Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
টিটাগড়

পুলিশের গুলিতে যুবকের মৃত্যু, দেহ রেখে অবরোধ

পুলিশের গুলিতে এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে তেতে উঠল টিটাগড়। পুলিশের দাবি, শুক্রবার রাতে নিহত শিউলি তেলেনিপাড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত দাস (২৫) সমাজবিরোধী। যদিও এলাকাবাসীর বক্তব্য, পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে প্রশান্তর নাম পুলিশের খাতায় নেই।

রাস্তায় দেহ রেখে অবরোধ। —নিজস্ব চিত্র।

রাস্তায় দেহ রেখে অবরোধ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০১:১৯
Share: Save:

পুলিশের গুলিতে এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শনিবার রাতে তেতে উঠল টিটাগড়। পুলিশের দাবি, শুক্রবার রাতে নিহত শিউলি তেলেনিপাড়ার বাসিন্দা প্রশান্ত দাস (২৫) সমাজবিরোধী। যদিও এলাকাবাসীর বক্তব্য, পেশায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে প্রশান্তর নাম পুলিশের খাতায় নেই। গুলি চালিয়ে তাঁকে মেরে পুলিশ গল্প ফাঁদছে—এই অভিযোগে এ দিন সন্ধ্যা থেকে টিটাগড়ের কাঁঠালিয়া মোড়ে ব্যারাকপুর-বারাসত রোডে প্রশান্তর মৃতদেহ রেখে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক অবরোধ করে জনতা। শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে রাত পৌনে ৯টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।

টিটাগড় থানা এ ব্যাপারে মন্তব্য করেনি। ফোন ধরেননি ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার নীরজকুমার সিংহ। জবাব আসেনি এসএমএসের। অন্য পুলিশকর্তারা ‘‘যা বলার, কমিশনার বলবেন’’, বলে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

নিহত প্রশান্ত দাস।

পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল ও লাগোয়া এলাকায় সম্প্রতি জোড়া খুন ও অসংখ্য অপরাধের ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে ইছাপুর খালের কাছে নাকা-বন্দি করে পুলিশ গাড়ি তল্লাশি করছিল। সেই সময় কলকাতামুখী একটি সাদা রঙের গাড়ি ওই নাকা এড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বাধা দিতে গেলে গাড়ির যাত্রীরা পুলিশকর্মীদের গালিগালাজ করে। এর পরেই টিটাগড় থানার পুলিশ টহলদারি জিপ নিয়ে গাড়িটির পিছু ধাওয়া করে। ব্যারাকপুর টোল ট্যাক্সের কাছে কুন্ডুবাড়ির মোড় হয়ে গাড়িটি তেলেনিপাড়ার দিকে ঘুরে যায়। মাঠপাড়ার কাছে রাস্তা শেষ হতে গাড়ি থেকে নেমে পালানোর চেষ্টা করে আরোহীরা।

পুলিশের দাবি, সেখানেই তাদের লক্ষ করে বোমা-গুলি ছোড়ে গাড়িতে থাকা লোকজন। গাড়ির মালিক স্থানীয় যুবক টুপাই ও তার চার সঙ্গী গুলি চালাতে চালাতে পিছু হঠতে থাকে। প্রশান্ত সবার শেষে গাড়ি থেকে নামে। থামতে বলা হলেও সে দৌড় মারে। প্রথমে তার পায়ে গুলি করা হয়। জখম হয়েও প্রশান্ত থামেনি। সেই সময়ে অন্য দুষ্কৃতীরা ফের গুলি চালালে, পুলিশ জবাব দেয়। সে সময় প্রশান্তর বুকে ও মাথায় গুলি লাগে। বাকিরা পালিয়ে যায়। পুলিশ গাড়িটি আটক করে। টুপাই ও তার সঙ্গীদের খোঁজ চলছে।

সরস্বতী দাস।

তেলেনিপাড়ায় প্রশান্তদের ভাড়াবাড়িতে এ দিন সকাল থেকেই প্রতিবেশীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রশান্তর মা সরস্বতী দাসের দাবি, ‘‘ছেলে বলেছিল, বিয়েবাড়িতে যাবে। ফিরতে রাত হবে। ও চুরি-ডাকাতি করেনি, কাউকে মারেনি। কেন ওকে মেরে ফেলল পুলিশ?’’ বাড়ির লোক না মানলেও স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রশান্তর ঘনিষ্ঠতা যাদের সঙ্গে, তাদের অনেকেরই পুলিশের খাতায় নাম রয়েছে। এ দিন অবরোধ করা এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের প্রশ্ন, ‘‘সঙ্গীরা ভাল না হতে পারে, কোন যুক্তিতে পুলিশ প্রশান্তকে সমাজবিরোধী বানাল।’’ অবরোধ-স্থলে হাজির হওয়া তৃণমূল নেতারা কমিশনারেটের পুলিশ-কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আশ্বাস দিলে জনতা রাস্তা ছাড়ে।

তবে প্রশান্তর বোন চন্দ্রা দাসের বক্তব্য, ‘‘দাদা কাদের সঙ্গে মিশত জানি না। পুলিশের দিকে যারা বোমা-গুলি ছুড়েছে, তারা ভাল লোক নয়। কিন্তু দাদাকে আহত করে পুলিশ তো পরেও সত্যিটা জানতে পারত! মেরে ফেলতে হল!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

titagarh police gun bomb barasat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE