Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

‘বাড়িতে না ঢুকে বিমানবন্দর থেকেই সোজা যাই বেলেঘাটা আইডিতে’

স্কটল্যান্ড থেকে কলকাতা ফেরার পর কী অভিজ্ঞতা হল? লিখছেন করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা হাবড়ার তরুণী।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

করোনার সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা হাবড়ার তরুণী
শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৬:১৪
Share: Save:

মুম্বই থেকে উড়ান ধরার সময়েই বুঝতে পারছিলাম, শরীরটা গোলমাল করছে।

বিষয়টাকে সে দিন গুরুত্ব দিয়েছিলাম বলেই করোনা-সংক্রমণের শিকার হয়েও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠলাম।

হাবড়ার বাসিন্দা হলেও আমি পড়াশোনা করি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ব জুড়ে করোনার আতঙ্ক ছড়য়ে পড়তে থাকার সময়ে বাড়িতে কথা বলে ঠিক করে ফেলি, দ্রুত দেশে ফিরতে হবে। এডিনবরা থেকে লন্ডনে এসে বিমান ধরে মুম্বই পৌঁছয়ই। সেখান থেকে কলকাতা বিমানবন্দর।

মুম্বইয়ে পৌঁছনোর পর থেকে শরীরটা খারাপ লাগছিল। কলকাতায় এসে বাবা আর আমার বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই, বাড়িতে না ঢুকে বিমানবন্দর থেকেই সোজা যাব বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা পরামর্শ দেন, ৪-৫ দিন আইসোলেশনে থাকতে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, হাসপাতালেই থাকব। আমি চাইনি, আমার জন্য আমার পরিবার বা এলাকার লোকেদের কোনও সমস্যা তৈরি হোক। আমাকে ভর্তি করিয়ে বাবা হাবড়ায় ফিরে আসেন। আমাদের পুরনো বাগানবাড়িতে বাবা একাই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

২০ মার্চ রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে জানা যায়, করোনাই হয়েছে আমার। সত্যি কথা বলতে, প্রথমে বেশ ঘাবড়েই গিয়েছিলাম। ডাক্তাররা অবশ্য আশ্বস্ত করেন।

পর দিন সকালে ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যায়। আমার পরিবার ও বন্ধুর পরিবারকে যথেষ্ট হেনস্থার মুখে পড়তে হয়। কিন্তু আমরা শুরু থেকেই স্রেফ সন্দেহ হওয়াতেই যথেষ্ট সতর্কতা নিয়েছিলাম।

এ বার আমার চিকিৎসার পালা। ডাক্তারবাবুরা বার বার অভয়বাণী শুনিয়ে যাচ্ছিলেন। ফলে একটা সময়ের পর থেকে আমারও মনে হয়নি, সত্যি কোনও ভয়ঙ্কর কিছু হয়েছে। চিকিৎসকদের এ জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। ওঁরা চিকিৎসার পাশাপাশি আমার মনোবল ধরে রাখতে খুব সাহায্য করেছেন। ১৩ দিন তাঁরা যে ভাবে আমার পাশে থেকেছেন, তা সত্যি ভোলার নয়।

কী করলাম এ ক’দিন একা একা?

নেটফ্লিক্সে প্রচুর সিনেমা দেখেছিল। ফোনে বকবক করেছি। আমার আত্মীয়-বন্ধুরা কখনও একা বলে মনেই হতে দেননি আমাকে। আর হ্যাঁ, স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রতিদিন ফোন করে আমার খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।আমি বিশ্বাস করি, এই যুদ্ধে আমি হারিয়েছি করোনাকে। তাই সকলকে বলতে চাই, অযথা আতঙ্কিত হবেন না। যদি রোগ হয়, তবে ডাক্তারদের নির্দেশ মতো চলুন। রোগ যাতে না ছড়ায়, সে জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন। স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করুন। সরকার ঘোষিত লকডাউন মেনে চলাটাও খুব জরুরি। আর পাঁচটা রোগের মতোই এই রোগ। যার সমাধান অবশ্যই আছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE