E-Paper

বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপকে পরিবেশে ফেরাতে উদ্যোগ

ইতিমধ্যে দশটি পূর্ণবয়স্ক কচ্ছপের পিঠে রেডিও ট্রান্সমিটার বসিয়ে সেগুলিকে সুন্দরবনের নদীতে ছাড়া হয়েছিল।

প্রসেনজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৯
নিশ্চিন্তে বংশবিস্তার করছে এরা।

নিশ্চিন্তে বংশবিস্তার করছে এরা। নিজস্ব চিত্র ।

দীর্ঘ দিন ধরেই বাটাগুড় বাস্কা বা ‘পোড়া কাঠা’ নামে এক বিশেষ ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপের সংরক্ষণ শুরু করেছিল সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। এক সময়ে সুন্দরবন থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল এরা। নদী, খাঁড়ির কোথাও হদিশ মিলছিল না। সে সময়ে ওই প্রজাতির মাত্র কয়েকটি ডিম থেকে তাদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। তাতে সাফল্যও মিলেছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে চারশো কচ্ছপ রয়েছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের হাতে। তাদের সংখ্যা আরও বাড়াতে সুন্দরবনের একাধিক বিট অফিস ও রেঞ্জ অফিসের পুকুরে বাস্কা কচ্ছপের চাষ শুরু হয়েছে।

বন দফতর সূত্রের খবর, এক সময়ে সুন্দরবন থেকে শুরু করে মায়ানমার, তাইল্যান্ড হয়ে মালয়েশিয়া উপকূল পর্যন্ত এই বিশেষ ধরনের কচ্ছপের বসতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে এরা বিলুপ্ত হয়ে যেতে বসেছে। ১৯৯৫-৯৬ সাল নাগাদ বন দফতরের তরফ থেকে সমুদ্রের তীর থেকে অলিভ রিডলে বা সামুদ্রিক কাঠা প্রজাতির কচ্ছপের ডিম সংগ্রহে করে তা ফোটানোর কাজ শুরু হয়। সেই নবজাতক কচ্ছপগুলির মধ্যে ১২টি বাটাগুড় বাস্কা প্রজাতির কচ্ছপেরও সন্ধান মেলে। তখন থেকেই তাদের সংরক্ষণ শুরু করে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প। সজনেখালিতে আলাদা একটি পুকুর তৈরি করে সেখানে বেশ কিছু বছর ধরে এই কচ্ছপ সংরক্ষণ ও তার প্রজনন করছে ব্যাঘ্র প্রকল্প। বর্তমানে ৪৩৩টি বাটাগুড় বাসকা প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে ব্যাঘ্র প্রকল্পের কাছে। সজনেখালির পাশাপাশি দোবাঁকি, ঝিলা, নেতিধপানি, ঝিঙেখালি, চামটা ও হরিখালিতেও এদের সংরক্ষণ ও প্রজননের ব্যবস্থা করেছে বন দফতর।

ইতিমধ্যে দশটি পূর্ণবয়স্ক কচ্ছপের পিঠে রেডিও ট্রান্সমিটার বসিয়ে সেগুলিকে সুন্দরবনের নদীতে ছাড়া হয়েছিল। সুন্দরবনের প্রকৃতিতে তারা নিজেদের সঠিক ভাবে মানিয়ে নিতে পারছে কি না, সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছিল। বন দফতর সূত্রের খবর, ওই কচ্ছপগুলি সুন্দরবনের প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সক্ষম। তাঁরা আশাবাদী, এই বিশেষ প্রজাতির কচ্ছপকে সংরক্ষণ করে ফের তাদের প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যেই কাজ চালাচ্ছে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প।

ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডেপুটি ফিল্ড ডিরেক্টর জোন্স জাস্টিন বলেন, ‘‘বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া একটা প্রজাতিকে সংরক্ষণের পাশাপাশি তাঁদের বংশবৃদ্ধি করতে পেরেছি আমরা। ওদের সংখ্যা আরও বাড়লে তাদের সুন্দরবনের পরিবেশে ফিরিয়ে দেব।”

এ বিষয়ে সচেতনতা প্রচারেও উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। এক দিকে যেমন এই কচ্ছপের জীবনচক্র মডেলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তেমনই সজনেখালিতে বিশাল অ্যাকোরিয়ামে এই কচ্ছপ রাখা হয়েছে পর্যটকদের দেখার জন্য। বিলুপ্তির পথ থেকে কী ভাবে এই কচ্ছপদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে, সে সম্পর্কিত নানা তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে সেখানে।

সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর রাজেন্দ্র জাখের বলেন, “এটা সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের বড় সাফল্য। মানুষ সচেতন হলে এই ধরনের অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীকে ফের পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sundarbans

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy