Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঘুড়ির ডাকের ধার কমেছে বিশ্বকর্মা পুজোর আকাশে

আকাশ জুড়ে চলছে ঘুড়ির টানটান লড়াই। কিছু সময় পরেই ‘ভোকাট্টা’। হাতে কঞ্চির লাঠি, গাছের ডাল নিয়ে কাটা ঘুড়িটির দিকে তাকিয়ে দে দৌড়। ঘুড়িটি মাটিতে নামবার আগেই ‘লুঠ’ হয়ে যায় নিপুণ দক্ষতায়।

ঘুড়ির কেনাবেচা চলছে বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ঘুড়ির কেনাবেচা চলছে বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র ও বিতান ভট্টাচার্য
বনগাঁ ও ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩০
Share: Save:

আকাশ জুড়ে চলছে ঘুড়ির টানটান লড়াই। কিছু সময় পরেই ‘ভোকাট্টা’। হাতে কঞ্চির লাঠি, গাছের ডাল নিয়ে কাটা ঘুড়িটির দিকে তাকিয়ে দে দৌড়। ঘুড়িটি মাটিতে নামবার আগেই ‘লুঠ’ হয়ে যায় নিপুণ দক্ষতায়।

বছর দশেক আগেও বিশ্বকর্মা পুজোর দিনে এটিই ছিল গ্রাম বাংলার পরিচিত ছবি। কিন্তু সময়ের সঙ্গে কোথায় হারিয়ে গিয়েছে ঘুড়ি ধরতে যাওয়া সেই সব ছেলেগুলো। পেটকাটি, চাঁদিয়ালদের কদর কমেছে। ঘুড়িতে লেগেছে চোখ ধাঁধানো এলইডি আলো। বদলে গিয়েছে মাঞ্জার উপকরণ, লাটাইয়ের নকশা।

অতীতে বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কয়েক আগে থেকেই ঘুড়ি ওড়ানোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত। বাঁশের ছোট ছোট কাঠি লাগিয়ে বানানো হতো ঘুড়ি। তুলোর সুতো কিনে সাবু ও কাঁচের গুড়ো মিশিয়ে তৈরি হতো মাঞ্জা। তারপর বিভিন্ন বাড়ির ছাদ, মাঠ, জলাজমিতে দাঁড়িয়ে দল বেঁধে চলত ঘুড়ির লড়াই। আকাশজোড়া সেই লড়াই দেখতে ভিড় জমে যেত। এ বারের বিশ্বকর্মা পুজোতেও দুই ২৪ পরগনার আকাশে ঘুড়ি উড়তে দেখা গিয়েছে। তবে ঘুড়ির লড়াই দেখতে ভিড় চোখে পড়েনি। দেখা মেলেনি কাটা ঘুড়ির শিকারিদের।

বনগাঁর চাঁপাবেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা পেশায় গৃহশিক্ষক অশোক চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘ছোটবেলায় আমরা নতুনগ্রামের মাঠে ঘুড়ি ওড়াতে যেতাম। কেটে যাওয়া ঘুড়ি ধরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে বকুনিও খেয়েছি। কিন্তু এখন দিলকাল বদলেছে। বিশ্বকর্মা পুজোর সারা দিনে সেভাবে ঘুড়ি উড়তে দেখিনি।’’ বাগদার বাসিন্দা বিমল মণ্ডল বলেন, ‘‘ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ করার জন্য বাবা লাটাই ভেঙে দিতেন। সুতো ছিঁড়ে দিতেন। তারপরেও আমাদের ঘুড়ি ওড়ানো বন্ধ হয়নি। কোনও ঘুড়ি কেটে দেওয়ার মধ্যে কী যে আনন্দ, সেটা নতুন প্রজন্ম হয় তো জানতেও পারবে না।’

এখন বাড়িতে ঘুড়ি কিংবা মাঞ্জা তৈরির চল নেই বললেই চলে। এখন মূলত দোকান থেকে ঘুড়ি এবং মাঞ্জা কেনা হয়। ঘুড়ি বিক্রেতাদের থেকে জানা গিয়েছে, বছর কয়েক ধরে মাঞ্জার উপকরণে তুলোর সুতোর বদলে নাইলন আর সিন্থেটিক সুতোর ব্যবহার হয়। কারণ ঘুড়ির কাটাকাটিতে এই সুতোর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু এই সুতোয় ঘুড়ি ওড়াতে গেলে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। ঘুড়িপ্রেমীরা এমন সুতো ব্যবহারে তেমন মজাও পান না। কিন্তু বাজারে এখন এই সুকোরই দাপট।

তার মধ্যে ভিন্ন চিত্র অবশ্য আছে। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এলাকার ঘুড়ি বিক্রেতা মানিক সাউ বলেন, ‘‘নাইলন বা সিন্থেটিক সুতোয় ধাক্কা লেগে চলন্ত মোটরবাইক বা সাইকেল আরোহীদের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তাই আমরা তুলোর তৈরি সুতো বিক্রির চেষ্টা করি।’’ বদল এসেছে লাটাইয়ে। কাঠের লাটাইয়ের বদলে এলইডি আলো লাগানো ফাইবারের লাটাইয়ের ব্যবহার বেড়েছে। এ বার ঘুড়িতেও দেখা গিয়েছে এলইডি আলোর চমকদারি। আকাশে ঘুড়ি উড়েছে বটে। কিন্তু তার ডাকে চটক থাকলেও সেই আন্তরিকতা কোথায়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

biswakarma puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE