা দেওয়ায় বৃদ্ধাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। তবে এটি লুটের জন্য খুন না অন্য উদ্দেশ্য ছিল আততায়ীদের, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু।

প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পুলিশের ধারণা, সম্পত্তিজনিত কারণে সুষমাদেবীকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। বারুইপুর শহরের পশ্চিম সালেপুরে ন’কাঠা জমির উপরে বৃদ্ধার বাড়ি। ওই এলাকায় এখন জমির দাম কাঠাপ্রতি প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। সেখানে আবাসন করতে পারলে কয়েক কোটি টাকা মুনাফার সম্ভাবনা রয়েছে। জমি ভাগ নিয়ে মেয়েদের সঙ্গে সুষমাদেবীর মতান্তর হয়েছিল কি না, তা দেখছেন তদন্তকারীরা। ইন্দ্রজিৎবাবু বলেন, ‘‘বৃদ্ধার আত্মীয়দের ডেকে পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া ওই বাড়িতে আর কাদের যাতায়াত ছিল, সেই খোঁজ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে দুই পরিচারিকাকে।’’

তদন্তকারীদের অনুমান, আততায়ীরা সংখ্যায় ছিল একাধিক। ঘরের জিনিসপত্র ওলটপালট করার ধরন দেখে মনে করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে কোনও এক জনের ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। পাশাপাশি, এই ঘটনায় বৃদ্ধার পরিচিত কারও জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Death Baruipur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE