বিষাক্ত: এ ভাবেই ভাটি থেকে বিষবাষ্প মিশছে হাওয়ায়। নিজস্ব চিত্র
চামড়ার ছাঁট লোহার গরম কড়াইতে জ্বাল দিয়ে বেআইনি ভাবে তৈরি হচ্ছে রাসায়নিক সার, মাছের খাদ্য। এরই জেরে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
বিষয়টি নিয়ে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের। তাঁদের অভিযোগ, স্থানীয় কিছু নেতা ও পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের মদতে চলছে বেআইনি কারবার। বিভিন্ন সময়ে গ্রামবাসীরা প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দরবার করেছেন। শেষমেশ অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। মঙ্গলবার দুপুরে বাসন্তী হাইওয়ের পাশে নারায়ণপুর পঞ্চায়েতের বৈরামপুর এলাকায় অভিযান চালায় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও ভাঙড় থানার পুলিশ।
এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, লাইন দিয়ে ১৮টি চুল্লির উপরে বসানো বড় বড় লোহার কড়াই। নীচে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। লোহার গরম কড়াইয়ে চামড়ার ছাঁট জ্বাল দেওয়া হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় আকাশ ঢেকে গিয়েছে। কটূ গন্ধে দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়।
নলমুড়ি ব্লক হাসপাতালের ওই এলাকায় কর্মরত এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘‘চামড়ার ছাঁট জ্বাল দেওয়ার ফলে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বৈরামপুর, বাগমারি, মৌলি মুকুন্দপুর-সহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, হাঁপানিতে ভুগছেন। এই দূষণের জেরে ক্যানসারও বাড়তে পারে।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা বলেন, ‘‘চর্মনগরীর ট্যানারির বর্জ্য বা চামড়ার ছাঁট গরম কড়াইতে জ্বাল দেওয়ার ফলে ক্রোমিয়াম (হেভি মেটাল) নামে এক ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক নির্গত হচ্ছে। যে কারণে মানুষের ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট-সহ নানা ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। শুধু তাই নয়, ওই রাসায়নিকের বিষাক্ত জলে এলাকার চাষবাসের ক্ষতি হয়।’’
এক ভাটি মালিক জাকির হোসেন লস্কর বলেন, ‘‘আমরা জানি, এর থেকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা নিরুপায়। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসা করে আসছি। তখন জানতাম না ক্ষতির কথা। আমরাও চাই এ সব বন্ধ করে দিতে। তবে প্রশাসন আমাদের আরও কিছু সময় দিক। তা হলে সমস্ত বর্জ্য আমরা জ্বাল দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেলব।’’
এ দিন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুই কর্তা এবং ভাঙড় থানার ওসি চন্দ্রশেখর ঘোষাল-সহ পুলিশ এলাকার যেতেই শ্রমিকেরা পালিয়ে যান। পরে তাঁদের ডেকে চামড়ার ভাটি বন্ধ করার কথা বললে তাঁরা কিছুটা সময় চাইতে থাকেন। বলেন, চামড়ার ছাঁট বা বর্জ্য কোথাও তুলে ফেলার জায়গা নেই। মাস দু’য়েক সময় পেলে তাঁরা এই সব বর্জ্য জ্বাল দিয়ে সার তৈরি করে অন্যত্র সরবরাহ করতে পারবেন। পরে অবশ্য পুলিশ ও পর্ষদের কর্তারা দু’টি চুল্লির আগুন জল ঢেলে নিভিয়ে দিয়ে চলে আসেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা অহেদ আলি শেখ বলেন, ‘‘সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে। দলেরই একটা অংশের মদতে এ সব চলছে। অবিলম্বে বেআইনি কারবার বন্ধ হওয়া দরকার।’’ এ বিষয়ে ভাঙড় ১ বিডিও সৌগত পাত্র জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরে বেশ কিছু এলাকায় চামড়ার ছাঁট জ্বাল দেওয়ার ভাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওই এলাকায় কিছু ভাটি চালানো হচ্ছে বলে জেনেছি। অবিলম্বে তা বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতর ও পুলিশকে বলেছি।’’
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘আমরা যখন যেমন অভিযোগ পাচ্ছি, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতরকেও এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy